Thank you for trying Sticky AMP!!

তুমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখার রোহিঙ্গারা নিবন্ধিত কি না, যাচাইয়ের পর ব্যবস্থা

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেরার তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে অস্থায়ী বসতি স্থাপন করেছেন শূন্যরেখার রোহিঙ্গারা। বৃহস্পতিবার দুপুরে

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু গ্রামে অবস্থান নেওয়া শূন্যরেখার রোহিঙ্গারা শরণার্থী হিসেবে নিবন্ধিত কি না, তা যাচাই-বাছাইয়ের পর তাঁদের সরানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। গতকাল বুধবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত রোহিঙ্গা ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।

বর্তমানে তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ ও আশপাশের কয়েকটি এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে ঝুপড়িঘর তুলে বসতি স্থাপন করছে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা।

১৮ জানুয়ারি তুমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখা কোনারপাড়া আশ্রয়শিবিরে মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী ‘আরাকান স্যালভেশন আর্মি’র (আরসা) সঙ্গে মিয়ানমারের আরেকটি সশস্ত্র গোষ্ঠী ‘আরাকান রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন’-এর (আরএসও) মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। গুলিতে একজন রোহিঙ্গা নিহত ও দুই শিশু আহত হয়।

এ ঘটনার পর শূন্যরেখার আশ্রয়শিবিরে ৬৩০টির বেশি ঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ওই শিবিরে থাকা ৪ হাজার ৩০০ রোহিঙ্গা গৃহহীন হয়ে তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে আশ্রয় নেয়। ইতিমধ্যে বেশ কিছু রোহিঙ্গা তুমব্রু থেকে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের দিকে পাড়ি দিয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বাসিন্দাদের ধারণা, বর্তমানে তুমব্রু এলাকায় দুই হাজারের মতো রোহিঙ্গা আছে।

Also Read: ঘর পুড়িয়ে দেওয়ার পর আশ্রয়হীন রোহিঙ্গারা

ঢাকায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ওই রোহিঙ্গারা উখিয়া ও টেকনাফের আশ্রয়শিবিরের মতো নিবন্ধিত কি না, সেটা আগে শনাক্ত করতে হবে। অনেকে বলছেন, শূন্যরেখার রোহিঙ্গাদের অনেকে শরণার্থী হিসেবে নিবন্ধিত। কতজনের আছে, কতজনের নেই, সেটা যাচাই-বাছাই করে ঊর্ধ্বতন মহলকে জানাতে হবে। তারপর ব্যবস্থা। এখন দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজটি শেষ করা হবে। তত দিন শূন্যরেখার রোহিঙ্গারা তুমব্রু এলাকায় থাকবে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, বেশির ভাগ রোহিঙ্গা তুমব্রু থেকে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক (টমটম), সিএনজিচালিত অটোরিকশায় চড়ে উখিয়ার আশ্রয়শিবিরের দিকে ছুটছে। কেউ কেউ কাঁটাতারের বেড়া ডিঙিয়ে শিবিরে ঢুকে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে অবস্থান নিচ্ছে। কেউ কেউ কক্সবাজারের পাহাড়তলী, ফাতেরঘোনা, লারপাড়াসহ বিভিন্ন পাহাড়ের বস্তিতে উঠছে। কারণ তমব্রু সীমান্তে নতুন করে আশ্রয়শিবির গড়তে রাজি না প্রশাসন।

Also Read: আরসা ঠেকাতে এককাট্টা ১১ সশস্ত্র রোহিঙ্গা গোষ্ঠী

উখিয়ায় আশ্রয়শিবিরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়ক ও পুলিশের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক সৈয়দ হারুন অর রশীদ বলেন, তুমব্রু ছেড়ে রোহিঙ্গারা উখিয়ার আশ্রয়শিবিরে ঢোকার চেষ্টা করছে। কিন্তু তাদের শিবিরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। আশ্রয়শিবিরের ভেতরে ও বাইরে একাধিক জায়গায় তল্লাশিচৌকি বসানো হয়েছে।

বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। এর মধ্যে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর কয়েক মাসে দেশটির সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসে ৮ লাখ রোহিঙ্গা। ওই সময় স্থলপথে ৬ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে শূন্যরেখায় আশ্রয়শিবির গড়ে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলেন, ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত শূন্যরেখার আশ্রয়শিবিরে ছিল ৬২১টি পরিবারের ৪ হাজার ৩০০ জন রোহিঙ্গা।

শূন্যরেখার রোহিঙ্গাদের নিয়ে আতঙ্কে স্থানীয়রা

তুমব্রু সীমান্তে থাকা রোহিঙ্গাদের নিয়ে আতঙ্কে আছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। আট দিন ধরে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা তমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ ও আশপাশ এলাকায় ঝুপড়িঘর বানিয়ে বসতি শুরু করে। সেখানে স্যানিটারি ল্যাট্রিন ও খাবার পানির ব্যবস্থা নেই। যত্রতত্র মল–মূত্র ত্যাগ করা দুর্গন্ধে এলাকায় থাকতে পারছেন না স্থানীয় ব্যক্তিরা। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশও বিঘ্নিত হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও কমে যাচ্ছে।

স্থানীয় কয়েকজন জনপ্রতিনিধি বলেন, শূন্যরেখার রোহিঙ্গারা এদিক-ওদিক ছড়িয়ে পড়ছে। ওই রোহিঙ্গাদের অধিকাংশই মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মি (আরসা), আরাকান রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সদস্য ও ইয়াবা ব্যবসায়ী। অনেকের বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র ও মাদকের মামলা আছে। তাঁরা গ্রামেগঞ্জে ছড়িয়ে পড়লে সংকট তৈরি হবে। এতে স্থানীয় ব্যক্তিদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে।

Also Read: সীমান্তে গোলাগুলি বন্ধ, কনকনে শীতে গৃহহীন রোহিঙ্গাদের অমানবিক জীবন

ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান খাইরুল বশর ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার রাজা মিয়া বলেন, এ ঘটনার আট দিন অতিবাহিত হয়ে গেছে। এভাবে কয়েক হাজার রোহিঙ্গাকে তুমব্রু সীমান্তে ফেলে রাখা নিরাপত্তার জন্য হুমকি। অপরিকল্পিতভাবে বসতবাড়ি গড়ে ওঠায় তুমব্রু স্কুল ও বাজার এলাকায় মল–মূত্রে ভরে গেছে। দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ায় ঘরবাড়িতে থাকা যাচ্ছে না।

তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুর রহিম বলেন, দুর্গন্ধে পাঠদান করানো যাচ্ছে না। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে যাচ্ছে। ৫৬০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে গতকাল উপস্থিত ছিল ৪৯০ জন। আজ বৃহস্পতিবার অর্ধেকে এসে ঠেকেছে।

Also Read: তমব্রু সীমান্তে রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে জ্বলছে আগুন, চলছে গোলাগুলি

আরআরআরসি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, তুমব্রু বিদ্যালয় মাঠে অবস্থান নেওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে অনেকে নাকি আগে থেকে উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন শিবিরের শরণার্থী হিসেবে নিবন্ধিত। অনিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা কত, তা যাচাই-বাছাইয়ের পর ঢাকায় জানানো হবে। তারপর তুমব্রুর রোহিঙ্গাদের কোথায় নেওয়া হবে, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানা যাবে। তত দিন তারা তুমব্রুতে থাকবে।