Thank you for trying Sticky AMP!!

রাজশাহীর চারঘাট উপেজলার মুংলি গ্রামে আম পাড়া হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের দাবি, আচারের জন্য কাঁচা আম পাড়ছেন তাঁরা। গতকাল দুপুরে জেলার চারঘাট উপজলার মুংলি গ্রামে

রাজশাহীর আম পাকার আগেই পাড়ার তারিখ ঘোষণা, বিপত্তি দেখছেন ব্যবসায়ীরা

রাজশাহীতে আম পাড়ার জন্য এবার ‘আগাম ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার’ প্রকাশ করা হয়েছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। এতে তাঁরা বিপত্তি দেখছেন। কারণ, বাগানে এখনো আম পাকা শুরু হয়নি। পাকার আগেই পাড়ার অনুমতি পেয়ে অনেক অসাধু ব্যবসায়ী অপরিপক্ক আম বাজারজাত করতে পারে। এটি রাজাশাহীর আম সম্পর্কে বাজারে একটি নেতিবাচক ধারণা তৈরি করবে বলে মনে করছেন তাঁরা।

প্রশাসনের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, তারিখ ঘোষণার অর্থ হচ্ছে কেউ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হন। যাঁর গাছে আগাম আম পাকবে, তিনি যেন আমটা পেড়ে বিক্রি করতে পারেন। তারিখ ঘোষণা মানেই কাঁচা আমও পেড়ে বিকল্প উপায়ে পাকিয়ে বাজারজাত করা যাবে না।

রাজশাহী জেলা প্রশাসনের আম সংগ্রহ, পরিবহন, বিপণন ও বাজারজাত মনিটরিং–সংক্রান্ত সভায় ‘ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার’ প্রকাশ করা হয়। সূচি অনুযায়ী, ৪ মে থেকে গুটি আম বাজারজাতের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়েছে। আর ১৫ মে থেকে গোপালভোগ, লক্ষ্মণভোগ বা লখনা, ২০ মে রানিপছন্দ এবং ২৫ মে থেকে হিমসাগর বা ক্ষীরসাপাতি বাজারজাত করার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু এখনো গুটি আম সেভাবে পাকেনি।

Also Read: এবার বাঘার গুটি আম যাচ্ছে ইতালিতে

রাজশাহীর বড় আমের আড়ত পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর। এ বাজারে গতকাল রোববার আবদুল মান্নান নামের এক ব্যবসায়ী মৌসুমের প্রথম ৪০০ কেজি গুটি আম এনেছিলেন। তিনি এসেছিলেন চারঘাট উপজেলার শিবপুর গ্রাম থেকে। আবদুল মান্নান বললেন, এগুলো তাঁর একটি বড় গাছের আম। ঝড়ে চার মণ আম পড়ে গেছে। আর বাদুড়ে খেয়ে নষ্ট করছে। তা ছাড়া আরও কয়েক দিন পর তিনি আম পাড়তেন।

পুঠিয়ার বানেশ্বর বাজারে গতকাল আবদুল মান্নান নামের এক ব্যবসায়ী মৌসুমের প্রথম ৪০০ কেজি গুটি আম এনেছিলেন

বাজারে আনা আমের মধ্যে পাকা আম আছে কি না, দেখতে চাইলে তিনি তিনটি আম বের করে দেন। তাঁর দাবি, যাঁরা গাছের আম পেড়েছেন, তাঁরা এক ব্যাগ পাকা আম নিয়ে গেছেন। তবে তিনি মনে করেন, আরও এক সপ্তাহ পর থেকে আম পাকা শুরু হবে।

কাপাসিয়া গ্রাম থেকে আরও এক ব্যবসায়ী প্রায় ১০ মণ আম এনেছিলেন। তবে সেটা কাঁচা আম। আচার তৈরির জন্য।

গতকাল দুপুরে চারঘাটের মুংলী গ্রামে আম পাড়ার খবর পাওয়া যায়। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের ইমদাদুল হকের বাগানে আম পাড়া হচ্ছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী মিঠন আহাম্মেদ ২৫ হাজার টাকায় লখনা আমের বাগানটি কিনে নিয়েছেন। সেই আম এখনো পাকেনি। পাড়ার তারিখও এখনো আসেনি। মিঠন আহাম্মেদ বলেন, পাকা আম হিসেবে নয়, আচার তৈরির জন্য এই আম ঢাকায় পাঠাবেন।

Also Read: নওগাঁয় ২২ মের আগে আম সংগ্রহ করা যাবে না

বানেশ্বর বাজারের অনলাইন আম ব্যবসায়ী জুয়েল মামুন বলেন, কয়েক বছর ধরেই আমের মৌসুমে জেলা প্রশাসন আম নামানোর সময়সূচি প্রকাশ করে। এতে করে ভোক্তাদের মধ্যে একটি বিশ্বাসের জায়গা তৈরি হয়। এটিকে আমের জন্য ইতিবাচক দিক হিসেবেই দেখেন ব্যবসায়ীরা।

এবারের অবস্থা নিয়ে জুয়েল মামুন বলেন, জেলা প্রশাসনের বেঁধে সময় অনুযায়ী বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আম পরিপক্ক হয়নি। তবে ভোক্তাপর্যায় থেকে নতুন নতুন আম কেনার একটা চাহিদা থাকে। এ জন্য অনেকেই জেলা প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া তারিখ পেয়েই আম সরবরাহ করে থাকেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, সেই আম পাকে না, টক হয়, চুপসে যায়। তখন ভোক্তাপর্যায়ে ওই আমের প্রতি নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়। অনলাইন উদ্যোক্তাদের প্রতি আস্থা হারান গ্রাহক। এটি রাজশাহীর আম খাতের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি বয়ে আনবে।

এদিকে রাজশাহী শহরের সাগরপাড়া বাজারে গতকাল সকালে একজন ব্যবসায়ীর কাছে পাকা গোপালভোগ আম দেখা গেছে। কিন্তু গোপালভোগ আম পাকার সময় এখনো হয়নি। পাড়ার তারিখও ঘোষণা করা হয়নি।

বানেশ্বর বাজার বণিক সমিতির সভাপতি ওসমান আলীও বলেন, আর কয়েক দিন পর থেকে আম পাকা শুরু হবে।

Also Read: রাজশাহীর স্থানীয় বাজারে এখনো পাকা আম মিলছে না

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে রাজশাহী জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, তারিখ ঘোষণা করার অর্থ হলো, একজন চাষির যদি ১০ কেজি আমও পাকে, তিনি যেন সেই আম বিক্রি করতে পারেন। তাঁর যেন ক্ষতি না হয়। তারিখ ঘোষণার অর্থ এটা নয় যে ঘোষণা হয়েছে এখন কাঁচা-পাকা সব আম পেড়ে ফেলতে হবে। যাঁর গাছে পাকবে, তিনি যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হন, এ জন্যই তারিখটা ঘোষণা করা।

জেলা প্রশাসক আরও বলেন, গোপালভোগ আম এখন পাকার কথা নয়। বাজারে এই আম পাওয়া গেলে যাচাই করে সেই ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আশা করেন, নীতিগতভাবে ব্যবসায়ী সততার সঙ্গে পাকা আমই শুধু বাজারজাত করবেন। কেউ কাঁচা আম বিকল্প উপায়ে পাকিয়ে বাজারজাত করবেন না। এ রকম পাওয়া গেলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Also Read: চাঁপাইনবাবগঞ্জে আম পরিপক্ব হলেই বাজারে আসবে, থাকছে না সময়সূচি