Thank you for trying Sticky AMP!!

বিরল সুবিধায় ধার পেল আরও ৪ শরিয়াহ ব্যাংক

ব্যাংক ৫টিকে দেওয়া তারল্যসুবিধার পরিমাণ ছিল ১৪,৭৯০ কোটি টাকা। এতে সুদহার ছিল ৮.৭৫%।

তারল্যসংকটে পড়া আরও চার শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংককে বিরল সুবিধায় টাকা ধার দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মাধ্যমে ব্যাংক চারটিকে গত বছরের শেষ কার্যদিবসে প্রকৃত চিত্রের পরিবর্তে আর্থিক সূচকগুলো তুলনামূলক ভালো দেখানোর সুযোগ দেওয়া হয়। এ জন্য ৬ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা ধার দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংক চারটি হলো ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড (এসআইবিএল) ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক।

আর একই গ্রুপভুক্ত ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড পেয়েছে আট হাজার কোটি টাকার তারল্যসুবিধা। ফলে ব্যাংক ৫টিকে দেওয়া তারল্যসুবিধার পরিমাণ ছিল ১৪ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা। এতে সুদহার ছিল ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ। যদিও শরিয়াহ ব্যাংকগুলোর নির্দিষ্ট সুদে টাকা ধার নেওয়ার সুযোগ নেই।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোর কাছে টাকা ধার নেওয়ার জন্য বন্ড ছিল না। এ জন্য ঋণের সর্বশেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে টাকা ধার দেওয়া হয়েছে। তাদের আমানত বাড়িয়ে তারল্যসংকট মেটানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

Also Read: তারল্যঘাটতিতে ইসলামী ব্যাংকসহ ৫ ব্যাংক

সুবিধাটি বিরল কেন

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই সুবিধা বিরল। কারণ, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা ধার নিতে হলে ব্যাংকগুলোকে বিল, বন্ড লিয়েন রাখতে হয়। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংক টাকা ধার দিতে পারে না। টাকা ধার নিতে এই পাঁচ ব্যাংকের কাছে ব্যবহারযোগ্য সুকুক বন্ড নেই। এ জন্য ‘প্রমিসারি ডিমান্ড নোট’ প্রদান করে টাকা ধার করতে হয় ব্যাংক পাঁচটিকে। এর মাধ্যমে যেকোনো উপায়ে টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় ব্যাংকগুলো।

আর বাংলাদেশ ব্যাংক এক দিনের জন্য এই টাকা ধার দেয়, যার মাধ্যমে ব্যাংক পাঁচটি গত ২৯ ডিসেম্বর বছরের শেষ কার্যদিবসে চাহিদা মোতাবেক কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অর্থ জমা রাখতে (সিআরআর) সক্ষম হয়। বছরের হিসাব ভালো দেখানোর সুযোগ পায় ব্যাংকটি। এর ফলে দেশি–বিদেশি রেটিং এজেন্সি, গ্রাহক ও সংশ্লিষ্টদের কাছে ‘ভুল তথ্য’ প্রকাশের সুযোগ দেওয়া হয়।

Also Read: এবার বন্ড ছেড়ে টাকা তুলবে ইসলামী ব্যাংক ও এসআইবিএল

তারল্যসংকট কেন

ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, করপোরেট ও সাধারণ গ্রাহকের আমানত কমে যাওয়ায় গত নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে দায়সহ আমানতের বিপরীতে বেশির ভাগ দিন সিআরআর ও বিধি বন্ধ জমা (এসএলআর) রাখা সম্ভব হয়নি।

বছরভিত্তিক হিসাবেও যাতে সিআরআর ঘাটতি না থাকে, এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরামর্শেই বিরল এই সুবিধায় টাকা ধার নেওয়া হয়। পরদিনই পুরো টাকা ফেরত দেওয়া হয়। তখন আবারও সিআরআর ঘাটতি শুরু হয়েছে।

ব্যাংকগুলোর তথ্য অনুযায়ী, ইসলামী ব্যাংকের ঋণ অনিয়মের বিষয়টি আলোচনায় এলে আমানত কমতে শুরু করে। এর প্রভাব পড়ে একই গ্রুপভুক্ত অন্য ইসলামি ধারার ব্যাংকেও।

Also Read: নতুন করে ১,২৫০ কোটি টাকা ধার নিল শরিয়াহভিত্তিক দুই ব্যাংক

কাকে কত সুবিধা

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক গত ২৯ নভেম্বর এক চিঠিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানায়, গ্রাহকদের অতিরিক্ত আমানত উত্তোলনের কারণে সিআরআর ও এসএলআর ঘাটতি হয়েছে। এ জন্য ব্যাংকটি ১ দিনের জন্য ৩ হাজার ১২৫ কোটি টাকা ধার চেয়ে আবেদন করে। এই ব্যাংক নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসের ৩৪ দিন চাহিদা অনুযায়ী সিআরআর রাখতে ব্যর্থ হয়।

২৮ ডিসেম্বর ঘাটতি ছিল ১ হাজার ৫০৮ কোটি টাকা। বছরের আর্থিক বিবরণীতে সিআরআর ও এসএলআর ঘাটতির তথ্য প্রকাশ হলে আমানতকারীদের আস্থার সংকট আরও ঘনীভূত হতে পারে, এই বিবেচনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১ দিনের জন্য ৩ হাজার ১২৫ কোটি টাকা ধার দেয়।

ইউনিয়ন ব্যাংক একই কারণ দেখিয়ে ১ হাজার ৬৪৫ কোটি টাকা ধার চায়। ব্যাংকটির নভেম্বর ও ডিসেম্বরে সিআরআর ঘাটতি ছিল ১৮ দিন। ২৮ ডিসেম্বর ঘাটতি হয় ৫২৬ কোটি টাকা। এসআইবিএলও একই কারণ দেখিয়ে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ধার চায়। নভেম্বর ও ডিসেম্বরে ব্যাংকটির সিআরআর ঘাটতি ছিল ৩০ দিন। ২৮ ডিসেম্বর ঘাটতি হয় ৮৯৯ কোটি টাকা।

Also Read: ইসলামি ধারার ব্যাংককে টাকা ধার দিতে বিশেষ ব্যবস্থা

গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকও একই কারণ দেখিয়ে ৭০০ কোটি টাকা ধার চায়। ডিসেম্বর মাসে ব্যাংকটির সিআরআর ঘাটতি ছিল সাত দিন। এর মধ্যে ২৮ ডিসেম্বর ঘাটতি হয় ১০৭ কোটি টাকা। এসব আবেদন কয়েক ঘণ্টার মধ্যে অনুমোদন দেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর, ডেপুটি গভর্নরসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

এসআইবিএলের এমডি জাফর আলম বলেন, ব্যাংকের কোনো সমস্যা নেই। টাকা আবার ফেরত আসছে। ইসলামি ব্যাংকগুলোর জন্য টাকা ধার নেওয়ার সুযোগ কম। এ জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় টাকা নেওয়া হয়েছে।

গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের এমডি সৈয়দ হাবিব হাসনাত বলেন, ‘দুটি ব্যাংক আমাদের টাকা ফেরত দিচ্ছে না। এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা ধার করে বছরের শেষ দিনে সিআরআর রাখতে হয়েছে।’