Thank you for trying Sticky AMP!!

বাবা সাঈদ রিমনের সঙ্গে সহায়তার প্যাকেট প্রস্তুত করছে সাঈদ আবদুর রহমান ওহী

মানুষের সেবায় সাঈদ, সঙ্গে দুই বছরের ছেলে

‘এই শহরে অনেকেই আছেন খোলা আকাশটাই যেন তাঁদের মাথার ওপরের ছাদ। অনেক শ্রমজীবী আছেন, সাহ্‌রি-ইফতারি জোগাড় করা তাঁদের জন্য কষ্টকর। সরাসরি না দেখলে তা অনুমান করাও কঠিন। কারও সাহ্‌রিতে হয়তো একটু ডিমভাজিও জোটে না, ইফতারে পান না একটু ছোলা বা একটা পেঁয়াজু।’

রোজার সময় অভাবী মানুষের সাহ্‌রি-ইফতারি নিয়ে এভাবেই বলছিলেন বস্ত্র প্রকৌশলী সাঈদ রিমন। রমজান মাসজুড়ে তিনি ভাসমান মানুষ, রিকশাচালক, শ্রমিক, পথশিশুদের হাতে ইফতারি ও সাহ্‌রি তুলে দিয়েছেন। বেতনের টাকা ও সঞ্চয় দিয়ে ব্যক্তিগত উদ্যোগে তিনি এই সেবা শুরু করেন। পরে তাঁর এই উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন শুভাকাঙ্ক্ষীরা।

সাঈদ রিমন একটি কোম্পানিতে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। পাশাপাশি নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ে বস্ত্র প্রকৌশল বিভাগে শিক্ষকতা করছেন। প্রায় ১৫ বছর ধরে ব্যক্তি উদ্যোগে তিনি বিভিন্ন অপরাধমূলক ও মানবিক বিষয়গুলো তুলে ধরে মানুষকে সচেতন করছেন।

Also Read: কখনো তিনি ছিনতাইকারী, মাদকসেবী, কখনো বা হিজড়া

প্রতিবছরের মতো এবারও রমজান মাসের শুরু থেকেই ‘মানুষের কাজে, মানুষের পাশে’ স্লোগানকে সামনে রেখে হতদরিদ্র, অসহায়, অসচ্ছল মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন সাঈদ রিমন। প্রায় ছয় বছর আগে নিজ উদ্যোগে মাত্র ১০টি পরিবারের মধ্যে ইফতারসামগ্রী বিতরণ করেন তিনি। সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়ার পর এই উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হতে আগ্রহ প্রকাশ করেন তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষীরা। তিনি বিশ্বাস করেন, একযোগে একসঙ্গে চাইলেই সব সম্ভব।

সাঈদ রিমন শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, তিনি চেষ্টা করে যাচ্ছেন দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়াতে, সাহ্‌রি-ইফতারির ব্যবস্থা করতে। সবাই মিলে একযোগে এই চেষ্টা যদি চালিয়ে যাওয়া যেত, এমন অনেক হতদরিদ্র মানুষের কষ্ট লাঘব হয়ে যেত।

সাঈদ রিমন অনেককে সাহায্য করেছেন। দুই পা, এক হাত নেই আবদুল খালেকের। তাঁর স্ত্রীও ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত। মানুষের কাছে হাত পাতা ছাড়া যেন কোনো উপায় নেই তাঁর। প্রতিদিনের খাবার আর ওষুধ জোগাড় করা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। তাঁরা সহায়তা পেয়েছেন সাঈদ রিমনের কাছ থেকে। আবদুল খালেকের মতোই অসহায় জমিলা খাতুন (৮০)। এই বয়সে দুবেলা দুমুঠো খাবার জোগাড় করাই কঠিন তাঁর জন্য। তিনিও পেয়েছেন সাঈদ রিমনের সহায়তা। সাঈদ কখনো রান্না করে খিচুড়ি বা তেহারি বিতরণ করেন। কখনো আবার মুড়ি, ছোলা, চিড়া, চিনি, তেল, ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের প্যাকেট বিতরণ করেন এমন অসহায় মানুষের মধ্যে।

Also Read: রিমনের উদ্যোগ ‘গোশত টোকাই’

সাঈদ রিমন বলেন, ‘আমরা ইফতার কিংবা সাহ্‌রিতে কত ধরনের খাবার খেয়ে থাকি। যদি এভাবে ভাবতে পারি, একটু কম খেয়েও সেটা এই অসহায় মানুষের জন্য দেব। সেটা করলেও অনেক হতদরিদ্র মানুষের কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব হবে।’

২০২২ সালের ২৬ মার্চ সাঈদ রিমনের একমাত্র পুত্র সাঈদ আবদুর রহমান ওহী জন্মগ্রহণ করে। ‘মানবিক মানুষ হব’—এই স্লোগান লেখা কাপড়ে সাঈদ তাকে প্রথম জড়িয়ে নেন। নিজ সন্তানকে নিজের সব মানবিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করাচ্ছেন তিনি। বাবার পাশে দাঁড়িয়ে সে খাবারও তুলে দিতে পারে! সাঈদ রিমন বললেন, সবাই যাতে তাঁদের সন্তানকে মানবিক কাজে অংশগ্রহণ করান, সেই বার্তাই তিনি দিতে চাইছেন এর মাধ্যমে।

অসহায় এক শিশুর হাতে খাবার তুলে দিচ্ছে শিশু সাঈদ আবদুর রহমান ওহী। ওহীর বাবা সাঈদ রিমন প্রতিবছরের মতো এবারও রমজান মাসের শুরু থেকেই দরিদ্রদের মধ্যে খাবার বিতরণ করছেন

আকাশ নামে মানসিক প্রতিবন্ধী এক তরুণকে ঈদের পোশাক কিনে দিতে দোকানে যান সাঈদ রিমন। সেই অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করে তিনি বললেন, আকাশকে নিয়ে দোকানে ঢুকতেই সে বুঝতে পারে, তাকে নতুন পোশাক দেওয়া হচ্ছে। সেই সময় তার যে হাসি, তা অমূল্য।

Also Read: রিমনের ছবিতে সচেতনতার বার্তা

মানুষের মুখে হাসি ফোটাতেই সাঈদ রিমন তাঁর মানবিক কাজগুলো চালিয়ে যেতে চান। সাঈদ রিমন নানাভাবে অসহায় শিশুদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন। বরগুনায় ব্রেইল পদ্ধতিতে পবিত্র কোরআন শিখছেন, এমন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বেশ কিছু শিশুর পাশে দাঁড়িয়েছেন এবং তাদের ঈদের পোশাকের ব্যবস্থা করেছেন। ঢাকায় এক মাদ্রাসায় এতিম শিশুদের জন্য পাঞ্জাবি কিনে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। এসব কাজে যাঁরা তাঁকে সহায়তা করছেন, তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানালেন।

গত বছরের ঈদুল ফিতরের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে সাঈদ রিমন বললেন, ঈদের দিন সকালবেলা বাড়ির বাইরে বেরিয়ে দেখতে পান, এক শিশু তার মায়ের সঙ্গে ঘুমিয়ে আছে খোলা আকাশের নিচে। তাদের ঘুম থেকে তুলে পায়েস খাইয়ে দিলেন। মা-শিশুর চোখেমুখে হাসির ঝলক। সাঈদ রিমন বললেন, এর চেয়ে সুন্দর মুহূর্ত আর কী হতে পারে!

এভাবেই সাঈদ রিমন আজীবন মানুষের কাজে, মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যেতে চান। এটাকেই জীবনের ব্রত করে এগিয়ে যেতে চান।

Also Read: অসহায়দের সহায় সাঈদ