Thank you for trying Sticky AMP!!

সঞ্চয়পত্র

সঞ্চয়পত্রের চেয়ে বেশি সুদ এখন ব্যাংকে

  • স্থায়ী আমানতে ১৩.৪০% পর্যন্ত সুদ দিচ্ছে কোনো কোনো ব্যাংক।

  • সঞ্চয়পত্রে সর্বোচ্চ ১১.৭৬% মুনাফা পাওয়া যায়।

ব্যাংকঋণের সুদের হার বাড়ছে। কোনো কোনো ব্যাংকে ঋণের সুদের হার ১৩ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। এর প্রভাবে ব্যাংকগুলো আমানতের সুদহারও বাড়াতে শুরু করেছে।

মার্কিন ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, ঋণ আদায়ে মন্দা ও ভাবমূর্তি সংকটের কারণে কিছু ব্যাংক আগে থেকেই তারল্যসংকটে ছিল। তারা বাড়তি সুদ দিয়ে আমানত সংগ্রহ করছিল। এখন মোটামুটি সব ব্যাংক আমানতের সুদহার বাড়িয়েছে। ফলে ব্যাংকে টাকা জমা রেখে ভালো মুনাফা পাওয়া যাচ্ছে।

কোনো কোনো ব্যাংকে সাড়ে পাঁচ বছরে টাকা দ্বিগুণের প্রতিশ্রুতি। বেশি সুদ দেওয়া ব্যাংকগুলো তারল্যসংকটে।

এমনকি কোনো কোনো ব্যাংক সঞ্চয়পত্র ও বন্ডের চেয়েও বেশি সুদ দিচ্ছে। এসব ব্যাংক তারল্যসংকটে রয়েছে। তারা অনেকটা বেপরোয়াভাবে টাকা সংগ্রহের চেষ্টা করছে।

ব্যাংকার মেহমুদ হোসেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে ব্যাংক এশিয়া, এনআরবি ও সবশেষ ন্যাশনাল ব্যাংকে কাজ করেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ বা অন্য যে কারণেই হোক, সরকার এখন উচ্চ সুদে টাকা ধার করছে। এ জন্য ব্যাংকের সুদও বেড়ে যাচ্ছে। আবার ব্যাংকের ঋণ আদায় কমে গেছে। ডলারের কারণে টাকারও সংকট চলছে। সরকারি আমানতও এখন সেভাবে পাওয়া যাচ্ছে না। এসব কারণে কোনো কোনো ব্যাংক কিছু পণ্যে উচ্চ সুদে টাকা ধার করছে।

এখন কিছু ব্যাংক উচ্চ সুদে টাকা সংগ্রহে নামলেও আমানতকারীদের তেমন সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। এর একটি বড় কারণ, কিছু ব্যাংকের কারণে ব্যাংক খাত নিয়ে মানুষের মধ্যে একধরনের আস্থার ঘাটতি তৈরি হয়েছে।

বেশি সুদ কোথায়

ব্যাংকগুলোতে টাকা জমা রাখার ক্ষেত্রে নানাবিধ হিসাব রয়েছে। যাঁরা ব্যবসা-বাণিজ্য করেন ও প্রতিদিন লেনদেনের প্রয়োজন হয়, তাঁরা চলতি হিসাব খোলেন। এ ধরনের হিসাবে সুদ সব সময় কম থাকে। এরপর কম সুদ থাকে সঞ্চয়ী হিসাবে। আর ব্যাংকগুলো বেশি সুদ দেয় বিভিন্ন মেয়াদি, স্থায়ী আমানত ও স্কিমে।

অন্তত দুটি বেসরকারি ব্যাংক এখন সাড়ে পাঁচ বছরে দ্বিগুণ টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমানত নিচ্ছে। ব্যাংক দুটি এ ধরনের আমানতে সুদ দিচ্ছে ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ।

সার্বিকভাবে সুদের হার বৃদ্ধি পাওয়াটা দরকার। কিন্তু কিছু ব্যাংক যে বেপরোয়াভাবে সুদহার বাড়িয়ে আমানত সংগ্রহ করছে, সেটা স্বাস্থ্যকর নয়। এসব ব্যাংক দুর্বল। তাদেরই একীভূত করার দিকে যেতে হবে।
আহসান এইচ মনসুর, বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক

এ ছাড়া বিভিন্ন ব্যাংকে এক বছরের জন্যও স্থায়ী আমানত হিসাব খোলা যায়। সেখানে মাসে মাসে মুনাফা পাওয়ার সুবিধাও আছে। এক বছরের স্থায়ী আমানতে একটি ব্যাংক ১১ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দিচ্ছে। একটি ব্যাংক ছয় বছরের জন্য টাকা জমা রাখলে ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ সুদ দিচ্ছে। আমানতে একই বা কাছাকাছি সুদ দিচ্ছে আরও কিছু ব্যাংক। প্রতিটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে নিয়মিত সুদহারের হালনাগাদ তথ্য পাওয়া যায়।

একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, করোনা শুরুর সময়ে (২০২০) ব্যাংকগুলো কিছু ক্ষেত্রে আমানতের সুদহার ৩-৪ শতাংশে নামিয়ে এনেছিল। তারপরও বাধ্য হয়ে কিছু আমানতকারী ব্যাংকে টাকা রাখেন। আর কেউ কেউ ব্যাংক থেকে টাকা তুলে অন্যত্র বিনিয়োগ করেন। এখন কিছু ব্যাংক উচ্চ সুদে টাকা সংগ্রহে নামলেও আমানতকারীদের তেমন সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। এর একটি বড় কারণ, কিছু ব্যাংকের কারণে ব্যাংক খাত নিয়ে মানুষের মধ্যে একধরনের আস্থার ঘাটতি তৈরি হয়েছে।

Also Read: সঞ্চয়পত্রের সুদ বাড়ান, মধ্যবিত্তদের স্বস্তি দিন

সঞ্চয়পত্র ও বন্ডে কেমন সুদ

ব্যাংকের পাশাপাশি মানুষের বিনিয়োগের আরেকটি বড় মাধ্যম সঞ্চয়পত্র। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে হয় তিন থেকে পাঁচ বছরের জন্য। মেয়াদপূর্তির আগে সঞ্চয়পত্র ভাঙানো হলে মুনাফার হার সর্বনিম্ন ৭ দশমিক ৭১ শতাংশ। মেয়াদ ও টাকার পরিমাণের ওপর নির্ভর করে সঞ্চয়পত্রে সর্বোচ্চ ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ মুনাফা পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে যাঁদের এ খাতে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ রয়েছে, তাঁদের মুনাফা কমে যায়।

বন্ডের সুদহারও বেশি। সরকার সবশেষ ৯১ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের মাধ্যমে ১১ দশমিক ৪০ শতাংশ সুদে, ১৮২ দিন মেয়াদি বিলে ১১ দশমিক ৪৫ শতাংশ সুদে ও ৩৬৪ দিনের বিলে ১১ দশমিক ৬০ শতাংশ সুদে টাকা ধার করেছে। দুই বছর মেয়াদি বন্ডের সুদ ১২ শতাংশ, এর বেশি মেয়াদ হলে সুদ আরও বেশি।

সার্বিকভাবে সুদের হার বৃদ্ধি পাওয়াটা দরকার। কিন্তু কিছু ব্যাংক যে বেপরোয়াভাবে সুদহার বাড়িয়ে আমানত সংগ্রহ করছে, সেটা স্বাস্থ্যকর নয়। এসব ব্যাংক দুর্বল। তাদেরই একীভূত করার দিকে যেতে হবে।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর

সুদের হার বৃদ্ধি ‘দরকার’

মূলত ব্যাংক চেয়ারম্যানদের উদ্যোগ ও সরকারি সিদ্ধান্তে ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ব্যাংকঋণের সুদ সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল। আমানতের সুদের হার ঠিক করা হয়েছিল সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ। তবে ২০২২ সালে ডলার-সংকট শুরু হওয়া এবং মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের কাছাকাছি উঠে যাওয়ায় সুদের হারে সীমা তুলে নেওয়ার পরামর্শ দেন অর্থনীতিবিদেরা। এখন আর সেই হার কার্যকর নেই।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর প্রথম আলোকে বলেন, সার্বিকভাবে সুদের হার বৃদ্ধি পাওয়াটা দরকার। কিন্তু কিছু ব্যাংক যে বেপরোয়াভাবে সুদহার বাড়িয়ে আমানত সংগ্রহ করছে, সেটা স্বাস্থ্যকর নয়। এসব ব্যাংক দুর্বল। তাদেরই একীভূত করার দিকে যেতে হবে। তিনি বলেন, সার্বিকভাবে সুদের হার বেড়েছে বলেই ডলারের বাজার স্থিতিশীল হয়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে অন্তত ছয় মাস সুদের হার বাড়তে দিতে হবে।

Also Read: সঞ্চয়পত্র না বন্ড, প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য কোনটি বেশি লাভজনক