Thank you for trying Sticky AMP!!

কুড়িগ্রামের নদ-নদীর পানি কমলেও নদীতীরবর্তী চরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত আছে। গত রোববার দুপুরে উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের দক্ষিণ বালাডোবার চরে

কুড়িগ্রামে ধরলা-তিস্তার পানি কমলেও কমেনি ব্রহ্মপুত্রে, জনদুর্ভোগ

কুড়িগ্রামে ধরলা, তিস্তা ও দুধকুমার নদ–নদীর পানি কমে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি আগের অবস্থায়ই আছে। অনেক দিন ধরে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকায় ব্রহ্মপুত্র নদ অববাহিকার কুড়িগ্রাম সদর, উলিপুর, চিলমারী, রৌমারী ও রাজীবপুর উপজেলার চরাঞ্চলে জনদুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। এসব উপজেলার পানিবন্দী শতাধিক চরের মানুষের মজুত খাদ্য ও জ্বালানি শেষ হয়ে গেছে। গবাদিপশুর খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্য অনুযায়ী, আজ মঙ্গলবার সকাল নয়টায় দুধকুমার নদের পানি বিপৎসীমার ৫২ সেন্টিমিটার, ধরলা নদীর পানি কুড়িগ্রাম সদর পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫৮ সেন্টিমিটার এবং তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে ব্রহ্মপুত্র নদের পানির হ্রাস-বৃদ্ধি দুই দিন ধরে নুনখাওয়া পয়েন্ট ও চিলমারী পয়েন্টে স্থির আছে।

Also Read: কুড়িগ্রামে বন্যায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী

ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নদের পানি না কমায় ব্রহ্মপুত্র নদবেষ্টিত শতাধিক চরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। ঈদুল আজহার পর থেকে উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের খেয়ার আলগার চর, পোড়ার চর, শীপের পাছি চর, গোয়ালপুরীর চরের নিম্নাঞ্চল, উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের মশালের চর, দক্ষিণ বালাডোবার চর, বতুয়াতলীর চর, সাহের আলগা ইউনিয়নের আইরমারী, মেকুরের আলগা, ২৭ দাগের চর, কাজিয়ার চর, রৌমারী উপজেলার সুখের চর, ঘুঘুমারীর চর, চিলমারী উপজেলার রমনা ইউনিয়নের আমতলী, মানুষমারা, রাজীবপুর উপজেলার মোহনগঞ্জ ইউনিয়নের একাধিক চরসহ শতাধিক চরের মানুষ এখনো পানিবন্দী। এসব চরাঞ্চলের মানুষ দীর্ঘদিন পানিবন্দী থাকায় খাদ্য ও জ্বালানিসংকট দেখা দিয়েছে। চরাঞ্চলের নিম্নভূমি প্লাবিত হওয়ায় পশুখাদ্যেরও সংকট দেখা দিয়েছে।

বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের বতুয়াতলী গ্রামের বাসিন্দা আবদুস সালাম বলেন, ঈদুল আজহার পর থেকে এই চরে পানি। চরাঞ্চল ডুবে থাকায় গবাদিপশুর খাদ্য নিয়ে বিপাকে পড়তে হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এবার ম্যালা দিন থাকি বাড়িত পানি। দিনমজুরি করে খাই। বানের (বন্যা) সময় গ্রামে দিনমজুরি চলে না। বউ–ছাওয়াক পানিত থুইয়ে ঢাকা যাবার ইচ্ছা করে না। হাতের টাকাপয়সা সউগ শেষ। সরকার থাকি চাল পাইছি। ১০ কেজি চাল দিয়ে কয় দিন যায়?’

Also Read: ‘সারা দিন নৌকায় থাকি’

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, ১৩ জুলাই থেকে চলমান বন্যায় জেলার ৭৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ৪৫টি ইউনিয়নের ১৮৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ৯ উপজেলার ২০ হাজার পরিবারের ৬১ হাজার ৫৪ জন পানিবন্দী অবস্থায় আছেন। বন্যাকবলিত মানুষের জন্য ৩৬১টি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছিল। ২১টি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে ৩০০ জন আশ্রয় নিয়েছিলেন। বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হওয়ায় অনেক পরিবার ইতিমধ্যে আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে বাড়িতে চলে গেছে।

সাহের আলগা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোজাফফর হোসেন বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বাড়ায় তাঁর ইউনিয়নের আটটি ওয়ার্ডের প্রায় সাড়ে চার হাজারের বেশি পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়ে। তবে বর্তমানে অনেক চরাঞ্চলের পানি নেমে গেছে। কিছু কিছু চরের নিম্নাঞ্চলের বসতবাড়িতে এখনো পানি আছে। তিনি বলেন, ‘বন্যাকবলিতদের সহায়তার জন্য তিন মেট্রিক টন চাল পেয়েছিলাম। সেগুলো বন্যার্ত মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া ইউএনও একদিন আমার ইউনিয়নে ১০০ প্যাকেট ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছেন।’