দেশের জনসংখ্যার বড় অংশ কর্মক্ষম শ্রেণির তরুণ। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে এই জনগোষ্ঠীর সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। তরুণ জনগোষ্ঠীকে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে ও তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে সরকারি-বেসরকারি অংশীজনদের একত্রে কাজ করতে হবে।
‘এসডিজি প্রচারাভিযান-২০২২: যুব ও নারীদের বলিষ্ঠ প্রতিনিধিত্বের প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক প্রচারাভিযানের জাতীয় পর্বের অতিথিরা এসব কথা বলেন। ইউএনডিপি–ইউএনইপি পোভার্টি–এনভায়রনমেন্ট অ্যাকশনের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রথম আলো ও প্রথম আলো বন্ধুসভা আজ সোমবার রাজধানীর খামারবাড়িতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটশন মিলনায়তনে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে ৬৪ জেলা থেকে ৪ শতাধিক তরুণ প্রতিনিধি অংশ নেন।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, বাংলাদেশের জনসংখ্যার বর্তমান গড় বয়স ৩৮ বছর। কর্মক্ষম এই জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগিয়ে ‘জনসংখ্যার বোনাস’–এর সুযোগ নিতে হবে। ২০৩৬ সাল থেকে এই বোনাস কমতে থাকবে। সরকার ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাতেই তরুণদের কর্মসংস্থানকে গুরুত্ব দিয়েছে। মানবসম্পদ তৈরিতে জোর দেওয়া হয়েছে।
সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ভালো করেছিল উল্লেখ করে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, এমডিজির ধারাবাহিকতায় টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) এসেছে। এসডিজি একটি সামাজিক আন্দোলন। এই এসডিজি বাস্তবায়নে যুবসমাজ সম্ভাবনাময় শক্তি। এসডিজি বাস্তবায়ন করতে পারলে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বাড়বে।
অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি গুইন লুইস বলেন, কর্মসংস্থানে বাংলাদেশ পিছিয়ে। শোভন কর্মসংস্থানের অভাব রয়েছে। দক্ষ জনশক্তি হিসেবে তরুণদের কাজে লাগাতে হবে। তরুণদের উন্নয়নের ধারায় যুক্ত করতে সরকারি-বেসরকারি অংশীজনদের সঙ্গে কাজ করছে ইউএনডিপি। সমাজের সব শ্রেণির অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করার মাধ্যমেই শুধু উন্নয়নকে টেকসই করা সম্ভব।
দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে সমন্বিতভাবে কাজ করার বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেন জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) বাংলাদেশের ডেপুটি আবাসিক প্রতিনিধি ভ্যান নুয়েন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে তরুণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বেশি। দেশের তরুণদের একটি বড় অংশ, বিশেষ করে মেয়েরা কর্মসংস্থানের বাইরে। সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় তরুণ নেতৃত্ব ও তরুণদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে।
সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপাজয়ী বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের সদস্য সাজেদা সাথী অংশ নেন অনুষ্ঠানে। তিনি বলেন, শুরুতে গ্রামের মানুষ মেয়েদের ফুটবল খেলা নিয়ে নেতিবাচক কথা বলতেন। এখন পরিস্থিতি বদলে গেছে। মেয়েদের সুযোগ দিতে হবে।
উন্নয়নের ধারায় নারীকে যুক্ত করা না গেলে এসডিজি অর্জন কষ্টসাধ্য হবে বলে মনে করেন ইউএনডিপির প্রধান কারিগরি উপদেষ্টা ফকরুল আহসান। তিনি বলেন, এসডিজি প্রচারাভিযানে নারী ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি মানেই পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীও ভালো আছে, এটা ভাবলে ভুল হবে।
প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, গত কয়েক বছরে দেশের কৃষি, শিক্ষা, শিল্প, বাণিজ্য খাতে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। তবে পরিবেশদূষণ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বৈষম্য, বেকারত্বের মতো বেশ কিছু সমস্যাও রয়ে গেছে। সুশাসনের সমস্যা রয়েছে, দুর্নীতি আছে, রাজনীতিতেও সংকট রয়েছে। ধীরে ধীরে এসব ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনতে হবে। আর এ ক্ষেত্রে তরুণদের অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে।
প্রথম আলো সব ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জয় দেখতে চায় উল্লেখ করে মতিউর রহমান বলেন, প্রথম আলো মানুষের সফলতার গল্প তুলে ধরতে চায়। ব্যক্তি, গোষ্ঠী, প্রতিষ্ঠান, সরকার—যার সাফল্যই হোক, প্রথম আলো তা প্রচার করতে চায়। এসডিজি বাস্তবায়নে প্রচারাভিযানের মতো কর্মকাণ্ডে আরও বেশি সম্পৃক্ত হবে প্রথম আলো।
অনুষ্ঠানে এসডিজি নিয়ে বন্ধুসভার কার্যক্রম তুলে ধরেন বন্ধুসভার জাতীয় পর্ষদের সভাপতি উত্তম রায়। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ইউএনডিপির এসসিফোরএসডিজি প্রকল্প সহযোগী ফারহানা রাজ্জাক ও বন্ধুসভার জাতীয় পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক জাফর সাদিক।
‘এসডিজি প্রচারাভিযান-২০২২: যুব ও নারীদের বলিষ্ঠ প্রতিনিধিত্বের প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক প্রচারাভিযানের অংশ হিসেবে বিভাগীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানগুলো হয়েছে গত ১৯ নভেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মিলনায়তনে, ২৬ নভেম্বর সিলেট জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে ও ২৯ নভেম্বর চট্টগ্রামে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে। প্রথম আলো বন্ধুসভার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও এবিসি রেডিওতেও চলছে নানামুখী প্রচারণা। বিভাগীয় পর্যায়ের আয়োজনগুলোয় ছিল এসডিজি–বিষয়ক র্যালি, এসডিজি নিয়ে বারোয়ারি বিতর্ক, শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, তরুণদের মুক্ত আলোচনা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে আলোচনা সভা।
সব অনুষ্ঠানেই উপস্থিত ছিলেন সুবিধাবঞ্চিত ব্যক্তি, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর যুব প্রতিনিধি, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এবং প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা প্রায় ১ হাজার ২০০ যুব ও যুব নারী। রাজশাহীতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ১৫টি বন্ধুসভা থেকে ৩০৫ জন প্রতিনিধি, সিলেটে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ১০টি বন্ধুসভা থেকে ৩১০ জন প্রতিনিধি এবং সব শেষে চট্টগ্রামে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ২০টি বন্ধুসভা থেকে ৩০৯ জন প্রতিনিধি অংশ নেন। এ ছাড়া চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় প্রতিটি অনুষ্ঠানেই ৭০ শিশু ছবি এঁকেছে। বন্ধুসভা জাতীয় পর্ষদের তত্ত্বাবধানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভা, সিলেট বন্ধুসভা ও চট্টগ্রাম বন্ধুসভা প্রচারাভিযানগুলো বাস্তবায়ন করে।