Thank you for trying Sticky AMP!!

বাংলাদেশে জ্বালানির দাম: ‘আমি হয়তো রাস্তায় ভিক্ষা করতে শুরু করব’

বাংলাদেশে সম্প্রতি জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিক্রিয়া-প্রভাব নিয়ে আজ রোববার একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি অনলাইন।

মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম ৯ বছর ধরে একটি পরিবহন কোম্পানিতে কাজ করছেন

বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ বাংলাদেশ মাত্র এক সপ্তাহ আগে জ্বালানি তেলের দাম ৫০ শতাংশের বেশি বাড়িয়েছে। সরকার এর দায় চাপিয়েছে ইউক্রেন যুদ্ধের ওপর।

প্রতিবাদে হাজারো মানুষ রাস্তায় নেমেছেন। এই দৃশ্য বলে দিচ্ছে, দক্ষিণ এশিয়ার আরেকটি দেশ বাড়তে থাকা আর্থিক সংকটে পড়েছে।

মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম শাকসবজি পরিবহনের জন্য যে ট্রাক ব্যবহার করেন, সেটার পেট্রল নিতে পাম্পে অপেক্ষা করছিলেন। এ সময় তিনি বললেন, ভয় পাচ্ছেন যে, তাঁকে শিগগিরই ভিক্ষা করতে হয় কি না।

বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের দাম অপ্রত্যাশিতভাবে বেড়েছে। ফলে প্রতি লিটার পেট্রলের দাম ৮৬ টাকা থেকে বেড়ে ১৩০ টাকা হয়েছে। ডিজেল-কেরোসিনের দামও ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছে।

Also Read: জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি উত্তাপ ছড়াচ্ছে কাঁচাবাজারেও

নুরুল ৯ বছর ধরে একটি পরিবহন কোম্পানিতে কাজ করছেন। অত্যধিক মূল্যবৃদ্ধির ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র জোগাতে তাঁকে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

উত্তরের শহর দিনাজপুরে বসবাসকারী ৩৫ বছর বয়সী এই ব্যক্তি তাঁর নিজ এলাকা থেকে তাজা পণ্য নিয়ে রাজধানী ঢাকায় আসেন। তাঁর দুটি ছোট সন্তান আছে। মা-বাবাকে তাঁর দেখভাল করতে হয়। কিন্তু তিনি বলেন, জ্বালানির দাম বাড়ার কারণে তাঁর মালিকেরা এখন তাঁকে পুরো বেতন দিতে পারেন না।

নুরুল বলেন, ‘বাজারে গেলে আমি আমার পরিবারের জন্য পর্যাপ্ত খাবার কিনতে পারি না। জ্বালানির দাম যদি এভাবে বাড়তে থাকে, আমি আমার মা-বাবার দেখাশোনা করতে পারব না বা আমার সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে পারব না।’

নুরুল আরও বলেন, ‘আমি যদি আমার চাকরি হারাই, তাহলে আমাকে রাস্তায় ভিক্ষা করা শুরু করতে হতে পারে।’

১৬ কোটি ৮০ লাখের বেশি জনসংখ্যার দেশটিতে অগণিত মানুষ একই রকম দুর্দশার মুখোমুখি হচ্ছে।

ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পরিপ্রেক্ষিতে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও তেলের বৈশ্বিক মূল্যবৃদ্ধির প্রকোপে পড়েছে।

বাংলাদেশের জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ‘আমরা জানি, দাম অনেক বেড়েছে। কিন্তু বিদেশে জ্বালানির দাম বাড়লে আমরা কী করতে পারি?’

Also Read: ব্যয় কমিয়ে টিকে থাকার চেষ্টা

সরকারের অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার অভিযোগ অস্বীকার করে নসরুল হামিদ বলেন, তাঁর প্রশাসন অতীতে মূল্যবৃদ্ধি এড়াতে ভর্তুকি দিয়েছে। কিন্তু এখন মূল্যবৃদ্ধি অনিবার্য ছিল।

নসরুল হামিদ বলেন, ‘যদি বিশ্বব্যাপী দাম একটি নির্দিষ্ট পয়েন্টে নেমে আসে, আমরা কিছু সমন্বয় করার চেষ্টা করব।’

গত সপ্তাহে মূল্যবৃদ্ধির খবর ঘোষণার পর দেশজুড়ে পেট্রল স্টেশনগুলোতে হাজারো মানুষ বিক্ষোভ করেন। তাঁরা দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত বাতিলের আহ্বান জানান। এ দৃশ্য শ্রীলঙ্কার কথা মনে করিয়ে দেয়।

বাংলাদেশে বিক্ষিপ্তভাবে বিক্ষোভ হয়েছে। কিন্তু ক্ষোভ ও অসন্তোষ বাড়ছে।

নসরুল হামিদ মনে করেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমলেও তাঁর দেশ শ্রীলঙ্কার পরিণতি এড়াবে।

Also Read: দ্রব্যমূল্য বেড়েছে আরেক দফা

বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল হিসেবে প্রশংসিত হয়েছিল। কিন্তু শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের পর দক্ষিণ এশিয়ার তৃতীয় দেশ হিসেবে গত জুলাই মাসে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কাছে ঋণ চেয়েছে দেশটি।

কিন্তু মোসাম্মৎ জাকিয়া সুলতানার জন্য তা অর্থহীন। তিনি তাঁর অসুস্থ সন্তানকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যেতে কোনোমতে বাসভাড়া দিতে পারেন। ক্রমবর্ধমান জ্বালানি খরচের কারণে গণপরিবহনের ভাড়া বাড়ায় তিনি কেবল অপরিহার্য যাতায়াতটুকু করছেন।

হাসপাতালে যাওয়ার পথে বাসে তিনি বিবিসির সঙ্গে কথা বলেন। পাশে ছিল তাঁর কিশোরী মেয়ে। তিনি জানান, খাদ্যের বাড়তি দাম ইতিমধ্যে তাঁকে কঠিন অবস্থায় ফেলেছে।

তিনি বলেন, ‘শুধু বাসের ভাড়াই বাড়েনি, বাজারে সবকিছুর দামই বেড়েছে। ফলে আমার সংসারের খরচ চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘শুধু বাসের ভাড়া নয়, রিকশা ও অন্যান্য পরিবহনের ভাড়াও বেড়েছে। তাই বাড়ি থেকে বের হওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে।’

Also Read: আওয়ামী লীগ অস্বস্তিতে, পাশে পাচ্ছে না মিত্রদের

দিনাজপুরের আরও প্রত্যন্ত অঞ্চলের গল্প একই রকম। শিউলি হাজদা ধান উৎপাদনকারী এলাকা ফুলবাড়ীর ধানখেতে কাজ করেন। শিউলি বলেন, তিনি যে খাদ্য ফলান, তা কেনার সামর্থ্য তাঁর প্রায় নেই। হঠাৎ করে জ্বালানির দাম বাড়ার কারণে চাষাবাদের খরচ অনেক বেড়ে গেছে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের মজুরিতে টায়েটুয়ে চলতে পারি। সবকিছুর এত দাম যে, আমরা আমাদের বাচ্চাদের খাওয়ানোর জন্য যথেষ্ট খাবার কিনতে পারি না।’

বাংলাদেশে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় শিউলির মতো মানুষেরা বলছেন, তাঁদের উপার্জন মূল্যহীন হয়ে পড়ছে।

শিউলি বলেন, ‘সরকার যদি দ্রুত জ্বালানির দাম না কমায়, তাহলে আমরা অনাহারে মরব।’

Also Read: মধ্যবিত্তের টিকে থাকার নতুন লড়াই শুরু