Thank you for trying Sticky AMP!!

কুষ্টিয়া-২ আসনে জাসদের প্রার্থী হাসানুল হক ইনু ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা কামারুল আরেফিন

ইনু নৌকা পেলেও ‘ভাড়া খাটবে না’ আওয়ামী লীগ, অস্বস্তিতে জাসদ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) পক্ষে কাজ না করার বিষয়ে অবস্থান নিয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। তাঁরা বলছেন, গত ১৫ বছর ‘ভাড়া’ খেটেছেন। এখন আর নয়। তাই আসন্ন নির্বাচনে জাসদের প্রার্থী নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করলেও তাঁকে সহযোগিতা করা হবে না।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের এমন হুঁশিয়ারিতে অস্বস্তিতে আছেন জাসদের নেতা-কর্মীরা। তাঁরা মনে করছেন, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের এমন আচরণে তাঁদের স্থানীয়ভাবে রাজনীতি করা কঠিন হয়ে যেতে পারে। তাই তাঁরা দ্রুত এই পরিস্থিতির সমাধান চান।

দুটি উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনে জাসদের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হাসানুল হক ইনু। তিনি টানা তিনবারের সংসদ সদস্য। তবে জাসদের প্রতীক মশালে নয়, আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকা দিয়ে প্রতিবারই নির্বাচন করেছেন তিনি। জাসদের প্রার্থী হয়ে মনোনয়ন জমা দিলেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতার কারণে এবারও তিনি নৌকা প্রতীক পাবেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

Also Read: শরিকদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের ৭ আসনে সমঝোতা

টানা ১৫ বছর হাসানুল হক ইনু সংসদ সদস্য থাকায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে জাসদ নেতা-কর্মীদের বিরোধ দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি বিরোধ আরও প্রকট আকার ধারণ করে। এবার আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্য থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচন করতে তাঁরা দলের স্থানীয় নেতা কামারুল আরেফিনকে সমর্থন দেন। কামারুল মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। মিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ ছেড়ে তিনি প্রার্থী হয়েছেন।

মিরপুর উপজেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক আহম্মেদ আলী বলেন, ‘কামারুল স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার কারণে নেতা-কর্মীদের মধ্যে কিছুটা সংশয় কাজ করছে। বিষয়টির সমাধান না হলে কী হবে, সেটা বলা মুশকিল। আমরাও বিষয়টি নিয়ে ভাবছি।’

দলীয় নেতা-কর্মীরা বলছেন, কামারুল আরেফিন শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে থাকলে নির্বাচনের ফলাফল কী হবে, তা নিয়ে মানুষ আগেভাগেই নানা সমীকরণ টানছেন। বিশেষ করে ভেড়ামারা উপজেলায় জাসদ কিছুটা সক্রিয় থাকলেও মিরপুরে ঝিমিয়ে পড়েছে। বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্যের প্রতিবাদে বিক্ষিপ্ত কিছু সভা-সমাবেশ করলেও জাসদ বেকায়দায় পড়েছে ভোটের মাঠে। ভোটের মাঠে ভূমিকা রাখা ‘মূল খেলোয়াড়’ কামারুল নিজেই প্রার্থী হওয়ায় জাসদের প্রার্থী হাসানুল হক বেকায়দায় পড়ছেন।

Also Read: কেন জোটের প্রার্থী হওয়ার জন্য ফ্যা ফ্যা করে ঘুরে বেড়াচ্ছেন: ইনুকে আওয়ামী লীগ নেতা

হাসানুল হক নৌকা প্রতীক পেলেও তাঁর বক্তব্যে বলে আসছেন, প্রতিপক্ষ হিসেবে আওয়ামী লীগের কোনো পদধারী নেতাকে স্বতন্ত্র হিসেবে দেখতে চান না।
স্থানীয় দুই দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিগত তিনটি নির্বাচনে কামারুল নৌকাকে জেতাতে বড় ভূমিকা রাখেন। তাঁর সব কর্মী-সমর্থক ইনুর পক্ষে কাজ করেন। এবার তাঁর সমর্থকেরা বলছেন, তাঁরা আর জাসদের হয়ে ভাড়া খাটবেন না, নিজেদের প্রার্থীর জন্য কাজ করবেন।

কামারুল আরেফিনকে ‘নিজেদের প্রার্থী’ মন্তব্য করে মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হালিম বলেন, ‘তাঁর জন্য দলের নেতা-কর্মীরা এক হয়ে কাজ করবেন। আমরা কারও পক্ষে আর ভাড়া খাটতে রাজি নই। আমাদের সংগঠন বাঁচাতে হলে নিজেদের এমপি প্রয়োজন।’

জেলা জাসদের সভাপতি গোলাম মহসিন বলেন, ‘হাসানুল হক ইনু যদি ১৪ দলের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক পান, তাহলে নৌকার নেতা-কর্মীরা তাঁর পক্ষে কাজ করবেন। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী কামারুল সক্রিয় থাকায় নেতা-কর্মীদের মধ্যে অন্য রকম বার্তা যাচ্ছে।’

Also Read: ১০ বছরে হাসানুল হক ইনুর নগদ টাকা বেড়েছে প্রায় ৫২ গুণ

বিগত তিনটি নির্বাচনে হাসানুল হক ইনুর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের তাঁর পক্ষে মাঠে নামার নির্দেশনা দিলেও স্বতন্ত্র প্রার্থীকে বসিয়ে দেওয়ার বিষয়ে এবার কোনো নির্দেশনা নেই। আর সরকারের পক্ষ থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিষয়ে অনড় অবস্থান বজায় রাখার ইঙ্গিত দেওয়ার ফলে মাঠে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। বিশেষ করে নির্বাচনের মাঠ থেকে সরে দাঁড়ানো নিয়ে তাঁদের মধ্যে তেমন দুশ্চিন্তা আর কাজ করছে না। এতে অনেকটাই নির্ভার আছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী কামারুল আরেফিন। তিনি প্রতিদিনই সমাবেশ করে সরকারের উন্নয়নের কথা তুলে ধরছেন। এতে সব পর্যায়ের আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত থাকছেন। এ ছাড়া জাসদের সাবেক কয়েকজন চেয়ারম্যান এবং পদে নেই এমন নেতা-কর্মীদের অনেকেই কামারুলের পক্ষে অবস্থান নিতে শুরু করেছেন।

কামারুলকে সমর্থন জানিয়ে ভেড়ামারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীমুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘কর্মীদের চাহিদা, ইচ্ছা, দলের ইচ্ছা ও আমার ইচ্ছা থেকে উপলব্ধি করেছি প্রার্থী দিতে। ঐক্যবদ্ধ হয়ে ঐকমত্যে প্রার্থী দিয়েছি। আমাদের প্রার্থী আছে, ছিল ও থাকবে। নৌকা এখনো কেউ পায়নি। স্বতন্ত্রের ব্যাপারে নেত্রী এখনো কোনো কিছু বলেননি। আমরা নির্বাচনে আছি, নির্বাচন করব।’

কামারুল আরেফিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ফুরফুরে মেজাজে আছি। শুধু আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা নন, সাধারণ মানুষ আমাকে ভালোবাসেন, এটা আরেকবার প্রমাণ করেছেন দুই উপজেলার মানুষ। আমি তাঁদের ভালোবাসার প্রতিদান দিতে চাই। নির্বাচনে আমার ওপর কোনো চাপ নেই, বরং সবাই উৎসাহ দিচ্ছেন। উনি (হাসানুল হক ইনু) জাতীয় নেতা, নৌকা প্রতীক পেলে উনি নির্বাচন করবেন, আমিও জনতার নেতা হয়ে মাঠে থাকব।’