Thank you for trying Sticky AMP!!

বাঁধের পাশে ‘সবুজ বেষ্টনী’ যেন এক খণ্ড সুন্দরবন

খুলনার কয়রা উপজেলার কপোতাক্ষ নদের পাড়ে গড়ে তোলা সবুজ বেষ্টনী। প্রথম দেখায় যে কারও মনে হবে সুন্দরবন। বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার গোবরা গ্রামে

খুলনার সুন্দরবন-সংলগ্ন কয়রা উপজেলা সদর থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার পশ্চিমে গোবরা গ্রামে কপোতাক্ষ নদের বেড়িবাঁধ ঘেঁষে গড়ে উঠেছে সবুজ ঘন বন। গোলপাতা থেকে শুরু করে ম্যানগ্রোভ বনের প্রায় সব প্রজাতির গাছ রয়েছে বনে। প্রথম দেখাতেই মনে হবে এটি সুন্দরবনেরই অংশ। কপোতাক্ষপাড়ে প্রায় দুই কিলোমিটার অংশে বনটি গড়ে তুলেছে বন বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসন। বিকেল হলেই পাখিদের কিচিরমিচির আর দর্শনার্থীর ভিড়ে মুখরিত হয় সেখানকার পরিবেশ।

শুধু গোবরা গ্রামে নয়, এভাবে কয়রা উপজেলার বিভিন্ন নদীর চর ও বাঁধের পাশে বন বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে তৈরি করা হয়েছে ‘সামাজিক বনায়ন বা সবুজ বেষ্টনী’। এর মাধ্যমে একদিকে নদীভাঙন রোধ ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে, অন্যদিকে দারিদ্র্য নিরসনে কর্মসংস্থান তৈরিতেও ভূমিকা রাখছে। সামাজিক বনায়নের রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারকির জন্য স্থানীয় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সমন্বয়ে কমিটি করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তারা ওই বনের উপকারভোগী হিসেবে বিবেচিত।

Also Read: সুন্দরবনে ইকোট্যুরিজম কেন্দ্রের নামে ‘গাছ হত্যা’

মূলত উপকূলীয় এলাকায় সবুজ বেষ্টনীর মাধ্যমে নদীভাঙন রোধ, সরকারি জমি অবৈধ দখলদারমুক্ত রাখা, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, পশুপাখির আবাসস্থল গড়া, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাসহ স্থানীয়ভাবে জ্বালানির চাহিদা মেটানো ও ঘরবাড়ি নির্মাণের জন্য এই বনায়ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বন কর্মকর্তারা।

কপোতাক্ষপাড়ের চর বনায়ন সমিতির সদস্য হাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, নদে চর জাগলে তা দখলে নেন স্থানীয় কিছু মানুষ। এ জন্য প্রশাসনের সহযোগিতায় নদীর ধারে সুন্দরবনের আদলে ওই বন তৈরি করা হয়েছে। বনে অন্য গাছের সঙ্গে সুন্দরী গাছ লাগানো হলেও অতিরিক্ত লবণাক্ততার কারণে তা টিকছে না। সমিতির প্রতিটি সদস্য ও স্থানীয় ব্যক্তিদের কাছে বনের সম্পর্ক নিবিড়।

বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালে ‘চর বনায়ন প্রকল্প’ শুরু হয়। এর মধ্যে কয়রা ও পাইকগাছা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নদীর চর ও বেড়িবাঁধের পাশে ৩৪টি স্থানে এমন বনায়ন করা হয়েছে প্রায় ৮২ হেক্টর জমিতে। এসব বনায়ন রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারকির জন্য এলাকাভিত্তিক ৩৪টি কমিটিতে প্রায় দেড় হাজার মানুষকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। প্রতিটি কমিটিতে ২৫ থেকে ৪০ জন সদস্য আছেন। ওই কমিটি বনগুলো দেখাশোনা করে। বনের আয়ের ৫৫ শতাংশ কমিটির সদস্যরা পান। এ ছাড়া বন বিভাগ ১০ শতাংশ, নতুন বনায়নের তহবিল হিসেবে ১০ শতাংশ, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) ৫ শতাংশ ও জমির মালিক ২০ শতাংশ টাকা পাবেন।

Also Read: মৌয়ালদের সঙ্গে সুন্দরবনের মধুর ভান্ডারে

গোলপাতা থেকে শুরু করে ম্যানগ্রোভ বনের প্রায় সব প্রজাতির গাছ রয়েছে এ সামাজিক বনে। বৃহস্পতিবার কয়রা উপজেলার গোবরা গ্রামে

মূলত উপকূলীয় এলাকায় সবুজ বেষ্টনীর মাধ্যমে নদীভাঙন রোধ, সরকারি জমি অবৈধ দখলদারমুক্ত রাখা, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, পশুপাখির আবাসস্থল গড়া, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাসহ স্থানীয়ভাবে জ্বালানির চাহিদা মেটানো ও ঘরবাড়ি নির্মাণের জন্য এই বনায়ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বন কর্মকর্তারা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলা সদর থেকে গোবরা গুচ্ছগ্রামের সামনে দিয়ে চলে গেছে পিচঢালা পথ। পথের এক পাশে জনবসতি, অন্য পাশে কপোতাক্ষ নদ। সড়কটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। বাঁধের পাশে লম্বা সবুজ বন। একইভাবে উপজেলার উত্তর বেদকাশী, মহেশ্বরীপুর, মহারাজপুর ও দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে শাকবাড়িয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পাশে গড়ে উঠেছে সবুজ বন। বনে আছে গোলপাতা, কেওড়া, কাঁকড়া, গেওয়াগাছ। বনে গরু-ছাগলের বিচরণ না করা ও পাখি শিকার বন্ধের নির্দেশনা দিয়ে টাঙানো হয়েছে সাইনবোর্ড। বন থেকে পাখির কিচিরমিচির শব্দ শোনা যাচ্ছে। প্রথম দেখাতেই মনে হতে পারে এটা সুন্দরবনের একটি অংশ।

Also Read: সুন্দরবন রক্ষায় কী করছে বন বিভাগ

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, এলাকাটি সুন্দরবন-সংলগ্ন হওয়ায় নদীর জোয়ারে ভেসে আসা ফল চরে আটকে নতুন গাছ জন্ম নেয়। ভাঙনের কারণে তা বিলীনও হয়। গত কয়েক বছর বন রক্ষণাবেক্ষণে সামাজিক বন বিভাগের কর্মকর্তারা উদ্যোগ নিয়েছেন। তাঁরা এলাকায় এলাকায় উপকারভোগী নির্বাচন করে বন পাহারার ব্যবস্থা করেছেন। তবে সেভাবে কেউ উপকার পেয়েছেন কি না, তাঁরা জানেন না।

উত্তর বেদকাশী ইউপির সদস্য গণেশ মণ্ডল বলেন, ‘প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা বন নিজেদের স্বার্থে আমরা রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকি। এখানে কোনো উপকারভোগী নেই। তবে সামাজিক বন বিভাগ থেকে মাঝেমধ্যে লোকজন এসে বনের তদারকি করে চলে যেতে দেখি।’

Also Read: ‘যখন আমি থাকব না, কী করবি রে বোকা!’

বাঁধের পাশে লম্বা সবুজ বন। বনে আছে গোলপাতা, কেওড়া, কাঁকড়া, গেওয়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ

৫ নম্বর কয়রা চর বনায়ন সমিতির সভাপতি লুৎফর রহমান বলেন, নদী ভরাট হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা দখল করে মাছের ঘের তৈরি করেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। তাই উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় নদীর ধারে চর বনায়ন গড়ে তোলা হয়েছে। সমিতির সদস্যরা এটি দেখাশোনা করেন। তিনি অভিযোগ করেন, বনায়নের জায়গায় চিংড়ির ঘের করতে প্রভাবশালী একটি মহলের চক্রান্ত অব্যাহত আছে।

উপজেলা বন কর্মকর্তা প্রেমানন্দ রায় প্রথম আলোকে বলেন, সুন্দরবন-সংলগ্ন কয়রা উপজেলার নদীগুলো ধীরে ধীরে চর পড়ে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। চরের সরকারি জমিগুলো দখল করে স্থানীয় প্রভাবশালীরা মাছ চাষ করেন। এ অবস্থায় জমি দখলমুক্ত রাখতে উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় বনায়ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল। এখন কিছু কিছু এলাকায় বনের মতো দেখে মনে হয়, এটা সুন্দরবনের অংশ। তা ছাড়া নদীর চরে বনায়নের ফলে সেখানে পশুপাখির বিচরণ বেড়েছে। সামাজিক সবুজ বেষ্টনী তৈরি হয়েছে। এতে জমিগুলো অবৈধ দখলদারমুক্ত রাখা সম্ভব হয়েছে।

Also Read: অসহায় সুন্দরবন কেড়ে নিচ্ছে নারীর জরায়ুও