তাঁরা শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছেন

মিজানুর রহমান

কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে ছাত্রী নির্যাতনের যে বর্ণনা সংবাদমাধ্যমে উঠে এসেছে, তা স্তম্ভিত হয়ে যাওয়ার মতো। সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কী পরিবেশ বিরাজ করছে, তারই প্রতিফলন ঘটেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে। যা আমাদের জাতির জন্য সাংঘাতিক উদ্বেগের।

অবস্থা এমন জায়গায় চলে গেছে যে রাজনৈতিক সংগঠনের পদের অপব্যবহার করে কেউ কেউ নির্যাতন করতেও দ্বিধাবোধ করছেন না। কিন্তু তাঁদের বিরুদ্ধে শক্তভাবে দাঁড়ানোর মতো নৈতিক ক্ষমতা যেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হারিয়ে ফেলেছে। সরকারি ছাত্রসংগঠন হয়ে থাকলে তার বিরুদ্ধে যেন কথা বলার সাহসও যেন কারও নেই।

আরও পড়ুন

উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষকসমাজের নৈতিকতার যে উচ্চ অবস্থান থাকার কথা ছিল, সেটি ভেঙে পেড়েছে। এখন এক–দুজন শিক্ষক প্রতিবাদ করছেন। তবে প্রতিবাদের জায়গা সংকুচিত হয়ে গেছে। আমি যখন তরুণ ছিলাম, তখন এ রকম কোনো ঘটনা ঘটলে প্রথম যে সংগঠনটি তীব্র প্রতিবাদ জানাত, সেটি হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। তখন বলা হতো, এই শিক্ষক সমিতি যেন জাতির বিবেকের প্রতিফলন। এখন সেই জায়গা কোথায়?

ছাত্রলীগের নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থী ফুলপরী খাতুন। গতকাল বিকেলে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস
ছবি: প্রথম আলো

ছাত্রলীগকে যাঁদের থামানোর দায়িত্ব, তাঁরা তাকিয়ে তাকিয়ে এসব ঘটনা দেখছেন। তাঁরা কোনো প্রতিক্রিয়াই ব্যক্ত করছেন না। এই যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাস্কর্য হারিয়ে গেল, পরে দ্বিখণ্ডিত রবীন্দ্রনাথকে আমরা আস্তাকুঁড়ের মধ্যে আবিষ্কার করলাম। এটা ঢাকা বিশ্ববিল্যায়ের জন্য কতটা লজ্জার, কতটা বেদনাদায়ক ঘটনা! একুশে বইমেলার সময় এটা কল্পনা করা যায়! সামগ্রিকভাবে নৈতিকতা, চিন্তাচেতনা ও মননের সাংঘাতিক অবনতি ঘটেছে।

আরও পড়ুন

এই জায়গাগুলো দেখভাল করার দায়িত্ব যাঁদের দেওয়া হয়েছে, এখন মনে হচ্ছে, যোগ্য ব্যক্তিকে যোগ্য জায়গায় দেওয়া হচ্ছে না। যার ফলে আমরা এমন একটা অবস্থায় পড়ে গেছি যে এখান থেকে উঠে আসতে কত সময় লাগবে; কিংবা আরও কত গহ্বরে তলিয়ে যেতে হবে, সেটি নিয়েই দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছি।

শিক্ষাব্যবস্থাসহ সামগ্রিকভাবে আমরা যে অন্ধকারে নিমজ্জিত হতে যাচ্ছি, এই জায়গাতে এখনই রাশ টেনে ধরা দরকার। যাঁর ওপরে আস্থা রেখে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়তে চাই, তাঁর কাছ থেকে অতিসত্বর যেন নির্দেশ আসে যে যাঁর যা দায়িত্ব, তাঁরা যেন যথাযথভাবে তা পালন করার পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেন। নাহলে অনেক দেরি হয়ে যেতে পারে।

  • মিজানুর রহমান, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান