Thank you for trying Sticky AMP!!

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী নির্যাতন: শিক্ষাঙ্গনে ভয়ের সংস্কৃতির মধ্যে এই প্রতিবাদ সাহস জোগাবে

অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান

সারা দেশে শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রলীগের নিপীড়নের প্রতিবাদে গত বৃহস্পতিবার সকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে জোহা চত্বরে অনশনে বসেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের দখলদারি, আসন-বাণিজ্য, শিক্ষার্থীদের নিপীড়ন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবাদ করে আসছেন। শুধু কর্মসূচি পালনই নয়, খবর পেলে ছুটে যান নির্যাতিত শিক্ষার্থীর কাছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে ছাত্রলীগের হাতে ছাত্রী নির্যাতনের প্রসঙ্গে প্রথম আলো কথা বলেছে তাঁর সঙ্গে।  

প্রশ্ন

প্রথম আলো: কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েটি যে সাহস দেখিয়েছেন, সেটিকে আপনি কীভাবে দেখছেন?

ফরিদ উদ্দিন খান: মেয়েটি নিঃসন্দেহে অনেক সাহসী এবং প্রতিবাদী। তাঁকে সাধুবাদ জানাচ্ছি। ওই ঘটনার পর মাঝরাতে যখন ভিডিওটি দেখলাম, তখনই সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমারও প্রতিবাদ করা উচিত এবং আমি অনশন করেছি। তাঁর এই প্রতিবাদ শিক্ষাঙ্গনের অনাচার, নিপীড়নের মূর্ত প্রতীক। আমরা শিক্ষাঙ্গনে যখন একটি ভয়ের সংস্কৃতির মাঝে আছি, সে সময় এই প্রতিবাদ অনেকের সাহস জোগাবে।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: হাইকোর্ট যে নির্দেশনা দিয়েছেন, সেটা এই প্রতিবাদের ক্ষেত্রে কতটুকু ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে বলে মনে করছেন?

ফরিদ উদ্দিন খান: শিক্ষাঙ্গনে দীর্ঘদিন ধরে এই ধরনের ঘটনা ঘটে চলেছে। কিন্তু প্রশাসন, সরকার বিষয়টি দেখেও দেখে না। নানা সময়ে বিষয়টি নিয়ে আমরা প্রতিবাদ জানিয়ে আসছি, কিন্তু কে কার কথা শোনে? এবার বিষয়টি হাইকোর্টে উঠেছে, বিষয়টি অত্যন্ত ইতিবাচক। শিক্ষাঙ্গনে অনাচার যে মাত্রায় গেছে, সেটি জাতির জন্য লজ্জার ও কলঙ্কের। পৃথিবীর কোনো সভ্য দেশে এ রকমটি চলতে পারে না। হাইকোর্টের এই নির্দেশনাকে স্বাগত জানাচ্ছি। পাশাপাশি আশা করব, শিক্ষাঙ্গনে নিরাপত্তা এবং শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হাইকোর্ট একটি স্থায়ী কমিশন গঠন করার নির্দেশনা দেবেন।

Also Read: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েটি কত দিন সংগ্রাম চালাতে পারবেন, নিশ্চিত নই

প্রশ্ন

প্রথম আলো: আপনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নির্যাতনের প্রতিবাদে একাই অনশন করেছেন। এর কোনো প্রভাব পড়ছে বলে মনে করছেন?

ফরিদ উদ্দিন খান: কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় সারা দেশে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন একটি ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করেছিল। কেউ কথা বলতে পারছিল না, নির্যাতনের শিকার হচ্ছিল। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীকে হাতুড়ি দিয়ে মেরে পাঁজরের হাড় ভেঙে দিয়েছিল। সে সময় আমি নিজেকে আর সংযত রাখতে পারিনি। সব ভয় উপেক্ষা করে খালি পায়ে হাঁটার কর্মসূচি দিয়েছিলাম। সেদিন অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থী সেই কর্মসূচিতে অংশ নেন। এরপর আবাসিক হলের নিপীড়নের বিরুদ্ধে অনশন, মানববন্ধন করেছি। এর ফলে কিছুটা হলেও সাধারণ শিক্ষার্থীরা মুখ খোলার সাহস পাচ্ছেন। একেবারে নীরবে মার খাচ্ছেন না।

Also Read: তাঁরা শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছেন

প্রশ্ন

প্রথম আলো: এ ক্ষেত্রে অভিভাবক হিসেবে শিক্ষকের দায় কতটুকু বলে মনে করেন?

ফরিদ উদ্দিন খান: আমি মনে করি প্রতিবাদের সবচেয়ে বড় সফলতা প্রতিবাদ নিজেই। দিনের পর দিন অন্যায় হচ্ছে, শিক্ষার্থীরা ন্যায়সংগত অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন; কিন্তু তাঁদের অভিভাবক হিসেবে শিক্ষকেরা শুধু চেয়ে চেয়ে দেখবেন, সেটা কাম্য নয়। সেদিক থেকে অন্তত কেউ একজন প্রতিবাদ করছেন, সেটিও কম কিসে! আমরা প্রতিবাদী জাতি, তাই প্রতিবাদ চালিয়ে যেতে হবে। সে একজন হোক কিংবা অনেকে হোক।

Also Read: সাহস করে অভিযোগ করায় অভিবাদন

প্রশ্ন

প্রথম আলো: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েটি সাহস করে যে অভিযোগ করেছেন, এর প্রভাব কি অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে বলে মনে করেন?

ফরিদ উদ্দিন খান: আমাদের সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা এমন যে একটি নেতিবাচক বিষয় যত দ্রুত সংক্রমিত হয়, ইতিবাচক বিষয় সেভাবে সবাইকে আন্দোলিত করে না। তবে এখন সাধারণ শিক্ষার্থীদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। অভিযোগ যে আসছে না, তা নয়। জাতীয় পত্রিকাগুলোতেও সেগুলো ছাপা হচ্ছে। কিন্তু যাঁরা দায়িত্বশীল, তাঁরা নির্বিকার। তবে আমি আশাবাদী, এই ভীতিকর অবস্থা বেশি দিন চলবে না। আমরা জাগতে শুরু করেছি। শিক্ষক সমাজ সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতি এই মানবাধিকার লঙ্ঘনে নীরব থাকতে পারে না।

Also Read: ফুলপরীকে সাধুবাদ, প্রতিবাদ করলে সমাজ বদলাবেই

প্রশ্ন

প্রথম আলো: বারবার এ ধরনের ঘটনা কেন ঘটছে এবং প্রতিকারের উপায় কী?

ফরিদ উদ্দিন খান: অপরাধ করে যদি কেউ পার পেয়ে যায়, সেখানে অপরাধ সংঘটিত হবে; সেটাই স্বাভাবিক। সঠিক তদন্ত হচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রে হলেও সেগুলো হিমঘরে চলে যাচ্ছে। ফলে অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। বিচারহীনতা এই ধরনের অপরাধকে সংক্রমিত করছে। শিক্ষাঙ্গন তো এই রাষ্ট্রের বাইরের কোনো প্রতিষ্ঠান নয়! ফলে রাষ্ট্রের অসুস্থতা এখানেও গভীর ক্ষত সৃষ্টি করছে। শিক্ষাঙ্গনকে রাজনৈতিক ও দলীয় বলয়ের প্রভাবমুক্ত রাখা, জবাবদিহি, আইনের শাসন কার্যকর করা বড় চ্যালেঞ্জ। এগুলোর উন্নতি না ঘটলে এবং শিক্ষাঙ্গনে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে না পারলে একটি–দুটি অপরাধের বিচার করে এগুলো কমবে না।

Also Read: শিক্ষক হিসেবে আমার ছাত্রী ফুলপরীকে স্যালুট করি