Thank you for trying Sticky AMP!!

বাঘ গণনার ক্যামেরা চুরির অভিযোগে ১৪ জেলে গ্রেপ্তার, পরিবারের দাবি ‘ফাঁসানো হচ্ছে’

সুন্দরবনে আপন আস্তানায় রয়েল বেঙ্গল টাইগার

সুন্দরবনে বাঘশুমারির (গণনা) কাজে ব্যবহৃত ক্যামেরা চুরির অভিযোগে ১৪ জন জেলেকে আটক করেছে বন বিভাগ। গত মঙ্গলবার ও বুধবার তাঁদের সুন্দরবনের বিভিন্ন স্থান থেকে আটক করা হয়। পরে দুটি মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। তাঁদের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে মাছ ও কাঁকড়া ধরার পাশাপাশি বাঘ গণনার ক্যামেরা চুরির অভিযোগ আনা হয়েছে।

তবে ওই জেলেদের পরিবার দাবি করেছে, মূল অপরাধীদের ধরতে ব্যর্থ হয়ে বনবিভাগ নিরীহ জেলেদের মামলায় ফাঁসাচ্ছে।

গ্রেপ্তার জেলেরা হলেন শ্যামনগর উপজেলার হরিনগর গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেন শেখ (৪২), মথুরাপুর গ্রামের ওহাব আলী গাজী (৪৩), কুলতলি গ্রামের আবুল হোসেন গাজী (৬২), আটিরপর গ্রামের মো. মহিবুল্লাহ মল্লিক (৬২), গাবুরা গ্রামের নুরুল আলম গাইন (২০), মুন্সিগঞ্জ সেন্টার এলাকার আবদুর রহিম গাজী (২৭), হরিনগর আমজাদ মোল্লা (৫৫), ছোটভেটখালী গ্রামের আছাদুল গাজী (৪৭), ডুমুরিয়া গ্রামের রিপন গাজী (২৭), ধুমঘাট গ্রামের বাবর আলী (৩৩) ছোটভেটখালী গ্রামের আমজাদ সরদার (৩৫) যতীন্দ্রনগর গ্রামের ইউনুস ঢালী (৩৮), মুন্নাফ হোসেন (৬২) ও খুলনার কয়রা উপজেলার ৫ নং কয়রা গ্রামের আকবর হোসেন (৪৮)।

Also Read: সুন্দরবনে বাঘশুমারির আটটি ট্র্যাকিং ক্যামেরা চুরি

গ্রেপ্তার শ্যামনগর উপজেলার হরিনগর গ্রামের জেলে জাহাঙ্গীর হোসেন শেখের বাবা নূর ইসলাম শেখ প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ছেলে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েই ১০ ফেব্রুয়ারি সুন্দরবনের মাছ ধরতে গিয়েছিল। একই সঙ্গে ওহাব আলী গাজী ও আবুল হোসেন গাজী ছিল। তাঁরা অভয়ারণ্যে এলাকায় যাননি কিংবা কাঁকড়াও ধরেননি। অথচ তাঁদের অন্যায়ভাবে প্রথমে কাঁকড়া ধরার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাঁদের সুন্দরবনে ক্যামেরা চুরির অভিযোগে মামলা দেওয়া হয়েছে।

জেলেরা কেন ক্যামেরা চুরি করবে প্রশ্ন করে নূর ইসলাম শেখ বলেন, বাঘ, হরিণ কিংবা অন্য বন্য প্রাণী জেলেরা হত্যা করে না। এ জন্য আলাদা একাধিক দল আছে। তাঁরা ক্যামেরা চুরি করে থাকতে পারে। অথচ অন্যায়ভাবে নিরীহ জেলেদের ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের আয়তন ৬ হাজার ৫১৭ বর্গকিলোমিটার। এলাকাটি সাতক্ষীরা, খুলনা, চাঁদপাই ও শরণখোলা—চারটি রেঞ্জে বিভক্ত। বনের বাংলাদেশ অংশে বাঘের সংখ্যা জানতে গত ১ জানুয়ারি সাতক্ষীরা রেঞ্জ এলাকায় শুমারির কাজ শুরু করে বন বিভাগ। বন বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ের ৯ কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং টাইগার রেসপন্স টিমের ১২ সদস্য এ কাজ শুরু করেন। ২১ সদস্যের দলটি সাতক্ষীরা রেঞ্জ এবং খুলনা রেঞ্জের আংশিক এলাকায় প্রথম পর্যায়ে বাঘ গণনা করছে।

বাঘশুমারিতে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা জানান, শুমারির জন্য সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকার গাছে সাতক্ষীরা রেঞ্জে ২৭৬টি ও খুলনা রেঞ্জে ৫৪টি ট্র্যাকিং ক্যামেরা বসানো হয়। এর মধ্যে সাতক্ষীরা রেঞ্জের অভয়ারণ্য নোটাবেঁকি ও দোবেঁকি এলাকা থেকে আটটি ক্যামেরা চুরি হয়ে যায়।

গ্রেপ্তার হওয়া আরেক জেলে রিপন গাজীর বাবা আয়ূব আলী গাজী জানান, তাঁর ছেলে অন্যদের সঙ্গে মাছ ধরতে গিয়েছিল। তাঁকে অভয়ারণ্যে গিয়ে মাছ ধরার অভিযোগে আটক করে ভিন্ন মামলায় জড়ানো হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, যাঁরা সুন্দরবনে বাঘ-হরিণ শিকারের সঙ্গে জড়িত ক্যামেরা তারাই অপসারণ করতে পারে। অথচ প্রকৃত অপরাধীদের আটকে ব্যর্থ হয়ে বন বিভাগ নিরীহ জেলেদের মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসিয়ে দিয়েছে।

বুড়িগোয়ালিনী স্টেশন কর্মকর্তা মো. নূরুল আলম জানান, ১৪ জেলেকে আটক করা হয় অভয়ারণ্যে ঢুকে কাঁকড়া ও মাছ ধরার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাঁদের নৌকা তল্লাশি করে ভাঙা ক্যামেরার কিছু আলামত পাওয়া যায়। এ কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে ক্যামেরা চুরির সন্দেহভাজন হিসেবে মামলা দেওয়া হয়েছে।

সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক ইকবাল হোছাইন চৌধুরী বলেন, মঙ্গলবার ও বুধবার মোট ১৪ জন জেলেকে আটক করা হয়। তাঁদের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে মাছ ও কাঁকড়ার ধরার পাশাপাশি ক্যামেরা চুরির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। তাঁদের গতকাল আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টির তদন্ত চলছে।