যাত্রীতে ঠাসা ছিল এগারসিন্দুর ট্রেনটি

মালবাহী ট্রেনের ধাক্কায় উল্টে গেছে যাত্রীবাহী এগারসিন্ধুর ট্রেনের দুটি বগিছবি: প্রথম আলো

‘ভৈরব থেকে ট্রেন ছাড়ার পাঁচ মিনিট পর একটা শব্দ হলো। প্রথমে মনে হলো, একটা ট্রেন যাচ্ছে। ভাবতে না ভাবতেই একটা ঝড়ের মতো মনে হলো। আর কিছু বলতে পারব না। তারপর চিৎকার–চেঁচামেচি।’ জ্ঞান ফিরে পেয়ে সাদেক নিজেকে আবিষ্কার করলেন অনেকের ওপরে পড়ে আছেন। তখনো বগির ভেতরেই তিনি। জ্ঞান ফিরে পেয়ে কোনোরকমে জানালা দিয়ে নিচে নামলেন। তাঁর সঙ্গে তাঁর বন্ধু নাঈমও নেমে এলেন। দুজন বাইরে বেরিয়ে এসে দেখেন রক্ত আর মানুষের চিৎকার।

ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন মো. সাদেক। পাশে বন্ধু নাঈম
ছবি: প্রথম আলো

কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিছানায় শুয়ে এভাবেই ট্রেন দুর্ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছিলেন কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার বলই ইউনিয়নের গাবতলী গ্রামের মো. সাদেক (২২)। দুর্ঘটনায় তাঁর হাত ভেঙেছে, পায়ে আঘাত পেয়েছেন।
ঢাকার সরকারি তিতুমীর কলেজের গণিত বিভাগের তৃতীয় বর্ষে পড়েন সাদেক। ৩১ অক্টোবর তাঁর পরীক্ষা। সে জন্য ঢাকায় যাচ্ছিলেন। কিশোরগঞ্জ থেকে এগারসিন্দুর ট্রেনটিতে তিনি ও তাঁর বন্ধু মো. নাঈম (২২) উঠেছিলেন। তাঁরা বসেছিলেন ট্রেনের শেষের বগির আগেরটিতে। ট্রেনটি যাত্রীতে ঠাসা ছিল বলে জানালেন সাদেক। তাঁদের বগিতেই আসনবিহীন যাত্রী ছিলেন শতাধিক। তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না বগিতে।

আরও পড়ুন

আজ বেলা সোয়া তিনটার দিকে ভৈরব রেলস্টেশনের আউটার পয়েন্টে যাত্রীবাহী ট্রেনে মালবাহী ট্রেনের ধাক্কায় ১৭ জন নিহত ও অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। দুর্ঘটনার পর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-কিশোরগঞ্জ লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ আছে।
ট্রেন দুর্ঘটনায় ১৭ জন নিহতের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাদিকুর রহমান।

দুর্ঘটনার পর উদ্ধার তৎপরতা চালান ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা
ছবি: প্রথম আলো

এদিকে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ আজ সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, এ পর্যন্ত আহত ৭০ জনকে হাসপাতালে আনা হয়েছে। ২১ জনকে ঢাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে। আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার্থে পাশের কুলিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে আরও চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় ওষুধ আনা হয়েছে।

কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক আবুল কালাম আজাদ ও পুলিশ সুপার মো. রাসেল শেখ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মালবাহী ট্রেনটি ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের দিকে যাচ্ছিল আর যাত্রীবাহী এগারসিন্দুর ট্রেনটি যাচ্ছিল ভৈরব থেকে ঢাকার দিকে। ভৈরব রেলস্টেশনের আউটার পয়েন্টে ক্রসিংয়ে যাত্রীবাহী ট্রেনের শেষ দুই বগিতে ধাক্কা দেয় মালবাহী ট্রেনটি। এ সময় যাত্রীবাহী ট্রেনের দুটি বগি উল্টে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে হতাহত ব্যক্তিদের উদ্ধারকাজে এগিয়ে আসেন স্থানীয় লোকজন।