উৎকণ্ঠায় সময় পার করছেন দগ্ধদের স্বজনেরা

শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটফাইল ছবি

‘মা শিল্পী আক্তার, দুই ভাই—৭ বছরের নীরব মোল্লা ও ৫ বছরের নিলয় মোল্লা এইচডিইউতে ভর্তি। তারা কথা বলতে পারছে। এমনিতে বড় কোনো সমস্যা হচ্ছে বলে মনে হয় না। কিন্তু আগুনে পোড়া রোগীর অবস্থা যেকোনো সময় খারাপ হতে পারে বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। সেই ভয় নিয়েই সময় পার করছি।’

দগ্ধ স্বজনদের নিয়ে উৎকণ্ঠিত রোকসানা আক্তার বলছিলেন কথাগুলো। আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের ষষ্ঠ তলার এইচডিইউর (হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিট) সামনে তাঁর সঙ্গে কথা হয়।

আরও পড়ুন

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে গ্যাস সিলিন্ডারের ছিদ্র থেকে বের হওয়া গ্যাসের আগুনে রোকসানার এক চাচা, এক মামা ও মামি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। আর আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি তাঁর মা ও দুই ভাই। তাঁদের কেউই শঙ্কামুক্ত নন বলে চিকিৎসক জানিয়েছেন।

কালিয়াকৈরের তেলিরচালা এলাকায় গত বুধবার গ্যাসের আগুনে ৩৬ জন দগ্ধ হয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে ১১ জন মারা গেছেন। ১৭ জন এখনো হাসপাতালে ভর্তি। তাঁদের চারজন আইসিইউতে আছেন।

রোকসানার বাবা উজ্জ্বল মোল্লা পেশায় রিকশাচালক। মা শিল্পী গৃহিণী। সিরাজগঞ্জে তাঁদের গ্রামের বাড়ি। দুই ভাই ও বোনকে নিয়ে রোকসানার বাবা-মা কালিয়াকৈরের একটি বাসায় ভাড়া থাকেন। আর রোকসানা ভাড়া থাকেন স্বামীর সঙ্গে একই এলাকার অন্য একটি বাসায়।

দুপুরে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের এইচডিইউ ও আইসিইউর সামনে ওই ঘটনায় দগ্ধ রোগীদের স্বজনদের রোকসানার মতোই উৎকণ্ঠা নিয়ে বসে থাকতে দেখা গেছে।

আরও পড়ুন

কালিয়াকৈরের তেলিরচালা এলাকায় গত বুধবার গ্যাসের আগুনে ৩৬ জন দগ্ধ হয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে ১১ জন মারা গেছেন। ১৭ জন এখনো হাসপাতালে ভর্তি। তাঁদের চারজন আইসিইউতে আছেন।

বার্ন ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক পার্থ শংকর পাল প্রথম আলোকে বলেন, যাঁরা হাসপাতালে ভর্তি আছেন, তাঁদের কাউকেই শঙ্কামুক্ত বলা যাচ্ছে না। অনেকেরই শ্বাসনালি পুড়ে গেছে। এতে বেশি রোগী মারা যাচ্ছেন।

এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছ, তেলিরচালা এলাকায় শফিকুল ইসলাম নামের একজন ব্যবসায়ী জমি ভাড়া নিয়ে কলোনি তৈরি করে ভাড়া দিয়েছেন। সেখানকার একটি ঘরের সিলিন্ডারের গ্যাস শেষ হয়ে গেলে পাশের দোকান থেকে একটি সিলিন্ডার কিনে আনেন তিনি। সেটির চাবি খুলে গ্যাস বের হয়ে পাশের চুলার আগুনের সংস্পর্শে এলে ওই দুর্ঘটনা ঘটে।

হাসপাতালই এখন ‘ঘরবাড়ি’

আইসিইউর সামনে গিয়ে দেখা যায়, ত্রিশোর্ধ্ব খুশি আক্তার অপলকদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। কাছে গিয়ে কথা বলতেই জানালেন, তাঁর ১৩ বছর বয়সী একমাত্র ছেলে নাঈম মিয়া আগুনে দগ্ধ হয়ে এখন আইসিইউতে ভর্তি। ছেলেটার শরীরের ৪০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। সকালেও ছেলের সঙ্গে কথা বলেছেন, মুখে খাবার তুলে দিয়েছেন। যাঁরা মারা যাচ্ছেন, তাঁরাও কথা বলতেন, খেতে পারতেন। কিন্তু হঠাৎ করে মারা যাচ্ছেন। তাই আতঙ্ক-ভয় কিছুতেই কাটছে না।

খুশি আক্তার বলেন, দুই সন্তানের মধ্যে নাঈম মিয়া স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। সুলতানা আক্তার নামে ছয় বছর বয়সী এক মেয়ে আছে তাঁর। তিনি ও স্বামী সুজন মিয়া পেশায় পোশাক কারখানার কর্মী। ঘটনার পর থেকে মেয়েকে নিয়ে তিনি হাসপাতালেই অবস্থান করছেন। এখন হাসপাতালই ঘরবাড়ি বানিয়েছেন। স্বামী সুজন মিয়া গাজীপুর থেকে আসা-যাওয়া করছেন। জীবিকার প্রয়োজনে সুজন মিয়াকে কারখানায় কাজ করতে যেতে হচ্ছে।

আরও পড়ুন