Thank you for trying Sticky AMP!!

নাসিরনগরে হামলার ৭ বছরেও ৭ মামলার বিচার হয়নি, মামলা থেকে মুক্তি চান রসরাজ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে ২০১৬ সালের ৩০ অক্টোবর মন্দির ও হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট-অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার সাত বছর আজ সোমবার। ফেসবুকে ধর্মীয় অবমাননাকর ছবি পোস্টের অভিযোগ তুলে ২০১৬ সালের ৩০ অক্টোবর নাসিরনগরে ১৫টি মন্দির ও তিন শতাধিক বাড়িঘরে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হয়। এসব ঘটনায় করা ৮টি মামলার মধ্যে ১টি মামলায় ১৩ জনকে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। বাকি ৭টি মামলার বিচারকাজ এখনো শেষ হয়নি।

রসরাজ দাস (৩৭) নামের এক যুবকের ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে হামলা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। হামলার ৫ বছর পর ওই পোস্টের রহস্য উদ্‌ঘাটন না করেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮-এর ২৮, ৩১, ৩৩ ও ৩৫ ধারায় রসরাজসহ ২ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। যদিও রসরাজের ফেসবুক, মুঠোফোন ও মেমোরি কার্ডে ছবির অস্তিত্ব পায়নি পিবিআই ও সিআইডির ফরেনসিক বিভাগ।
৮টি মামলার ১টিতে ঘটনার ১৩ মাস পর অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। বাকি ৭টি মামলার অভিযোগপত্র ২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২২ সালের জানুয়ারির মধ্যে দেওয়া হয়। অভিযোগ গঠনের পর বাকি ছয়টি মামলা এক বছর ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালতে বিচারাধীন। এখন সাক্ষ্য গ্রহণের কাজ চলছে। রসরাজের বিরুদ্ধে করা মামলাটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে চট্টগ্রামের সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতে বদলি করা হয়েছে। প্রায় দুই বছর ধরে তিনি চট্টগ্রামে গিয়ে হাজিরা দিচ্ছেন।

Also Read: নাসিরনগরে তাণ্ডব: ৭ মামলার তদন্ত শেষ হয়নি ৪ বছরেও

রসরাজ দাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত গত দুই বছরে হাজিরার জন্য চট্টগ্রামে সাত থেকে আটবার গিয়েছি। আমি নদীতে মাছ ধরে সংসার চালাই। প্রথম দিকে চট্টগ্রামে গেলে একেক দিন ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ হতো। এখন গড়ে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা খরচ হয়। মামলার খরচ জোগাড় করতে খুব কষ্ট হয়। আমি এই মামলা থেকে মুক্তি চাই। মুক্ত হয়ে স্বাভাবিক জীবন কাটাতে চাই।’

রসরাজ দাস উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের হরিণবেড় গ্রামের জগন্নাথ দাসের ছেলে। তিনি মাছ ধরে সংসার চালান। রসরাজের বিরুদ্ধে পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রে আওয়ামী লীগের সমর্থক উপজেলার সংকরাদহ গ্রামের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলমের নামও আছে। জাহাঙ্গীর ও তাঁর লোকজন ফেসবুকের ওই পোস্টের পর রসরাজকে আটক করে পিটিয়ে পুলিশে দেন। জাহাঙ্গীর ওই পোস্টের ছবিটি নিজের দোকান থেকে প্রিন্ট করে লিফলেট বানিয়ে ওই দিন সন্ধ্যায় বিলি করেন। রসরাজ ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে জামিনে মুক্তি পান। জাহাঙ্গীর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রসরাজের ফেসবুক পোস্টের জেরে ২০১৬ সালের ৩০ অক্টোবর সকালে আহলে সুন্নাত ওয়াল জমা’য়াতের উপজেলা শাখার নেতারা নাসিরনগর কলেজ মোড়ে বিক্ষোভের ডাক দেন। অন্যদিকে খাঁটি আহলে সুন্নাত ওয়াল জমা’য়াতের নেতারা নাসিরনগর খেলার মাঠে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দেন। পৃথক সমাবেশ চলাকালে উপজেলা সদরে ১৫টি মন্দির ও হিন্দু সম্প্রদায়ের শতাধিক বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় হওয়া আট মামলায় প্রায় তিন হাজার লোককে আসামি করা হয়।

Also Read: তবু অভিযোগপত্রে প্রধান আসামি রসরাজ

রসরাজের আইনজীবী নাসির মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, রসরাজের পোস্ট করা যে ছবিকে কেন্দ্র করে হামলা হয়, তাঁর ফেসবুক, মুঠোফোন ও মেমোরি কার্ডে সেই ছবির কোনো আলামত পায়নি পিবিআই ও সিআইডির ফরেনসিক বিভাগ। আলামত না পাওয়ার মানে হলো রসরাজ পোস্টটি দেননি। পাঁচ বছরে ছয়জন তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত শেষে পোস্টের রহস্য উদ্‌ঘাটন না করেই তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার আগে চার থেকে পাঁচজন মামলার তদন্ত করেছেন। আমি সর্বশেষ তদন্তকারী কর্মকর্তা। ফরেনসিকের সব প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে, সব ডিভাইস পরীক্ষা করে, বিশেষজ্ঞদের মতামত, সাক্ষ্য–প্রমাণ ও পারিপার্শ্বিক সবকিছুর ভিত্তিতে যাঁদের বিরুদ্ধে পাওয়া গেছে, তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। রসরাজ পোস্ট দেওয়ার পর ক্ষমা চেয়ে তা মুছে দিয়েছে—এমন পোস্টের অস্তিত্ব পেয়েছে ফরেনসিক বিভাগ।’

এক মামলায় ১৩ জনের সাজা

আদালত সূত্র জানায়, নাসিরনগর উপজেলা সদরের পশ্চিমপাড়ায় পুরোনো দুর্গামন্দিরের হামলা-ভাঙচুরের মামলায় ১৩ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় হামলার প্রায় সাড়ে ছয় বছর পর চলতি বছরের ১৬ মার্চ মামলায় রায় দেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদ পারভেজ।

Also Read: নাসিরনগরে হামলার ঘটনায় ২ চেয়ারম্যানসহ ১৩ জনের চার বছরের কারাদণ্ড

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান শেখ মো. আবদুল আহাদ, হরিপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান দেওয়ান আতিকুর রহমানসহ ১৩ জনকে ৪ বছর করে কারাদণ্ড দেন আদালত। একই সঙ্গে আসামিদের প্রত্যেককে দুই হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। দেওয়ান আতিকুর রহমানসহ পাঁচ আসামি রায়ের পর থেকে পলাতক।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জজ আদালতের পরিদর্শক কাজী দিদারুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, নাসিরনগরে মন্দির ও বাড়িঘরে হামলার ঘটনায় আটটি মামলার মধ্যে ছয়টি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালতে বিচারাধীন। মামলাগুলোর সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে। কোনো মামলা রিভিশনে নেই। একটি মামলা চট্টগ্রামের সাইবার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়েছে। একটিতে ১৩ জনকে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

Also Read: বিচারহীনতার সংস্কৃতির অবসান হোক