Thank you for trying Sticky AMP!!

গাজীপুরে অগ্নিকাণ্ডে নিহত মহিদুল ইসলাম ও নার্গিস খাতুন দম্পতিকে পাশাপাশি কবরে দাফন করা হয়। মঙ্গলবার বিকেলে শাহজাদপুর উপজেলার ভেড়াখোলা পূর্বপাড়া কবরস্থানে

মা–বাবাকে পাশাপাশি কবরে দাফন, জানে না ছেলে

অভাবের সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে সিরাজগঞ্জ থেকে গাজীপুরে গিয়েছিলেন মহিদুল ইসলাম (৩২) ও নার্গিস খাতুন (২৬) দম্পতি। নার্গিস কাজ নিয়েছিলেন পোশাক কারখানায় আর মহিদুল পাটকলে। একমাত্র সন্তান সাজিদের (৩) জন্মের পর গ্রামে দাদা–দাদির কাছে দিয়ে আসেন। আয়–রোজগার কম হওয়ায় সবকিছু গুছিয়ে ঈদের পর একেবারে গ্রামে ফিরতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তার আগেই সিলিন্ডার বিস্ফোরণের আগুনে দগ্ধ হয়ে দুজনই লাশ হয়ে ফিরেছেন বাড়িতে।

মহিদুল–নার্গিস দম্পতির বাড়ি সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার গালা ইউনিয়নের দুর্গম ভেড়াখোলা গ্রামে। গত বুধবার গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার তেলিরচালা এলাকায় গ্যাস সিলিন্ডারের ছিদ্র থেকে আগুনে তাঁরাসহ ৪৬ জন দগ্ধ হন। গত রোববার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁদের মৃত্যু হয়। গতকাল সোমবার ভেড়াখোলা পূর্বপাড়া কবরস্থানে পাশাপাশি কবরে তাঁদের দাফন করা হয়।

মঙ্গলবার বিকেলে ভেড়াখোলা গ্রামে মহিদুলদের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, স্বজনেরা আহাজারি করছেন। কাঁদতে কাঁদতে বাক্‌রুদ্ধ হয়ে গেছে মহিদুলের বাবা সাবেদ আলী ও মা সাহানা বেগমের। ভাই–ভাবির কথা বলতে গিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন ছোট বোন। মহিদুলের শিশুসন্তান সাজিদ এখনো বুঝে উঠতে পারেনি, মা–বাবা আর নেই। স্বজনদের আহাজারি ও আর্তনাদ দেখে নির্বাক তাকিয়ে দেখছে সে।

নিহত মহিদুলের ভাই শাহিনুর খান প্রথম আলোকে বলেন, দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে মহিদুল দ্বিতীয়। তিনি দিনমজুরের কাজ করেন। পরিবারে অভাবের কারণে সাজিদের জন্মের পর দাদা–দাদির কাছে রেখে ভাই–ভাবি দুজনে কাজের জন্য গাজীপুরের কালিয়াকৈরে যান। ভাবি পোশাক কারখানায় আর ভাই পাটকলে কাজ করতেন। দুটি ঈদ ছাড়াও ছুটির সময় বাড়িতে আসতেন। মাঝেমধ্যে মা–বাবা সাজিদকে নিয়ে ভাইয়ের বাসায় যেতেন। তিনি বলেন, ‘আমার ভাইয়ের সাথে মাঝেমধ্যেই মুঠোফোনে কথা হতো। সর্বশেষ মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর কথা হয়। ভাই দুঃখ করে বলছিলেন, “এত কাজ করি কিন্তু দিনে ৩০০ টাকার বেশি পাই না। এর চাইতে এলাকায় গিয়ে কিছু একটা করব।” আমি চলে আসতে বলেছি। ভাই বললেন, “এই তো ঈদের সময় একবারে আসব। ”এখন আমার ভাই আসল লাশ হয়ে।’

Also Read: গাজীপুরে আগুনে দগ্ধ ৩৬ জন, বেশির ভাগই উৎসুক জনতা

শাহিনুর খান আরও বলেন, গাজীপুরে যে বাসায় দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেই সফিকুল ইসলাম (৪৫) ও নাজমা খাতুন (৩৫) দম্পতি সম্পর্কে তাঁদের চাচাতো ভাই–ভাবি। বাড়িও একই গ্রামে। তাঁরা ঘটনার সময় বাইরে থাকায় তাদের কোনো ক্ষতি হয়নি। তাঁদের কালিয়াকৈরের বাড়িতে তাঁর (শাহিনুর) ভাইসহ এলাকার অনেকেই ভাড়া থাকতেন। ভাইয়ের এমন মৃত্যু তাঁরা কেউ মেনে নিতে পারছেন না।

সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ওই আগুনে দগ্ধ হয়ে গত রোববার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে জহুরুল ইসলাম (৩২), সোমবার ভোরে সোলাইমান হোসেন (৫০) ও গোলাম রাব্বি (১১) নামে আরও তিনজন চিকিত্সাধীন অবস্থায় মারা যান। তাঁদের বাড়িও শাহজাদপুর উপজেলার গালা ইউনিয়নে। তাঁদের পরিবারেও মাতম চলছে। জহুরুলের বাড়ি ওই ইউনিয়নের ভেড়াখোলা পশ্চিমপাড়া গ্রামে। স্ত্রী ও তিন মেয়েকে নিয়ে কালিয়াকৈরে ভাড়া থাকতেন জহুরুল। সেখানে তিনি মাছের ব্যবসা করতেন।

শিশু সাজিদ জানে না, তার মা–বাবা আর বেঁচে নেই। মঙ্গলবার বিকেলে শাহজাদপুর উপজেলার ভেড়াখোলা গ্রামে

Also Read: উৎকণ্ঠায় সময় পার করছেন দগ্ধদের স্বজনেরা

অন্যদিকে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া সোলাইমানের বাড়ি গালা ইউনিয়নের হাটবয়রা গ্রামে। তিনি কালিয়াকৈরে ভাঙারির ব্যবসা করতেন। এ ছাড়া গোলাম রাব্বির বাড়ি একই ইউনিয়নের তারটিয়া গ্রামে। আজ সকালে তারটিয়া গ্রামের কবরস্থানে রাব্বিকে দাফন করা হয়েছে।

তারটিয়া গ্রামে নিহত রাব্বির বাড়িতে গিয়ে তার বাবা শাহ আলমের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, পরিবার নিয়ে আট বছর ধরে তাঁরা গাজীপুরে থাকতেন। তিনি ফেরি করে আইসক্রিম বিক্রি করেন। পাঁচ বছর আগে রাব্বির মা অসুস্থ হয়ে মারা যায়। এরপর দুই ছেলেকে নিয়ে সেখানেই থাকতেন। বড় ছেলে একটি ভাঙারির দোকানে কাজ করে। ছোট ছেলে রাব্বি স্থানীয় একটি স্কুলে পড়ত। একদিন সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা এসে ছেলেকে পড়ালেখা করাবেন বলে নিয়ে যান। এরপর পরিবারের সঙ্গে নিজের ছেলের মতো করে রাখতেন তিনি। রাব্বি নাটোরের কাদিরাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ত। দুর্ঘটনার আগে কয়েক দিনের ছুটিতে তাঁর (বাবা) কাছে বেড়াতে এসেছিল। এরপর বুধবার সে দগ্ধ হয়।

Also Read: গাজীপুরে আগুনের ঘটনায় আরও চারজনের মৃত্যু

Also Read: কালিয়াকৈরে গ্যাস লিকেজ থেকে আগুনে দগ্ধ আরও তিনজনের মৃত্যু