Thank you for trying Sticky AMP!!

পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে মূলধারায় আনতে বাধা রয়েছে

‘এসডিজি প্রচারাভিযান-২০২২: যুব ও নারীদের বলিষ্ঠ প্রতিনিধিত্বের প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক প্রচারাভিযানের জাতীয় পর্বের প্যানেল আলোচনায় বক্তারা। আজ সোমবার, কেআইবি মিলনায়তন, ফার্মগেট, ঢাকা

তৃতীয় লিঙ্গ, দলিত, চা–শ্রমিক, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মতো সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে মূলধারায় যুক্ত করার ক্ষেত্রে এখনো বাধা রয়েছে। নারীর কর্মসংস্থান নিয়ে সমাজে এখনো মনস্তাত্ত্বিক বৈষম্য রয়েছে। কাউকে পেছনে ফেলে নয়—টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার এ দর্শন বাস্তবায়ন করতে হলে এসব বাধা দূর করা জরুরি।

‘এসডিজি প্রচারাভিযান-২০২২: যুব ও নারীদের বলিষ্ঠ প্রতিনিধিত্বের প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক প্রচারাভিযানের জাতীয় পর্বের আলোচনায় অতিথিরা এসব কথা বলেন।

ইউএনডিপি–ইউএনইপি পোভার্টি–এনভায়রনমেন্ট অ্যাকশনের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রথম আলো ও প্রথম আলো বন্ধুসভা আজ সোমবার রাজধানীর খামারবাড়িতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

Also Read: তরুণ জনগোষ্ঠীর সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে

অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচনা পর্ব সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হক। তিনি বলেন, আজকের পৃথিবী ন্যায়ভিত্তিক নয়। কাগুজে প্রতিষ্ঠান হাজার কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যায়, কুড়িগ্রামের চরের পরিবার না খেয়ে থাকে। বাংলাদেশ বিশ্বে কোটিপতি উৎপাদনে শীর্ষ হয়েছে, এটি খুব ভালো কথা নয়। সমাজে বৈষম্য বাড়ছে।

কর্মক্ষেত্রে নারীর চাহিদা সঠিকভাবে পূরণ হচ্ছে না বলে মনে করেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক তানিয়া হক। তিনি বলেন, দক্ষতার অভাব, কর্মক্ষেত্রে নিপীড়ন ও মজুরিবিহীন সেবাকাজ—এ তিন বিষয় নারীর কর্মসংস্থানের বড় বাধা। এখনো দেশের ৭৫ শতাংশ তরুণ মনে করেন, স্বামী আয় করলে স্ত্রীর কাজ করার দরকার নেই। এমন মানসিকতা রেখে সমস্যা সমাধান করা অসম্ভব। সম–অধিকারের পাশাপাশি সমদায়িত্বের কথাও বলতে হবে।

‘এসডিজি প্রচারাভিযান-২০২২: যুব ও নারীদের বলিষ্ঠ প্রতিনিধিত্বের প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক প্রচারাভিযানের জাতীয় পর্বের অনুষ্ঠানে উপস্থিত দর্শকদের একাংশ। আজ সোমবার, কেআইবি মিলনায়তন, ফার্মগেট, ঢাকা

মনস্তাত্ত্বিক বৈষম্য দূর করা না গেলে এসডিজির মাধ্যমে বৈষম্য দূর করা সম্ভব হবে না বলে মনে করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা। তিনি বলেন, ঐতিহাসিকভাবে বিভিন্ন চিন্তা–চেতনা ও সমাজের নিয়মে নারীদের প্রতি বৈষম্য জিইয়ে রাখা হয়েছে। এসডিজি নিয়ে বড় বড় কথা হয়, কিন্তু চিন্তা-চেতনা বদলের আলোচনা কম।

নারীর জন্য শোভন কাজ নিশ্চিত করা কোনো একক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব নয় বলে মনে করেন ইউএনডিপি বাংলাদেশের সিনিয়র গভর্ন্যান্স স্পেশালিস্ট শীলা তাসনীম হক। তিনি বলেন, শোভন কাজের ক্ষেত্রে দক্ষতা ও যোগ্যতার সমন্বয় হওয়া প্রয়োজন। আগামী সাড়ে ৩ বছরে ১০ লাখ কর্মসংস্থান তৈরি করতে উদ্যোগ নিয়েছে ইউএনডিপি। এখানে নারীদের অগ্রাধিকার থাকবে।

কার্বন নিঃসরণ কম করলেও স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তনের দায়ভার নিতে হচ্ছে বলে মনে করেন চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন খান।

তিনি বলেন, পরিবেশবিষয়ক আন্দোলন স্বল্পোন্নত দেশগুলো থেকে শুরু হওয়া দরকার। বন উজাড় করে ভবন ও বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে। সব উন্নয়নদর্শন হতে হবে প্রকৃতিকে রক্ষা করে। শুধু মুখে মুখে টেকসই উন্নয়ন বলতে থাকলে হবে না; এটি বিশ্বাস করি না, সেটা জরুরি।

পিছিয়ে রাখা হয়েছে

মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে তৃতীয় লিঙ্গের রোহিণী বলেন, ‘আমরা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী নই। আমাদের পিছিয়ে রাখা হয়েছে। আর পাঁচজনের মতো সুযোগ পেলে আমরাও দেশকে গর্বিত করতে পারব।’

‘এসডিজি প্রচারাভিযান-২০২২: যুব ও নারীদের বলিষ্ঠ প্রতিনিধিত্বের প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক প্রচারাভিযানের জাতীয় পর্বের প্যানেল আলোচনায় প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হক। আজ সোমবার, কেআইবি মিলনায়তন, ফার্মগেট, ঢাকা

লাক্কাতুরা চা–বাগানের চা–শ্রমিকের সন্তান মিতা গোয়ালা বলেন, চা–শ্রমিকের সন্তানেরা এখনো লেখাপড়ার পর্যাপ্ত সুযোগ পায় না। সাধারণের চেয়ে চা–বাগানের জীবনমান কেন খারাপ থাকবে?

বান্দরবান থেকে আসা প্রীতম তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, ‘আদিবাসীদের এখনো ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী বা অন্য নামে ডাকা হয়। সরকার এখনো কেন আদিবাসীদের স্বীকৃতি দেবে না?’

বিতর্কে চ্যাম্পিয়ন জাহাঙ্গীরনগর

অনুষ্ঠানে ‘যুব ও নারীদের বলিষ্ঠ অংশগ্রহণই টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের প্রধান উপায়’ শীর্ষক বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এতে চ্যাম্পিয়ন হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতার্কিক দল। রানার্সআপ হয় বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়।