Thank you for trying Sticky AMP!!

আহত যুবলীগ নেতা মো. রেজাউল করিমকে বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। গতকাল শুক্রবার রাত পৌনে ১২টার দিকে

বাউফলে অন্তঃকোন্দলের জেরে যুবলীগ নেতাসহ ছয়জনকে কুপিয়ে জখম

পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে এক যুবলীগ নেতাসহ ছয়জনকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করছে প্রতিপক্ষ। গতকাল শুক্রবার রাত ১০টার দিকে উপজেলার বগা ইউনিয়নের রাজনগর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
আহত ছয়জন হলেন বগা ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি রাজনগর গ্রামের বাসিন্দা মো. রেজাউল করিম (৫০), মো. রাকিব (২২) ও মো. শফিকুল (২৫), কৌখালী গ্রামের মোহাম্মদ অলিউল্লাহ (২৮), সাবুপুরা গ্রামের মো. ফেরদৌস মুন্সি (১৯) ও বগা কলেজ এলাকার মো. বাদল (৪০)। তাঁদের মধ্যে গুরুতর আহত রেজাউল ও অলিউল্লাহকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রাতেই বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় যুবলীগের নেতা রেজাউল করিমকে ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতালে) পাঠানো হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বগা ইউনিয়ন যুবলীগের এক সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, গত বুধবার দুপুরে যুবলীগ নেতা রেজাউল ও বগা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. সোহেলের (৩৫) নেতৃত্বে ৪০-৫০ জন বগা ইউনিয়নের পশ্চিম সাবুপুরা গ্রামে তুলাতলা বাজার এলাকায় একটি বাড়িতে হামলা চালান। এই সময় তাঁরা ওই বাড়িতে থাকা যুবলীগের কর্মী মো. হাসান খান (৩২) ও ছাত্রলীগের কর্মী মো. মারুফ খানকে (২০) কুপিয়ে জখম করেন। এর জেরেই দ্বিতীয় দফায় এই হামলার ঘটনা ঘটল।

আহত ব্যক্তিদের স্বজন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার রাতে যুবলীগ নেতা রেজাউলসহ ১০-১২ জন নৌকার পক্ষে প্রচার চালিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। রেজাউলের বাড়ির উত্তর-পশ্চিম পাশে পৌঁছালে রাত ১০টার দিকে সন্ত্রাসীরা তাঁদের ওপর হামলা চালান। এ সময় তাঁদের রড দিয়ে পিটিয়ে ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করেন হামলাকারীরা। এতে রেজাউলের দুই পা ও বাঁ হাত ভেঙে গেছে।

বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা ভাস্কর পাল বলেন, আহত ব্যক্তিদের মধ্যে একজনের (রেজাউল) অবস্থা গুরুতর। তাঁর মাথায়, বাঁ হাতে ও দুই পায়ে গুরুতর আঘাত রয়েছে। অলিউল্লাহর মাথায় জখম হয়েছে। এ কারণে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁদের বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

Also Read: বাউফলে বাড়িতে ঢুকে ছাত্রলীগ-যুবলীগের দুজনকে কুপিয়ে জখম

আহত অলিউল্লাহ সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেছেন, মাহামুদ হাসান ও শাহাবুদ্দিনের নেতৃত্বে ২০-২৫ জনের একটি দল তাঁদের ওপর হামলা চালিয়েছে। মাহামুদ হাসান বগা ইউপির চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। শাহাবুদ্দিন উপজেলা যুবলীগের সহসভাপতি।

অভিযোগের বিষয়ে জানার জন্য বগা ইউপির চেয়ারম্যান মাহামুদ হাসান ও যুবলীগ নেতা শাহাবুদ্দিনের মুঠোফোনে কল করা হলে বন্ধ পাওয়া যায়। তবে মাহামুদ হাসানের বড় বোন জান্নাতুল রেশমা বলেন, তাঁর ভাই এলাকায় ছিলেন না। এই মারামারি সম্পর্কে তাঁর ভাই কিছুই জানেন না। হয়রানি করার জন্য মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে।

আওয়ামী লীগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পটুয়াখালী-২ (বাউফল) আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য ও বাউফল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ স ম ফিরোজের সঙ্গে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোতালেব হাওলাদারের বিরোধ চলছে। এই বিরোধকে কেন্দ্র করে আবদুল মোতালেব ও তাঁর ছেলে বগা ইউপির চেয়ারম্যান মাহামুদ হাসানকে দুই দফায় কুপিয়ে ও পিটিয়ে জখম করা হয়েছিল। এবার সংসদ নির্বাচনে আ স ম ফিরোজ দলীয় মনোনয়ন পাওয়ায় তাঁর কর্মী-সমর্থকেরা বগা এলাকায় প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালান। সেই প্রভাবেই পাল্টাপাল্টি হামলা ও মারামারির ঘটনা ঘটেছে। আহত রেজাউল, অলিউল্লাহ, ফেরদৌস, রাকিব, বাদল ও শফিকুল সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজের সমর্থক এবং হাসান ও মারুফ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেবের সমর্থক।

হামলায় আহত ব্যক্তিদের বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাত পৌনে ১২টার দিকে

এদিকে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দল এবং আধিপত্য নিয়ে নাজিরপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মুজাহিদুল ইসলাম ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আনছার উদ্দিনের ওপর হামলা হয়েছে। আর আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে একই ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের কর্মী মো. অলিউল ইসলাম (৪৫) ও ফিরোজ হাওলাদারকে (৩৮) মারধর করার ঘটনা ঘটেছে।

বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শোনিত কুমার গাইন প্রথম আলোকে বলেন, গত বুধবারের মারামারির ঘটনার জেরে শুক্রবার রাতে রাজনগর গ্রামে দ্বিতীয় দফায় হামলা ও মারামারির ঘটনা ঘটেছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এখন পর্যন্ত কেউ লিখিত অভিযোগ করেননি। নাজিরপুরে মারামারির ঘটনায়ও কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।