Thank you for trying Sticky AMP!!

খাদ্য আমদানি: ভারতে বিধিনিষেধ, বেশি দাম চায় রাশিয়া ও মিয়ানমার

  • ভারতের গম রপ্তানি বন্ধ। চাল রপ্তানিতে শুক্রবার ২০% শুল্ক বসিয়েছে দেশটি।

  • সরকার সাত লাখ টন গম ও পাঁচ লাখ টন চাল আমদানি করতে চায়।

চাল ও গম

বিশ্ববাজার থেকে কম দামে চাল ও গম কিনতে পারছে না সরকার। ভারত চাল রপ্তানিতে শুল্ক বাড়িয়েছে। মিয়ানমার চাল আমদানিতে বেশি দাম চাইছে। দাম বেড়ে গেছে থাইল্যান্ডেও। আর গম আমদানিতে বেশি দাম চাইছে রাশিয়া।

সরকারের সঙ্গে সমঝোতা স্মারকের (এমওইউ) আওতায় রাশিয়া ও মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় দুটি সংস্থার সঙ্গে চাল ও গম আমদানির বিষয়ে সম্প্রতি আলোচনায় বসেছিল বাংলাদেশের খাদ্য মন্ত্রণালয়। এতে রাশিয়ার পক্ষ থেকে গম ও মিয়ানমারের পক্ষ থেকে চালের দাম অনেকটা বেশি চাওয়া হয়। এ কারণে দুটি বৈঠকই কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়া শেষ হয়।

সরকার চলতি বছরের জন্য সাত লাখ টন গম ও পাঁচ লাখ টন চাল আমদানি করতে চায়। বেসরকারি খাতে মাঝেমধ্যে চাল আমদানি হয়। গম আমদানি হয় নিয়মিত। কোনো কোনো দেশের বিধিনিষেধ ও দাম বেশি চাওয়ার কারণে খাদ্যের বিশ্ববাজার পরিস্থিতি এখন অনুকূল নয়। তবে বাংলাদেশ সরকারের হাতে এখনো খাদ্যের ভালো মজুত আছে।

রাশিয়া ও মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় দুটি সংস্থার সঙ্গে চাল ও গম কেনার আলোচনা সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ।

খাদ্যসচিব মো. ইসমাইল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের গুদামে যথেষ্ট পরিমাণে চাল আছে। আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত চাল নিয়ে আমাদের কোনো চিন্তা নেই।’ তিনি বলেন, মিয়ানমারে আগামী অক্টোবরে নতুন চাল উঠবে। তখন দাম কমতে পারে।

খাদ্যসচিব আরও বলেন, ‘রাশিয়া গমের যে দাম চাইছে, আমরা আন্তর্জাতিক দরপত্রে তার চেয়ে কম দাম পাচ্ছি। যে কারণে বিকল্প হিসেবে আমরা দরপত্রের মাধ্যমে চাল-গম কেনার কথা চিন্তা করছি।’

ভারত ও মিয়ানমারের বিধিনিষেধ

বাংলাদেশে ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩ কোটি ৮০ লাখ টন চাল উৎপাদিত হয়েছে। সরকারি হিসাবে, চাল উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। কিন্তু প্রতিবছরই সরকারি ও বেসরকারিভাবে কিছু কিছু চাল আমদানি হয়। আর গমের চাহিদার বড় অংশই আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা হয়।

২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকারি ও বেসরকারি খাতে ১০ লাখ ৫৬ হাজার টন চাল ও প্রায় ৩৯ লাখ টন গম আমদানি হয়েছে।

চাল ও গমের বড় উৎস ছিল ভারত। নিজেদের বাজার সামলাতে গত মে মাসে ভারত গম রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। গম মাস জুলাইয়ের মাঝামাঝিতে দেশটি আতপ চাল (নন-বাসমতি হোয়াইট রাইস) রপ্তানি নিষিদ্ধ করে। গত শুক্রবার ভারতের পক্ষ থেকে সেদ্ধ চাল রপ্তানিতে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়, যা কার্যকর থাকবে ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত।

রাশিয়া গমের যে দাম চাইছে, আমরা আন্তর্জাতিক দরপত্রে তার চেয়ে কম দাম পাচ্ছি।
মো. ইসমাইল হোসেন, খাদ্যসচিব

আট মাস আগে নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত বাণিজ্যমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি আট ধরনের নিত্যপণ্যে কোটা চেয়ে ভারতের কাছে প্রস্তাব দেন। তখন ভারতের শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়ালের পক্ষ থেকে লিখিত প্রস্তাবের পরামর্শ দিয়ে এ বিষয়ে সম্মতিও জানানো হয়। বাংলাদেশ বিষয়টি লিখিতভাবে দিয়েছিল। ভারতের জয়পুরে জি-২০ বাণিজ্য ও বিনিয়োগবিষয়ক বৈঠকের এক ফাঁকে গত শুক্রবার অনুষ্ঠিত দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় ভারতের পীযূষ গয়ালকে পণ্যগুলো সরবরাহের প্রক্রিয়া দ্রুত করার অনুরোধ জানান টিপু মুনশি।

Also Read: খাদ্য আমদানি কমাতে পলিশ করা চাল না খাওয়ার পরামর্শ খাদ্যমন্ত্রীর

এদিকে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক খবরে শুক্রবার বলা হয়, অভ্যন্তরীণ বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাল রপ্তানিতে সাময়িক বিধিনিষেধ আরোপের পরিকল্পনা করছে মিয়ানমার। শিগগিরই যা ঘোষণা করা হতে পারে।

কৃষ্ণসাগর হয়ে ইউক্রেনের শস্য রপ্তানির জন্য জাতিসংঘ-সমর্থিত একটি চুক্তি থেকে গত মাস জুলাইয়ে বেরিয়ে যায় রাশিয়া। এর পাশাপাশি বিভিন্ন দেশ খাদ্য রপ্তানিতে কড়াকড়ি আরোপ করায় আমদানিকারক দেশগুলো বিপাকে পড়েছে।

রয়টার্সের তথ্য নিয়ে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিটিসি) তৈরি করা ২৪ আগস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, থাইল্যান্ডে ৫ শতাংশ ভাঙা আপত চালের দাম উঠেছে প্রতি টন ৬০৯ মার্কিন ডলারে, যা এক মাস আগের তুলনায় ১৪ শতাংশ বেশি। এক বছর আগের তুলনায় এখনকার দর বেশি প্রায় ৩৮ শতাংশ। অবশ্য এক মাসে যুক্তরাষ্ট্রের গমের দাম ১৮ শতাংশ কমে প্রতি টনে ২৭৩ ডলারে নেমেছে।

Also Read: চাল ও গম আমদানিতে শর্ত শিথিলের নির্দেশ 

বাংলাদেশ সাধারণত ভারত, ইউক্রেন ও রাশিয়া থেকে গম আমদানি করে। রয়টার্স ২১ আগস্ট এক প্রতিবেদনে জানায়, রাশিয়ায় ভালো ফলনের পূর্বাভাসে দেশটিতে গমের দাম কমছে। সেপ্টেম্বরে সরবরাহের ক্ষেত্রে ১২ শতাংশ আমিষসমৃদ্ধ গমের জাহাজভাড়া ছাড়া (এফওবি) প্রতি টনে দর নেমেছে ২৪৫ ডলারে।

কত দাম চায় রাশিয়া

মিয়ানমার সরকারের চাল রপ্তানিকারক সংস্থা মিয়ানমার রাইস ফেডারেশনের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে গত মঙ্গলবার বৈঠক করে খাদ্য মন্ত্রণালয়। তারা প্রতি টন চালের দাম ৬০০ মার্কিন ডলারের বেশি চায়। খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তাদের বলা হয়েছে, এত বেশি দামে চাল কেনা সম্ভব নয়।

রাশিয়া থেকে ৫ লাখ টন গম আমদানির বিষয়ে ১৬ আগস্ট বৈঠক হয় দেশটির রাষ্ট্রীয় সংস্থা প্রডিনটর্গ ও তাদের প্রতিনিধি বাংলাদেশের ন্যাশনাল গ্রুপের কর্মকর্তাদের সঙ্গে। খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বৈঠকে প্রতি টন গমের দাম ৩৩০ ডলার করে চায় রাশিয়া। কিন্তু বাংলাদেশের পক্ষ থেকে গমের দাম আন্তর্জাতিক বাজারমূল্যের চেয়ে বেশি বলে মন্তব্য করা হয়। রাশিয়ার সংস্থা দাম কমাতে রাজি হয়নি। ফলে বৈঠক সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়।

খাদ্য অধিদপ্তর চলতি মাসের শুরুতেই ৫০ হাজার টন করে এক লাখ টন গম আমদানির দুটি আন্তর্জাতিক দরপত্র ডাকে। সেখানে একটিতে ২৯৩ ডলার ও আরেকটিতে ৩০৪ ডলার দর পাওয়া যায়।

রাশিয়ার সংস্থা প্রডিনটর্গ গত বছর বাংলাদেশের কাছে গম রপ্তানি করেছিল। তখনো তারা বাজারমূল্যের চেয়ে টনপ্রতি প্রায় ৫০ ডলার বেশি নিয়েছিল। এ নিয়ে গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোতে ‘সরকার রাশিয়ার গম কিনছে বেশি দামে’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

দেশে দাম কত

খাদ্য অধিদপ্তরের হাতে এখন ১৮ লাখ টনের বেশি চাল ও গম মজুত আছে। এই চাল ও গম সরকার সাধারণ রেশন, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি এবং খোলা বাজারে বিক্রি (ওএমএস) কর্মসূচিতে ব্যয় করে। বাজারে কেনাবেচা হয় দেশে উৎপাদিত ও বেসরকারিভাবে আমদানি করা চাল ও গম।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, ঢাকার খুচরা বাজারে এখন এক কেজি মোটা চালের দাম ৪৮ থেকে ৫০ টাকা, যা এক বছর আগের তুলনায় ১৩ শতাংশ কম। খোলা আটার দামও মোটা চালের সমান। দেশের বাজারে দাম এখনো কম থাকলেও বিশ্ববাজার পরিস্থিতি ভালো নয়।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক ও অর্থনীতিবিদ কে এ এস মুরশিদ প্রথম আলোকে বলেন, সাধারণত সরকারের সঙ্গে সরকারের চুক্তিতে আমদানির সময় দাম কম হয়। রাশিয়া ও মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় সংস্থা বেশি দাম চাওয়ার বিষয়টি স্বাভাবিক নয়। তিনি বলেন, খাদ্যের দাম নিয়ে পরিস্থিতি আগামী দিনগুলোতে কোন দিকে যাবে, তা ভালোমতো বোঝা দরকার। সরকারের উচিত খাদ্যের বিশ্ববাজার পরিস্থিতি যাঁরা ভালো বোঝেন, এমন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করা। তাঁদের মতামতের ভিত্তিতে বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া।