Thank you for trying Sticky AMP!!

বান্দরবানের লামায় সরইয়ের রেংয়েনপাড়ার হামলা ও অগ্নিসংযোগের পর ম্রোদের একটি ঘর

লামায় ম্র্রোপাড়ায় হামলার ৩ দিনেও মামলা হয়নি, আতঙ্কে পাড়াবাসী

বান্দরবানের লামা উপজেলার সরইয়ের রেংয়েনপাড়ায় দরিদ্র ম্রোদের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় তিন দিনেও মামলা হয়নি। পাড়ার আশপাশে হামলাকারীদের নজরদারি থাকায় তাঁরা থানায় গিয়ে মামলা করতে ভয় পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন পাড়ার কার্বারি (পাড়াপ্রধান) রেংয়েন ম্রো।

আজ বুধবার বিকেলে ঘটনাস্থল রেংয়েনপাড়া পরিদর্শন করেছেন লামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোস্তফা জাবেদ কায়সার, সহকারী পুলিশ সুপার (লামা সার্কেল) নুরুল আনোয়ার ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম চৌধুরী।

পরিদর্শন শেষে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঘটনার সত্যতা মিলেছে। দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে দ্রুত মামলা হবে। পাড়াবাসী অভিযোগ না করায় মামলা নিতে দেরি হচ্ছে।

Also Read: হামলায় নিঃস্ব ম্রো পরিবারগুলো শীতের রাত কাটিয়েছে আগুন জ্বালিয়ে

১ জানুয়ারি গভীর রাতে রেংয়েনপাড়ায় হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। পাড়াবাসীর অভিযোগ, লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড তাঁদের উচ্ছেদ করে জমি দখলের জন্য ট্রাকভর্তি লোকজন নিয়ে এসে হামলা চালিয়েছে। যদিও লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের ব্যবস্থাপক রেংয়েনপাড়ার হামলার ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে দাবি করে আসছেন।

পাড়ার বাসিন্দারা জানান, হামলার পর থেকে তাঁরা আতঙ্কে আছেন। দিনে ও রাতে পালা করে পাড়া পাহারা দিচ্ছেন। ভয়ে বাইরে কোথাও কাজে যেতে পারছেন না। হামলাকারীরা কম্বল, কাপড় নিয়ে যাওয়ায় দুই দিন ধরে আগুনে পোহায়ে শীতের রাত কাটাচ্ছেন। তবে উপজেলা প্রশাসন থেকে আগুনে ভস্মীভূত ও ভাঙচুরে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে দুটি করে কম্বল দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত তিন পরিবারকে ছয় বান্ডিল করে ঢেউটিন, ১০ কেজি চাল এবং বাড়ি ভাঙচুর হওয়া পরিবারগুলোকে ৩০ কেজি চাল ও কম্বল দিয়েছে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন।

Also Read: অপরাধ করেও নিষ্কৃতি পাওয়ার ঘটনায় ম্রো গ্রামে আবার হামলা হয়েছে: সিএইচটি কমিশন  

লামায় সরইয়ের রেংয়েনপাড়ায় ভাংচুর করা বাঁশের একটি ঘর। গত সোমবার সকালে

পাড়াপ্রধান রেংয়েন ম্রো প্রথম আলোকে বলেন, হামলাকারীরা সব সময় তাঁদের ওপর নজরদারি করছে। রাবারবাগানের ভেতর দিয়ে তাঁদের চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে। পাড়ার কিছু দূরে রাস্তায় বাঁশ ফেলে ১৫ থেকে ২০ জনকে সব সময় দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। এ জন্য তাঁদের এখন অনেক দূর ঘুরে চলাচল করতে হচ্ছে। তাঁরা এখন খুবই আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। মামলা করতেও ভয় পাচ্ছেন।

Also Read: লামায় ম্রো পাড়ায় হামলার ঘটনায় চট্টগ্রামে মিছিল–সমাবেশ

লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রির বিরুদ্ধে গত বছরের ২৬ এপ্রিল রেংয়েনপাড়া, লাংকমপাড়া ও জয়চন্দ্রপাড়ার ৩৫০ একরের জুমচাষের বনাঞ্চল পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ আছে। সেই সময় দায়ের হওয়া মামলায় কোম্পানির দুই কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এরপর ৬ সেপ্টেম্বর রেংয়েনপাড়াবাসীর পানির উৎস কালাইয়ার ঝিরিতে কীটনাশক ছিটিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এসব ঘটনা তদন্তে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ১৮ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে তিনটি পাড়ার বাসিন্দাদের পুনর্বাসন ও অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেয়।

Also Read: লামায় ম্রোদের ওপর হামলা: দখলদারদের কেন থামানো যাচ্ছে না?

লামা থানার ওসি শহিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, রেংয়েনপাড়ায় হামলা, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের সত্যতা পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় দ্রুত মামলা হবে। তদন্তে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুরের ঘটনা কারা ঘটিয়েছে, সেটা খুঁজে বের করা হবে। তিনি বলেন, গত ২৬ এপ্রিল জুমচাষের বনাঞ্চল পুড়িয়ে দেওয়া ঘটনায় লামা রাবার কোম্পানির সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলার এখনো অভিযোগপত্র দেওয়া হয়নি। তবে মামলার তদন্তে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। তদন্তাধীন থাকায় বিস্তারিত বলা যাচ্ছে না।