Thank you for trying Sticky AMP!!

মুন্সিগঞ্জে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির পরিবারের তিন সদস্য স্বতন্ত্র প্রার্থী

বাঁ থেকে সোহানা তাহমিনা, মোহম্মদ ফয়সাল ও চৌধুরী ফারিহা আফরিন

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মুন্সিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মহিউদ্দিনের পরিবার থেকেই তিনজন ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থী হয়েছেন।

মুন্সিগঞ্জ-২ (লৌহজং-টঙ্গিবাড়ী) ও মুন্সিগঞ্জ-৩ (সদর-গজারিয়া) আসনে তাঁরা নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে লড়বেন। বিএনপি নির্বাচনে না থাকায় তাঁদেরই নৌকার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করছেন নেতা-কর্মীরা।

গত সোমবার প্রতীক বরাদ্দের পর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থীরা প্রচারে নেমেছেন। অধিকাংশ নেতা-কর্মী ভাগ হয়ে প্রার্থীদের পক্ষে প্রচার শুরু করেছেন। তবে কার পক্ষে ভোট করবেন, তা নিয়ে অস্বস্তিতে আছেন জ্যেষ্ঠ নেতারা।

Also Read: গজারিয়ায় আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ, আহত ৭

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মহিউদ্দিনের দ্বিতীয় স্ত্রী সোহানা তাহমিনা মুন্সিগঞ্জ-২ আসনে ট্রাক প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। অন্যদিকে মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনে মহিউদ্দিনের বড় ছেলে মোহাম্মদ ফয়সাল কাঁচি প্রতীক নিয়ে এবং ফয়সালের স্ত্রী চৌধুরী ফারিহা আফরিন কেটলি প্রতীক নিয়ে ভোটে আছেন।

সোহানা তাহমিনা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং ফয়সাল জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এবং মুন্সিগঞ্জ পৌরসভার দুবারের মেয়র। সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য পৌর মেয়রের পদ ছাড়েন তিনি। সোহানা ও ফয়সাল মুন্সিগঞ্জ ২ ও ৩ আসন থেকে নৌকার মনোনয়ন চেয়েছিলেন। দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে তাঁরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। ফয়সালের স্ত্রী চৌধুরী ফারিহা আফরিন স্বামীর ‘ডামি’ প্রার্থী হিসেবে আছেন বলে জানা গেছে।

Also Read: আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য ক্ষমা চাইলেন আওয়ামী লীগ প্রার্থীসহ ৩ জন

নেতা-কর্মীদের ভাষ্য, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মহিউদ্দিন দলের একজন প্রবীণ নেতা। তাঁর ছেলে ফয়সাল ও স্ত্রী সোহানা জেলায় জনপ্রিয়। সেই হিসেবে এক পরিবার থেকে প্রার্থী হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। এমনকি নির্বাচিত হলেও তাঁরা অবাক হবেন না।

মুন্সিগঞ্জ-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাগুফতা ইয়াসমিন। তিনি টানা তিনবারের সংসদ সদস্য। এ আসনে সোহানা তাহমিনাসহ মোট ৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে সাগুফতা ইয়াসমিনের নৌকার বিরুদ্ধে সোহানা তাহমিনার ট্রাক প্রতীকের মধ্যেই মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে দাবি নেতা-কর্মীদের।

Also Read: আচরণবিধি লঙ্ঘনকে অনিচ্ছাকৃত বলে দাবি করলেন মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনের প্রার্থী মৃণাল কান্তি দাস

সোহানা তাহমিনা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান। আমি ১০ বছর ধরে তৃণমূলের সঙ্গে কাজ করেছি। এ আসনের মানুষ আমাকে নৌকার প্রার্থী হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন। নৌকা পাইনি। মানুষের আগ্রহের কারণে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি। ট্রাক প্রতীক পাওয়ার পর গতকাল সন্ধ্যা থেকে ভোটারদের কাছে যাওয়া শুরু করেছি। মানুষের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। ইনশা আল্লাহ জয় নিয়ে ঘরে ফিরব।’

মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনে পরপর দুবার সংসদ সদস্য হয়েছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস। এখানে মৃণাল-ফয়সাল ছাড়া আরও আটজন প্রার্থী আছেন। আসনটিতে মৃণাল কান্তি দাসের ব্যাপক জনসমর্থন থাকলেও ফয়সালের গ্রহণযোগ্যতাও কম নয়।

সদর ও গজারিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত আসনের ৮-১০ জন নেতা জানান, ফয়সাল সামাজিক ও রাজনৈতিক যেকোনো কাজ দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে করতেন। তিনি বিভিন্ন এলাকায় নিয়মিত যাতায়াত করতেন। এ ছাড়া দুবার মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছেন। এবারের নির্বাচনে সদর ও গজারিয়া উপজেলার অধিকাংশ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এবং পদধারী নেতারা সরাসরি তাঁর পক্ষে আছেন।

মোহাম্মাদ ফয়সাল প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমান সংসদ সদস্য ও তাঁর অনুসারীদের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ ও নেতা-কর্মীরা নানাভাবে বঞ্চিত, নির্যাতিত। সাধারণ ভোটার ও নেতা-কর্মীরা চেয়েছিলেন, তিনি নৌকার প্রার্থী হবেন। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত ভোটার ও নেতা-কর্মীদের চাপে প্রার্থী হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘মানুষের অনেক অনেক সাড়া পাচ্ছি। পরিবেশ ঠিক থাকলে জয় শতভাগ নিশ্চিত।’

প্রার্থীরা এখন নেতা-কর্মীদের যাঁদের যেভাবে পারছেন, নিজেদের পক্ষে টানছেন। তবে জ্যেষ্ঠ নেতাদের কেউ কেউ কার পক্ষে নির্বাচন করবেন, তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছেন। এমতাবস্থায় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে আছেন বলে মন্তব্য করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ লুৎফর রহমান।  

লুৎফর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপি নির্বাচনে নেই। ভোটার উপস্থিতি ঠিক রাখতে ও প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা বাড়াতে চেয়েছে হাইকমান্ড। তাই নৌকার প্রার্থীদের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতারাও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। মুন্সিগঞ্জ-২ ও ৩ আসনে যাঁরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে সোহানা তাহমিনা ও ফয়সাল শক্তিশালী প্রার্থী। আসন দুটিতে প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন হবে। কার পক্ষে কাজ করতে হবে, এখনো সুস্পষ্ট নির্দেশনা আসেনি। নৌকা ডাকলে নৌকার পক্ষে যেতে হবে। স্বতন্ত্র ডাকলে তাদের পক্ষে যেতে হবে।