Thank you for trying Sticky AMP!!

১৭ কেন্দ্রে পুনরায় ভোটের দাবি করে ইসিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীর আবেদন

জামাল হোসেন মিয়া

ফরিদপুর-২ (নগরকান্দা ও সালথা) আসনে নৌকা প্রতীকে জয়ী সংসদ সদস্য শাহদাব আকবর এবং তাঁর অনুসারীদের বিরুদ্ধে ভোটে অনিয়ম, কারচুপি, ব্যালট ছিনতাই, জাল ভোট প্রদান, প্রকাশ্যে সিল মারা, পোলিং এজেন্টদের স্বাক্ষরবিহীন ফলাফলের শিট তৈরি করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ এনেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ জামাল হোসেন মিয়া। এ জন্য ১৭ কেন্দ্রে পুনরায় নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়েছেন তিনি।

গতকাল বুধবার ঢাকার শেরেবাংলা নগরে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ভবনে গিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে লিখিত আকারে এ বিষয়ে আবেদন করেছেন জামাল।
এর আগে একই অভিযোগ দেন জেলার রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদারকে। রিটার্নিং কর্মকর্তা বিষয়টি ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রামানন্দ পালকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলেছেন।

Also Read: ভোট কারচুপির অভিযোগ তুলে নতুন নির্বাচনের দাবি স্বতন্ত্র প্রার্থীর

ফরিদপুর-২ আসনে মোট প্রার্থী ছিলেন তিনজন। ৭ জানুয়ারি ভোট শেষে ঘোষিত ফল অনুযায়ী আওয়ামী লীগ প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য শাহদাব আকবর নৌকা প্রতীকে ৮৭ হাজার ১৯৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিতটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী নগরকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জামাল হোসেন ঈগল প্রতীকে পেয়েছেন ৮৫ হাজার ২৩২ ভোট। বিজয়ী প্রার্থী জামাল হোসেনের চেয়ে ১ হাজার ৯৬২ ভোট বেশি পেয়েছেন।

প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগে জামাল হোসেন ১৭টি ভোটকেন্দ্রের উল্লেখ করেন। এর মধ্যে তিনটি কেন্দ্রে ঈগল প্রতীকের এজেন্টদের বের করে দিয়ে প্রিসাইডিং কর্মকর্তার সহযোগিতায় নৌকা প্রতীকের সমর্থকেরা প্রকাশ্যে নৌকা প্রতীকে সিল মারেন এবং মৃত, প্রবাসী ভোটাররা অনুপস্থিত থাকলেও তাঁদের ভোট নৌকা প্রতীকে নিয়ে নেয়। কাইচাইল মডেল উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে প্রকাশ্যে নৌকা প্রতীকের সন্ত্রাসীরা পোলিং কর্মকর্তাকে মারধর করে ভোটার লিস্ট ছিনতাই করে নিয়ে যায়। এর ফলে দুই ঘণ্টা ভোট বন্ধ থাকে এবং ব্যালট পেপার ছিনতাই করে নৌকা প্রতীকে সিল মেরে ব্যালট বাক্সে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। ঈগল প্রতীকের পোলিং এজেন্টদের মেরে মাথা ফাটিয়ে দিয়ে কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়। এ বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করা সত্ত্বেও ভোট বন্ধ করা হয়নি বলে লিখিত অভিযোগে বলা হয়।

আরও ১০টি কেন্দ্রের নাম উল্লেখ করে জামাল হোসেন অভিযোগে জানান, এসব কেন্দ্র থেকে তাঁর পোলিং এজেন্টদের জোরপূর্বক বের করে দিয়ে প্রকাশ্যে নৌকা প্রতীকে সিল মারা হয়। এ সময় দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেট এবং প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের অভিযোগ দিলেও কেউ কোনো পদক্ষেপ নেননি বলে অভিযোগ ঈগল প্রতীকের প্রার্থীর। আরও চারটি কেন্দ্র উল্লেখ করে জামাল হোসেন বলেন, এসব কেন্দ্রে পোলিং এজেন্টদের স্বাক্ষর ছাড়া নিজেদের মতো করে রেজাল্ট শিট তৈরি করেন নৌকার প্রার্থীর লোকজন। তিনি বলেন, ‘সালথা উপজেলার সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কন্ট্রোল রুমে না গিয়ে তাঁর কার্যালয়ে বসে নেটওয়ার্ক নেই অজুহাত দেখিয়ে কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফল জনসমক্ষে ঘোষণা না করে প্রায় দুই ঘণ্টা আমাকে বসিয়ে রেখে ইচ্ছামতো নৌকা প্রতীকের পক্ষে রেজাল্ট শিট তৈরি করে আমাকে রেজাল্টের কপি ধরিয়ে দেয়, যা সম্পূর্ণ আইনবহির্ভূত।’

অভিযোগগুলো বিবেচনায় নিয়ে ১৭টি কেন্দ্রের ভোট বাতিল করে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে জোর দাবি জানান জামাল হোসেন। এ প্রার্থীর অভিযোগের বিষয়ে সালথার সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আনিসুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিটি কেন্দ্র থেকে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ফল ঘোষণা করেছেন। সেগুলো কন্ট্রোল রুমে এলে তা একীভূত করে ফলাফল দিতে একটু সময় লেগেছে। যখন কন্ট্রোল রুম থেকে ফল ঘোষণা করা হয়, তখন জামাল হোসেন মিয়ার প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট দেলোয়ার হোসেন উপস্থিত ছিলেন। ফল ঘোষণার সময় কন্ট্রোল রুমে অনেকেই ছিলেন। তা ছাড়া সিসি ক্যামেরাও ছিল। অভিযোগের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে দেখবে।

এদিকে গত মঙ্গলবার জামাল হোসেনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা কামরুল আহসান তালুকদার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রামানন্দ পালকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলেছেন। গতকাল বুধবার রিটার্নিং কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত একটি আদেশ থেকে এ তথ্য জানা গেছে। রামানন্দ পাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘সংসদীয় ২১২ ফরিদপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র ঈগল প্রতীকের প্রার্থী মো. জামাল হোসেন মিয়ার দাখিল করা অভিযোগের বিষয়ে তদন্তপূর্বক মতামতসহ প্রতিবেদন দেওয়ার চিঠি আমি পেয়েছি। তদন্ত করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।’