Thank you for trying Sticky AMP!!

ঈদের আনন্দ পুড়ে গেছে অ্যাম্বুলেন্সের আগুনে, নিশ্চুপ আলমগীর শুধু কাঁদছেন

ঈদের নামাজের পর স্ত্রী ও তিন সন্তানের কবর জিয়ারত করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন আলমগীর খান। সম্প্রতি এক দুর্ঘটনায় তাঁদের হারান তিনি। বৃহস্পতিবার সকালে বোয়ালমারীর মাইট কুমড়া গ্রামে

প্রতিবছর কোরবানির (ঈদুল আজহা) ঈদে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বাড়িতে আসতেন আলমগীর খান (৪২)। গ্রামের বাড়িতে ভাইবোনসহ স্বজনদের নিয়ে একসঙ্গে ঈদ উদ্‌যাপন করতেন। কখনো এর ব্যত্যয় ঘটেনি। এবারও আলমগীর ঈদে বাড়িতে এসেছেন। তবে আসতে পারেননি তাঁর স্ত্রী-সন্তানেরা। সম্প্রতি অ্যাম্বুলেন্স দুর্ঘটনায় আলমগীরের তিন সন্তান ও স্ত্রী মারা গেছেন। আলমগীরের ঈদের আনন্দ পুড়ে গেছে অ্যাম্বুলেন্সের আগুনে।

ঈদ উপলক্ষে স্ত্রী কমলা বেগম, বড় ছেলে আরিফ (১২), ছোট ছেলে হাসিব (১০) ও একমাত্র মেয়ে হাফসাকে (১) গত শনিবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন আলমগীর। একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁরা বাড়িতে ফিরছিলেন। সঙ্গে ছিলেন আলমগীরের অসুস্থ শাশুড়ি তাসলিমা বেগম (৫০), শ্যালিকা বিউটি বেগম (২৫) ও তাঁর ছেলে মেহেদী (১০)। ভাঙ্গার মালিগ্রাম উড়াল সড়কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে অ্যাম্বুলেন্সে আগুন লেগে যায়। এতে দগ্ধ হয়ে সবাই মারা যান।

আলমগীরের বাড়ি ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার শেখর ইউনিয়নের মাইট কুমড়া গ্রামে। তিনি ঢাকায় ব্যবসা করেন। পরিবার-পরিজন নিয়ে থাকতেন কেরানীগঞ্জের দক্ষিণ মুসলিমবাগ মহল্লার একটি ভাড়া বাসায়। মর্মান্তিক ওই দুর্ঘটনার ছয় দিন পর আজ পবিত্র ঈদুল আজহা উদ্‌যাপিত হচ্ছে। কিন্তু ঈদ নেই আলমগীর ও তাঁর স্বজনদের পরিবারে। সব আনন্দ যেন পুড়ে গেছে ভাঙ্গার মালিগ্রাম উড়াল সড়কে।

Also Read: চাকা ফেটে উড়ালসড়কের রেলিংয়ে আছড়ে পড়ে অ্যাম্বুলেন্স, ধরে যায় আগুন

আলমগীরের চাচাতো ভাই সিদ্দিক খান বলেন, দুর্ঘটনার পরের দিনগুলো তাঁদের কীভাবে কেটেছে, তাঁর বলার ভাষা নেই। আজ সকালে আলমগীরকে নিয়ে ঈদের নামাজ পড়েন তিনি। নামাজে যাওয়ার আগে আলমগীরকে জোর করে একটু সেমাই খাওয়ান। নামাজ শেষে কবর জিয়ারত করে বাড়িতে ফেরার পর ঘরের মধ্যে শুয়ে আলমগীর কাঁদছেন। তাঁর মা ঘরের কোণে নিশ্চুপ বসে আছেন। কখনো কখনো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছেন।

পাশাপাশি চারটি কবরে শুয়ে আছে আলমগীরের স্ত্রী ও তিন সন্তান। বৃহস্পতিবার সকালে বোয়ালমারীর মাইট কুমড়া গ্রামে

দুর্ঘটনার আগেই গত শুক্রবার আলমগীররা কোরবানির পশু কেনেন। ধর্মীয় রীতি মেনে আজ কোরবানিও দিয়েছেন। তবুও আনন্দ নেই আলমগীরের মনে। অথচ গত ঈদে আলমগীর নিজে কোরবানির পশু জবাইসহ সব কাজ করতেন। গত শনিবার থেকে আলমগীর ও তাঁর স্বজনদের ঈদের আনন্দ উবে যায়। এখন নামাজ ও কবর জিয়ারতের মধ্য দিয়ে সময় কাটছে তাঁর। আলমগীর বলেন, ‘আরে আমার বাছারা। আরে আমার সোনারা। আমার ছেলেমেয়ে স্ত্রী সবাই পুইড়া মইরা গেল। না জানি কত কষ্ট পাইছে ওরা ওই সময়। ওরে আল্লাহ রে।’ একপর্যায়ে ডুকরে কেঁদে ওঠেন তিনি।

Also Read: অতিরিক্ত গতি ও রেলিংয়ের ধাক্কায় অ্যাম্বুলেন্সের নিয়ন্ত্রণ হারান চালক

১৭ বছর আগে আলমগীর পাশের বোয়ালমারী উপজেলার গুনবাহা ইউনিয়নের ফেলাননগর গ্রামের আজিজার-নাসরিন দম্পতির বড় মেয়ে কমলা বেগমকে বিয়ে করেন। তাঁর বড় ছেলে আরিফ সপ্তম ও ছোট ছেলে হাসিব পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ত।

ভাঙ্গায় আগুনে পুড়ে যাওয়া অ্যাম্বুলেন্স থেকে সাতজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। গত শনিবার দুপুরে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়েতে

আলমগীরের মা সালেহা বেগম বলেন, ‘সারা বছর ঈদের দিনটির দিকে তাকায় থাকতাম। আমাকে সবচেয়ে বেশি আদর করত বড় নাতি আরিফ। বাড়িতে এসেই আমার গলা জড়াইয়া বলত, “দাদু আমি আসছি। তুমি আমার আদর করো।” যত দিন বাড়িতে থাকতো আমার পাছ ছাড়ত না। আমার যে কী সর্বনাশ হইয়া গেল। আমার জীবনের সব আনন্দ পুইড়া শেষ হইয়া গেল।’

Also Read: এক্সপ্রেসওয়েতে আগুনে পুড়ে নিহত সাতজনের পরিচয় মিলেছে, চারজন একই পরিবারের

গত শনিবার রাত নয়টার দিকে কমলা বেগম ও তাঁর তিন সন্তানের লাশ বাড়িতে আনা হয়। রাত ১০টার দিকে বাড়ি থেকে আনুমানিক ৩০০ মিটার দূরে পারিবারিক কবরস্থানে পাশাপাশি চারটি কবরে তাঁদের দাফন করা হয়।