তবু অভিযোগপত্রে প্রধান আসামি রসরাজ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মানচিত্র

ফেসবুকে ধর্মীয় অবমাননাকর ছবি পোস্ট করার অভিযোগে গ্রেপ্তারের পর জামিনে থাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার রসরাজ দাসের ফেসবুক, মুঠোফোন ও মেমোরি কার্ডে ওই ছবির কোনো অস্তিত্ব পায়নি ঢাকার পিবিআই ও সিআইডির ফরেনসিক বিভাগ।

হামলার পাঁচ বছর পর ওই পোস্টের রহস্য উদ্‌ঘাটন না করেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮–এর ২৮, ৩১, ৩৩ ও ৩৫ ধারায় প্রধান আসামি রসরাজসহ দুজনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ।

ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগ এনে ২০১৬ সালের ৩০ অক্টোবর হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ১৫টি মন্দির ও শতাধিক বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এরপর ধর্ম অবমাননার অভিযোগে রসরাজের বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনে মামলা হয়। ওই মামলায় গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন তদন্ত কর্মকর্তা।

রসরাজের ফেসবুক, মুঠোফোন ও মেমোরি কার্ডের ফরেনসিক প্রতিবেদনে তাঁর আইডি থেকে ওই পোস্ট দেওয়ার কোনো আলামত না পাওয়ার মানে হলো রসরাজ ওই পোস্ট দেননি। তাহলে কে দিয়েছিল পোস্টটি? পাঁচ বছরে ছয় তদন্ত কর্মকর্তা তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দিলেও এর কোনো উত্তর মেলেনি।

জানতে চাইলে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘রসরাজ পোস্ট দেওয়ার পর ক্ষমা চেয়ে সেটা ডিলিট করে দিয়েছে—এমন পোস্টের অস্তিত্ব পেয়েছে ফরেনসিক বিভাগ। ফরেনসিকের সব প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে, সব ডিভাইস পরীক্ষা করে, বিশেষজ্ঞদের মতামত, সাক্ষ্য–প্রমাণ ও পারিপার্শ্বিক সবকিছুর ভিত্তিতে দুজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে।’

রসরাজ দাস (৩৫) উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের হরিণবেড় গ্রামের জগন্নাথ দাসের ছেলে। পেশায় তিনি জেলে। অভিযোগপত্রে আওয়ামী লীগ সমর্থক উপজেলার সংকরাদহ গ্রামের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলমের নামও রয়েছে।

জাহাঙ্গীর ও তাঁর লোকজন ফেসবুকের ওই পোস্টের পর রসরাজকে আটক করে পিটিয়ে পুলিশে দেন। আর জাহাঙ্গীর ওই পোস্টের ছবিটি নিজের দোকান থেকে প্রিন্ট করে লিফলেট বানিয়ে ওই দিন সন্ধ্যায় বিলি করেন।

আদালত ও রসরাজের মামলার আইনজীবী সূত্রে জানা গেছে, গত ২৯ ডিসেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ৩০ ডিসেম্বর মামলাটি বিচারের

জন্য চট্টগ্রামের সাইবার ট্রাইব্যুনালে বদলি করেন। গত ১২ জানুয়ারি অভিযোগপত্রসহ

মামলার নথি ডাকযোগে চট্টগ্রামের সাইবার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। ৩০ জানুয়ারি চট্টগ্রামের সাইবার ট্রাইব্যুনালে রসরাজের মামলার শুনানির তারিখ ছিল।

চট্টগ্রাম সাইবার ট্রাইব্যুনালের আইনজীবী ভুলন ভৌমিক প্রথম আলোকে বলেন, মামলা ট্রাইব্যুনালে এসে পৌঁছেছে। কিন্তু ট্রাইব্যুনালে মামলাটি এখনো নম্বরভুক্ত হয়নি এবং পরবর্তী তারিখও নির্ধারণ হয়নি।