‘হানিফ বাংলাদেশির’ সমাবেশে বাধা দিয়ে ‘প্রতীকী লাশ’ নিয়ে গেল পুলিশ
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সীমান্ত হত্যা বন্ধ ও মিয়ানমারের আগ্রাসন বন্ধের দাবিতে রাজশাহীতে ‘হানিফ বাংলাদেশিকে’ প্রতীকী লাশের মিছিল ও সমাবেশ করতে দেয়নি পুলিশ। আজ রোববার বেলা দেড়টায় রাজশাহী প্রেসক্লাবের সামনে তাঁর এ কর্মসূচি থেকে পুলিশ ‘প্রতীকী লাশগুলো’ নিয়ে যায়।
মো. হানিফ (৪৩) নামের এই ব্যক্তি ঢাকার তোপখানা রোড এলাকার বাসিন্দা। সীমান্ত হত্যা বন্ধের দাবিতে সম্প্রতি কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে কর্মসূচি শুরু করেন তিনি। ইতিমধ্যে তিনি দেশের ২২টি জেলায় প্রতীকী লাশ নিয়ে সমাবেশ করেছেন বলে জানান। সবশেষ চাঁপাইনবাবগঞ্জে কর্মসূচি পালনের পর রাজশাহী আসেন। এর আগে ২০১৯ সালে ঘুষ-দুর্নীতি ও নৈতিক অবক্ষয়ের প্রতিবাদে হানিফ দেশের ৬৪ জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি প্রদান এবং জনসাধারণের মধ্যে লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি পালন করেন। তখন থেকে তিনি ‘হানিফ বাংলাদেশি’ নামে পরিচিত।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, আজ দুপুরে কয়েক তরুণকে সঙ্গে নিয়ে রাজশাহী প্রেসক্লাবের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ করতে আসেন হানিফ। এ সময় তাঁদের কাছে কফিনে জড়ানো চারটি প্রতীকী লাশ ও হাতে প্ল্যাকার্ড-ফেস্টুন ছিল। একটি ফেস্টুনের নিচে ‘বাংলাদেশ গণশক্তি পার্টি’ লেখা ছিল। আগে থেকেই সেখানে রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) অতিরিক্ত উপকমিশনার হাফিজ হোসেনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ সদস্য অবস্থান করছিলেন।
সমাবেশ শুরুর পরই পুলিশ হানিফকে বাধা দেয়। পুলিশের পক্ষ থেকে তাঁকে বলা হয়, এ কর্মসূচির জন্য আরএমপির কাছ থেকে আগে অনুমতি গ্রহণের প্রয়োজন ছিল। অনুমতি ছাড়া এ ধরনের সমাবেশ বেআইনি। এ সময় হানিফ বলেন, তিনি রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কর্মসূচি পালন করছেন না। সীমান্ত হত্যা ও মিয়ানমারের আগ্রাসনের প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাঁর বাগ্বিতণ্ডা হয়। হানিফ দাবি করেন, তিনি সারা দেশে কর্মসূচি পালন করবেন—বিষয়টি পুলিশ সদর দপ্তরকে অবহিত করেছেন। তিনি এ–সংক্রান্ত একটি কাগজও দেখান। এই চিঠি হানিফ পুলিশ সদর দপ্তরে দিয়েছেন।
তবে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, অবহিত করে শুধু চিঠি দিলেই হবে না; পুলিশের পক্ষ থেকে তাঁকে অনুমতিপত্রও নিতে হবে। অনুমতি থাকলে পুলিশই তাঁকে কর্মসূচি পালনে সহযোগিতা করত। একপর্যায়ে পুলিশ কয়েকটি প্রতীকী লাশ কেড়ে নেয় এবং তাঁকে স্থান ত্যাগ করতে বাধ্য করে। পরে হানিফ ও তাঁর সঙ্গে আসা কয়েকজন চলে যান।
এ বিষয়ে আরএমপির মুখপাত্র জামিরুল ইসলাম বলেন, রাজশাহী মহানগর এলাকায় কোনো কর্মসূচি পালন করতে হলে আগে থেকেই আরএমপিকে চিঠি দিয়ে জানাতে হবে এবং অনুমতি নিতে হবে। হানিফ তাঁর কর্মসূচির জন্য এসবের কিছুই করেননি। আরএমপির অনুমতি ছাড়া যেকোনো সমাবেশ অবৈধ বলে তাঁর কর্মসূচি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে কর্মসূচি পালন করতে না পারায় হানিফ রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে অভিযোগ দিতে যান। কিন্তু পুলিশ অভিযোগ গ্রহণের স্বাক্ষরিত অনুলিপি (রিসিভ কপি) দিতে রাজি না হওয়ায় তিনি অভিযোগ দেননি। পরে তিনি সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করার জন্য নগরের ভুবনমোহন পার্কে আসেন। সেখান থেকে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে বোয়ালিয়া থানার পুলিশ গাড়িতে করে তাঁকে থানায় নিয়ে যায়।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ূন কবীর প্রথম আলোকে বলেন, তিনি বিষয়টি জানে না। তিনি থানার বাইরে আছেন।
পরে থানায় যোগাযোগ করা হলে দায়িত্বরত কর্মকর্তা (ডিউটি অফিসার) বলেন, সন্দেহজনক কারণে হানিফকে ধরে নিয়ে আসা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরও পড়ুন
-
কিরগিজস্তানে বিদেশিদের ওপর হামলা, আতঙ্কে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা
-
ময়নাতদন্তে হত্যাকাণ্ড, পিবিআইয়ের প্রতিবেদনে আত্মহত্যা
-
মেয়র থাকার সময় ডেঙ্গু আক্রান্ত নগরবাসীকে রেখে বিদেশে যাইনি: সাঈদ খোকন
-
মাহমুদউল্লাহ ‘স্পিরিট অব দ্য টিম’, সাকিব ‘কিংবদন্তি’, রিশাদ ‘বিরল’
-
অন্যের বাসায় খেলার সাথি হয়ে আসা রেজোয়ানা এসএসসিতে সফল