Thank you for trying Sticky AMP!!

পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারীকে হারিয়ে দিশাহারা স্বজনেরা

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত সফিকুলের তিন শিশুসন্তান। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারীকে হারিয়ে পরিবারটি দিশেহারা হয়ে পড়েছে। মঙ্গলবার সকালে করিমগঞ্জ উপজেলার পানাহার গ্রামে

ঢাকার নূরেরচালা এলাকায় ভাঙারি ব্যবসা করতেন মো. সফিকুল (৩৪)। বাবার মৃত্যুর পর পুরো পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব পড়ে সফিকুলের কাঁধে। তাঁর আয়েই চলত ছয়জনের সংসার। স্ত্রী-সন্তানদের দেখতে গত শুক্রবার ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে নিজ বাড়িতে এসেছিলেন সফিকুল।

ফেরার পথে ভৈরবের ট্রেন দুর্ঘটনায় গতকাল সোমবার প্রাণ হারিয়েছেন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারীকে হারিয়ে দিশাহারা তাঁর পুরো পরিবার। দুর্ঘটনার পর তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের কান্না থামছেই না।

সংকেত অমান্য, নিহত ১৮
‘মানুষের ওপর মানুষ চাপা পড়ে দম বন্ধ হয়ে আসছিল’
ভৈরবে ট্রেন দুর্ঘটনা নিয়ে যা বললেন স্টেশনের নিয়ন্ত্রণকক্ষের দায়িত্বে থাকা জহুরুন্নেছা

নিহত সফিকুল কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার জয়কা ইউনিয়নের পানাহার গ্রামের জালাল উদ্দিনের ছেলে। চার বছর আগে বাবা মারা গেছেন। চার ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সফিকুল সবার বড়। মা, স্ত্রী ও তিন শিশুসন্তান নিয়ে তাঁর ছয়জনের সংসার। হঠাৎ একটি দুর্ঘটনায় তাঁর পুরো পরিবারে যেন অন্ধকার নেমে এসেছে।

আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নিহত সফিকুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, স্বজনেরা আহাজারি করছেন। স্বামীর মৃত্যুর খবর পেয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন সফিকুলের স্ত্রী খাদিজা। তিন শিশুসন্তান তাওসিন (৬), আবির (৩) ও ১০ মাস বয়সী সাইদা স্বজনদের আহাজারি দেখে কান্নাকাটি করছেন। তারা এখনো বাবার মৃত্যুর বিষয়টি বুঝে উঠতে পারেনি। সফিকুলের মা হারেছা ছেলেকে হারিয়ে বাক্‌রুদ্ধ হয়ে পড়েছেন।

মো. সফিকুল (৩৪)

পানাহার গ্রামের এক মাথায় সফিকুলের বাড়ি। বাড়িতে দুটি ছোট টিনের ঘর। সফিকুলই ঘরগুলো তৈরি করেছিলেন। পরিবারের সবাই ঠাসাঠাসি করে দুটি ঘরে থাকেন। ৫ শতক জমির এই ভিটেবাড়ি ছাড়া সফিকুলদের আর কোনো জমি নেই। সফিকুলের অন্য ভাইয়েরা পরের জমিতে চাষাবাদ করে আয়রোজগার করেন।

নিহত সফিকুলের ছোট ভাই সাইফুল জানান, শুক্রবার রাতে ঢাকা থেকে বাড়িতে বেড়াতে আসেন ভাই। গতকাল সকালে ভাগনে রুবেলকে নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছিলেন। দুর্ঘটনায় রুবেলও আহত হয়েছে। তাঁর মাধ্যমে খবর পেয়ে ভৈরবে ছুটে যান। গিয়ে দেখেন, ভাই আর নেই। রাতে বাড়িতে আনার পর জানাজা শেষে দাফন করা হয়।

সাইফুল বলেন, ‘ভাই আমাদের সবাইকে খুবই ভালোবাসতেন। সব সময় খোঁজখবর নিতেন। ভাইয়ের তিনটি ছোট্ট অবুঝ সন্তানের দিকে তাকাতে পারছি না। ভাইয়ের মৃত্যুর খবর শোনার পর কাঁদতে কাঁদতে মা ও ভাবি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা রাতে শুনেছি সরকারের পক্ষ থেকে নিহতের পরিবারকে দাফন-কাফনের জন্য প্রাথমিকভাবে ২৫ হাজার টাকা দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমরা এ সহযোগিতা এখনো পাইনি।’

রেললাইনে লেগে আছে রক্ত, পড়ে আছে শরীরের বিভিন্ন অংশ, মানুষের ভিড়
ভৈরবের হাসপাতালে কেবলই স্বজন হারানোর গল্প
যাত্রীতে ঠাসা ছিল এগারসিন্দুর ট্রেনটি