Thank you for trying Sticky AMP!!

‘দাবিটাবি কিছু লয়, এটা গরিবের প্যাট মারা ধর্মঘট’

পরিবহন ধর্মঘটের কারণে অলস সময় পার করছেন পরিবহনশ্রমিকেরা। কাজ না থাকায় মোবাইলে গেম খেলায় ব্যস্ত কয়েকজন শ্রমিক। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় নওগাঁ বালুডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে

‘মালিকেরা আর হামাগের শ্রমিকনেতারা সরকারের দালালি করার জন্য এ ধর্মঘট ডাকছে। তাগের লাভ ঠিকই হবে, কিন্তু হামাগের কোনো লাভ হবে না। দাবিটাবি কিছু লয়, এটা গরিবের প্যাট মারা ধর্মঘট। বিএনপির সমাবেশ শ্যাষ, এ ধর্মঘট শ্যাষ হবে। মাঝখানত তিনটা দিন গরিবের জমানা টাকাটা শ্যাষ হবে।’

আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে নওগাঁ বালুডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে কথাগুলো বলছিলেন নওগাঁ-সাপাহার রুটে চলা নওগাঁ ট্রাভেলস পরিবহনের একটি বাসের চালকের সহকারী কেটু সরদার।

কোনো দাবিটাবি নাই। বিএনপির সমাবেশে যাতে মানুষ য্যাতে না পারে, সে জন্য উপরের চাপে মালিকেরা বাস বন্ধ রাখছে। যেগুলা দাবির কথা বলা হচ্ছে, সেগুলা ভাঁওতাবাজি। আর হামরা শ্রমিকেরা হলাম ছাগলের তৃতীয় বাচ্চা।
আনিছুর রহমান, পরিবহনশ্রমিক

‘সবকিছু বলাও ঠিক নয়’ উল্লেখ করে কেটু সরদার বলেন, ‘এই ধর্মঘট কী জন্য হছে, এটা পাগলেও জানে। ধর্মঘটের কারণে ক্ষতির শিকার হছি হামরা বাসশ্রমিকেরা আর যাত্রীরা। বাসশ্রমিকেরা দিনে অ্যানে দিনে খাওয়া মানুষ। এক দিন বাস চললে একজন ড্রাইভার কিংবা হেলপার ডিউটি করলে দিনে কমপক্ষে ৫০০ টাকা পকেটে লিয়ে বাড়িত ফেরে। তিন দিন বাস না চলায় হামাগের যে ক্ষতি হবে, এটা পোষাবে কে? হামাগের প্যাট ম্যারে মালিক আর শ্রমিকনেতারা ঠিকই ফায়দা লুটবে।’

কেটু সরদারের মতো বেশ কয়েকজন পরিবহনশ্রমিক বালুডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে যাত্রীছাউনিতে বসে অলস সময় পার করছিলেন। তাঁদের কয়েকজন মুঠোফোনে গেম খেলায় ব্যস্ত। অনেকে আবার গাড়ি ধোয়ামোছার কাজ করছেন।

Also Read: ১ ডিসেম্বর থেকে রাজশাহীতে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক

কোন দাবিতে পরিবহন ধর্মঘট, জানতে চাইলে মুঠোফোনে গেম খেলা আনিছুর রহমান নামের এক শ্রমিক বলেন, ‘কোনো দাবিটাবি নাই। বিএনপির সমাবেশে যাতে মানুষ য্যাতে না পারে, সে জন্য উপরের চাপে মালিকেরা বাস বন্ধ রাখছে। এটাই হলো আসল কারণ। যেগুলা দাবির কথা বলা হচ্ছে, সেগুলা হচ্ছে ভাঁওতাবাজি। আর হামরা শ্রমিকেরা হলাম ছাগলের তৃতীয় বাচ্চা। কামকাজ নাই, বসে বসে মোবাইলে লুডু খ্যালোচি।’

মহাসড়কে নছিমন, করিমন, ভটভটিসহ অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধসহ ১১ দফা দাবিতে নওগাঁসহ রাজশাহী বিভাগের ৮টি জেলায় আজ সকাল ৬টা থেকে পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। অনির্দিষ্টকালের জন্য ডাকা এ ধর্মঘটে যাত্রীদের পাশাপাশি পরিবহনশ্রমিকেরাও চরম ক্ষুব্ধ।

Also Read: বাস ছেড়ে ৩০ কিমি হেঁটে সমাবেশস্থলে নেতা-কর্মীরা

নওগাঁসহ রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় চলছে পরিবহন ধর্মঘট। বৃহস্পতিবার সকাল ছয়টা থেকে নওগাঁ দূরপাল্লা ও অভ্যন্তরীণ রুটে কোনো বাস ছাড়েনি। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় নওগাঁ বালুডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে

শ্রমিকদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নওগাঁ বাস মালিক গ্রুপের সহসভাপতি শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পরিবহন মালিক ও শ্রমিক ইউনিয়ন যৌথ পরিষদ নাটোরে এক সভায় গত ২৬ নভেম্বর এ ধর্মঘটের ঘোষণা দিয়েছে। দাবিগুলোর মধ্যে মালিকদের স্বার্থরক্ষার পাশাপাশি শ্রমিকদেরও স্বার্থ আছে। দাবি আদায় করতে হলে একটু ত্যাগ শিকার তো করতেই হবে। শ্রমিকদের যেমন ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি আমাদেরও তো লোকসান হচ্ছে।’

বিএনপির গণসমাবেশ ঘিরে সরকারের চাপে ধর্মঘট ডাকা হয়েছে—বিএনপির নেতাদের এমন অভিযোগের বিষয়ে শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বিএনপির সম্মেলন বানচাল করার জন্য কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। আমাদের ওপর কোনো চাপও নেই।’

সাধারণ যাত্রীদের ভোগান্তি

এদিকে পরিবহন ধর্মঘটে বাস না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন নওগাঁর অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার বিভিন্ন রুটের যাত্রীরা। সকাল ১০টার দিকে শহরের বালুডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা গেছে, বেশ কয়েকজন যাত্রী কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে যাওয়ার জন্য গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছেন। বাসস্ট্যান্ড থেকে কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। বাস না চলায় যাত্রীদের অনেককে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে।

সকালে ট্রেনে সান্তাহার জংশনে নামেন সাপাহারগামী যাত্রী ফয়সাল হোসেন। সকাল সাড়ে ১০টায় বালুডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে তাঁর সঙ্গে কথা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফয়সাল হোসেন বলেন, ‘আমার দাদি খুবই অসুস্থ। গতকাল সন্ধ্যায় দাদির অসুস্থতার খবর পেয়ে রাত ১১টায় ট্রেনে উঠি। সকালে সান্তাহার স্টেশনে নেমে সিএনজিতে করে বালুডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড এসেছি। এখানে এসে দেখি বাস বন্ধ। সিএনজির ভাড়া চাইছে ২০০ টাকা। অথচ বাসে গেলে ৮০ টাকা লাগত।’

Also Read: ‘পরিবহন মালিকেরা ধর্মঘট ডেকেছেন, সরকারি বিআরটিসির বাস বন্ধ কেন?’

বালুডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষমাণ রাজশাহীগামী যাত্রী শারমিন বেগম বলেন, ‘জরুরি কাজে রাজশাহী যেতে হবে। বাস বন্ধের বিষয়টি জানতাম না। বাসস্ট্যান্ডে এসে দেখি বাস বন্ধ। প্রায় ৪০ মিনিট অপেক্ষা করেও কোনো সিএনজি পাচ্ছি না।’ মহাদেবপুরগামী দুই যাত্রী আলাউদ্দিন আহমেদ ও কবির হোসেন জানান, নওগাঁ থেকে মহাদেবপুরের সিএনজিভাড়া ৬০ টাকা। কিন্তু আজ বাস বন্ধ দেখে ভাড়া চাইছে ১০০ টাকা।’

বাস বন্ধের বিষয়ে নওগাঁ জেলা বিএনপির সদস্যসচিব বায়েজিদ হোসেন পলাশ বলেন, সাজানো ধর্মঘট সারা দেশেই হচ্ছে। বিএনপির গণসমাবেশের দু-এক দিন আগে থেকেই ধর্মঘটের ডাক দিচ্ছে। তাঁরাও সেভাবে প্রস্তুতি নিয়েছেন। ধর্মঘট ডেকে তাঁদের কেউ আটকে রাখতে পারবে না। ধর্মঘট শুরুর আগেই নওগাঁ থেকে বিএনপির ২০ থেকে ৩০ হাজার নেতা-কর্মী রাজশাহীতে চলে গেছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন উপায়ে আরও কয়েক হাজার নেতা-কর্মী গণসমাবেশে যোগ দেবেন।

Also Read: রাজশাহীতে পরিবহন ধর্মঘটে যাত্রীদের দুর্ভোগ

বিএনপির গণসমাবেশের সঙ্গে ধর্মঘটের কোনো সম্পর্ক নেই দাবি করে জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মতিউজ্জামান বলেন, ‘আমরা দুই মাস আগে থেকে ধর্মঘটের বিষয়ে মিটিং করেছি। ২৬ তারিখে নাটোরে একটি মিটিংয়ে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এখানে নওগাঁর একক কোনো বিষয় নেই। এটা পুরো রাজশাহী বিভাগের বিষয়।’

Also Read: বিএনপির গণসমাবেশ: রাত থেকেই রাজশাহী থেকে বিভিন্ন জেলার বাস চলছে না