Thank you for trying Sticky AMP!!

আনন্দে ভাসছে চ্যাম্পিয়ন মেয়েদের গ্রাম কলসিন্দুর

সানজিদা–মারিয়ারা চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় কলসিন্দুর উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছেলেরা বিজয় মিছিল বের করে। মঙ্গলবার সকালে কলসিন্দুর গ্রামে

কলসিন্দুর। গারো পাহাড়ের পাদদেশে নেতাই নদের পারের শান্ত জনপদ। গ্রামটিকে অবশ্য এখন আর অচেনা বলার উপায় নেই। ফুটবলের কল্যাণে সারা দেশের মানুষের কাছে পরিচিত এক নাম। কলসিন্দুরে বেড়ে ওঠা আট নারী ফুটবলার খেলছেন জাতীয় দলে। নারীদের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে তাঁরা দেশের জন্য প্রথমবার এনে দিয়েছেন শিরোপা। নানা প্রতিকূলতা-প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে অবিচল লক্ষ্য, অদম্য মনোবল, প্রবল ইচ্ছা আর দৃঢ়সংকল্পকে সঙ্গী করেই তাঁরা পাড়ি দিয়েছেন স্বপ্নপূরণের পথ।

আজ মঙ্গলবার সকালে আকাশ মেঘলা থাকলেও কলসিন্দুর গ্রামের মানুষের মনে ছিল আনন্দের বন্যা। আগের রাতে নেপালে অনুষ্ঠিত নারীদের সাফ ফুটবলে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন দলের আট সদস্য যে কলসিন্দুরের। শুধু কলসিন্দুর নয়, বাংলাদেশের মেয়েরা দক্ষিণ এশিয়ার সেরা হওয়ার আনন্দ ছড়িয়ে পড়েছে পুরো ধোবাউড়া উপজেলায়।

Also Read: কলসিন্দুরের সেই অদম্য মেয়েরাই জয়ী

জাতীয় দলের সানজিদা আক্তার, মারিয়া মান্দা, শিউলি আজিম, তহুরা খাতুন, শামসুন্নাহার সিনিয়র, শামসুন্নাহার জুনিয়র, সাজেদা খাতুন, মার্জিয়া আক্তারের বাড়ি কলসিন্দুরে।

উপজেলা সদর থেকে কলসিন্দুর যাওয়ার পথে কৃষ্ণপুর মোড়ে হাতে গোনা কয়েকজন মানুষের জটলা দেখা যায়। আলোচনা গতকালের খেলা নিয়ে। মেয়েদের চ্যাম্পিয়ন হওয়া আর কলসিন্দুরের মেয়েদের খেলার নৈপুণ্য নিয়ে চলছিল চুলচেরা বিশ্লেষণ। নজরুল ইসলাম নামের একজন বলে উঠলেন, মাঠে কাঁদা না থাকলে তো বাংলাদেশ আরও গোল করতে পারত। আরেকজন বলে উঠলেন, মাঠের ৯০ শতাংশ দর্শকই নেপালের সমর্থক। প্রতিপক্ষের মাটিতে এত সমর্থকের মধ্যে মেয়েরা যে ফুটবল খেলেছেন, তা এককথায় অসাধারণ।

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কলসিন্দুর গ্রামে ফুটবলার সানজিদার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সুনসান নীরবতা। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ভেতরে সানজিদার মা জোসনা খানম আছেন। সকাল থেকে বাড়িতে গ্রামের মানুষের ভিড় ছিল। ঘরের কাজ জমে ছিল। সেসব কাজেই ব্যস্ত তিনি। কাজ শেষ করে জোসনা খানম প্রথম আলোকে বলেন, ‘খেলার আগের দিন সানজিদা ফোন করেছিল। দোয়া চেয়েছিল। আমি ফুটবল খেলা বুঝি না। তবে মেয়ের জন্য, দেশের জন্য সব সময়ই দোয়া থাকে।’

বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের জয় মানেই আমাদের কলসিন্দুরের জয়। এ জয়ে আমরা খুবই খুশি। মেয়েরা সাফে চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় কলসিন্দুরের মেয়েদের মধ্যে অনুপ্রেরণা অনেক বেড়ে গেছে।
জুয়েল রানা, কলসিন্দুরের মেয়েদের ফুটবল কোচ
ফুটবলার সানজিদা আক্তারের ছোট বোন ও মা। সানজিদার মতো বোন সাজেদাও ফুটবলার হতে চান। মঙ্গলবার সকালে কলসিন্দুর গ্রামে

সানজিদার বোন সাজেদাও ফুটবল খেলেন। তিনি এখনো জাতীয় দলের ক্যাম্পে ডাক না পেলেও বোনের মতো বড় ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন। সাজেদা বলেন, গতকাল বিকেলে কলসিন্দুর মাঠে অনুশীলন ছিল। তবে অনুশীলনে কারও মনোযোগ ছিল না। কোচ জুয়েল রানার মুঠোফোনে তাঁরা অন্তত ২০ জন মিলে বাংলাদেশের খেলা দেখেছেন। তিনি বোনের খেলার ভক্ত। তবে বাংলাদেশের সব নারী ফুটবলারই তাঁর খুব পছন্দের। দেশের জয়ে তাঁরা খুবই অনুপ্রাণিত।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কলসিন্দুর উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে মনে হলো আজ বিশেষ দিন। বিদ্যালয়ের সামনে একাধিক গাড়ি দাঁড়ানো। এসেছেন বিভিন্ন গণমাধ্যমের কর্মীরা। তাঁদের দেখে বিদ্যালয়ের ছেলেরা দেশের জয়ে ছোটখাটো বিজয় মিছিল করে।

Also Read: দক্ষিণ এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশের মেয়েরা

কলসিন্দুর উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ক্রীড়া শিক্ষক ও মেয়েদের ফুটবল কোচ জুয়েল রানা প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের জয় মানেই আমাদের কলসিন্দুরের জয়। এ জয়ে আমরা খুবই খুশি। মেয়েরা সাফে চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় কলসিন্দুরের মেয়েদের মধ্যে অনুপ্রেরণা অনেক বেড়ে গেছে।’

সানজিদা ছাড়াও জাতীয় দলের মারিয়া মান্দা, শিউলি আজিম, তহুরা খাতুন, শামসুন্নাহার সিনিয়র, শামসুন্নাহার জুনিয়র, সাজেদা খাতুন, মার্জিয়া আক্তারের বাড়ি কলসিন্দুরে। মারিয়া মান্দার বাড়ি কলসিন্দুর বিদ্যালয়ের পেছনে মন্দিরকোনা গ্রামে। ওই গ্রামে যেতে পার হতে হয় খরস্রোতা নেতাই নদ। সেতু না থাকায় দড়ি টেনে নৌকায় নদ পাড়ি দিতে হয়। নদের ওপারের মানুষের মধ্যেও বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস।

সাফজয়ী নারী ফুটবলার মারিয়া মান্দার মা ছিলনি মান্দা। মঙ্গলবার সকালে ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার কলসিন্দুর গ্রামে

মন্দিরকোনা গ্রামে দুই বছর আগে একটি মুদিদোকান দিয়েছেন মারিয়া মান্দার মা ছিলনি মান্দা। দোকানটি পরিচালনা করেন মারিয়ার বড় বোন পাপিয়া মান্দা। দোকানের সামনে বাঙালি আর গারো সম্প্রদায়ের মানুষের ভিড়। সেখানেও আলোচনা হচ্ছিল মেয়েদের সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়া নিয়ে। দোকানে মারিয়ার বোন পাপিয়া ছিলেন না। মারিয়ার খালাতো বোন জানিয়া মান্দা দোকান চালাচ্ছিলেন। জানিয়াও কলসিন্দুর মাঠে ফুটবল অনুশীলন করেন। দেশের এমন জয়ে কলসিন্দুরের মেয়েরা নতুন করে প্রেরণা পাচ্ছেন বলে জানান জানিয়া মান্দা।

মারিয়ার মা ছিলনি মান্দা বলেন, ‘খেলার আগের দিন মারিয়া ফোন করে দোয়া চেয়েছিল। অবশ্য খেলার পর আর কথা হয়নি। মারিয়াদের জয়ে বাংলাদেশের মানুষ খুব খুশি হয়েছে। দেশের মানুষ খুশি হলেই আমরা খুশি।’

Also Read: নারী ফুটবলারদের গ্রামে সবার মুখে স্বপ্নাদের বিজয়ের গল্প

Also Read: দেশের মানুষকেই জিতিয়েছেন সানজিদারা

Also Read: সানজিদাদের জয়টা তো বিশ্বাসীদেরও