সঞ্চয়পত্র না বন্ড, প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য কোনটি বেশি লাভজনক

বন্ড

অনাবাসী বাংলাদেশি এবং বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বিদেশি নাগরিকের সংখ্যা কম নয়। সরকারি হিসাবে তা এক কোটির বেশি। অনেকেই আছেন বিদেশে বসবাস করলেও তাঁদের পরিবার থাকে বাংলাদেশে। সংগত কারণেই পরিবারের খরচ বাবদ মাসে মাসে দেশে টাকা পাঠাতে হয়। আপনি চাইলে প্রতি মাসে খরচের টাকা বিদেশ থেকে না পাঠিয়ে ইউএস ডলার প্রিমিয়ার বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারেন। এই বন্ডে যদি বিনিয়োগ করেন, তাহলে মুনাফা বাংলাদেশে আপনার ব্যাংক হিসাবে জমা হবে। পরে ওই ব্যাংক হিসাব থেকে আপনি আপনার পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাবে টাকা স্থানান্তর করে দিতে পারবেন। অনলাইন ব্যাংকিং সুবিধা থাকায় দেশে না এসেও আপনার যখন দরকার হবে, তখন টাকা স্থানান্তর করতে পারবেন।

এ ছাড়া যখন দেশে বেড়াতে আসবেন, সঙ্গে করে আর টাকা নিয়ে আসতে হবে না। এ টাকাই খরচ করতে পারবেন। আবার হতে পারে, দেশে ফিরে কেউ একটা ফ্ল্যাট কিনতে চাচ্ছেন। ওই ফ্ল্যাটের মাসিক কিস্তি এ মুনাফা থেকেই দেওয়া সম্ভব। প্রতি মাসে এ জন্য প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) পাঠাতে হবে না।

আরও পড়ুন

এই বন্ডের বিনিয়োগকৃত ডলার চাইলে আপনার বিদেশি ব্যাংক হিসাবেও নিতে পারবেন। তবে মুনাফার টাকা বাংলাদেশি টাকায় বাংলাদেশের ব্যাংক হিসাবে নিতে হবে। আর যদি মুনাফার টাকাও ডলারে নিতে চান, তাহলে ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড নামে আর একটি বন্ড আছে, সেখানে বিনিয়োগ করতে পারেন।

পার্থক্যটা হলো ইউএস ডলার প্রিমিয়ার বন্ডের বিনিয়োগকৃত অর্থ নিতে হবে ডলারে, কিন্তু মুনাফা নিতে হবে টাকায়। অন্যদিকে ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ডের বিনিয়োগকৃত অর্থ কিংবা মুনাফা উভয়ই ডলারে নেওয়া যাবে। তবে আপনার যদি কখনো দরকার হয় বিনিয়োগকৃত ডলার ও মুনাফা উভয়ই আপনি বাংলাদেশি টাকায় নিতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে আপনাকে ব্যাংকে ফরেন কারেন্সি (এফসি) হিসাব খুলতে হবে। যদি দেশে আপনার এফসি হিসাব থাকে, তাহলে ওই হিসাবেও মুনাফা নিতে পারবেন। উভয় বন্ডেই মুনাফার হার ৭ দশমিক ৫ শতাংশ এবং এ মুনাফা সম্পূর্ণ করমুক্ত।

যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ায় সরকারি বন্ডে ৪ শতাংশ এবং স্থায়ী আমানতে ৩ থেকে সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ মুনাফা পাওয়া যায়। কেউ যদি বিনিয়োগ এবং মুনাফার নিরাপত্তা চান, ঝুঁকি নিতে আগ্রহী না হন, তাহলে ৪ শতাংশের বেশি মুনাফা পাওয়া অসম্ভব। এ মুনাফার ওপর আবার কর দিতে হবে। অথচ আপনি ভেবে দেখুন বাংলাদেশ সরকারের ইস্যু করা সম্পূর্ণ নিরাপদ এই বিনিয়োগ খাত থেকে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ মুনাফা পাবেন। সুতরাং এই বন্ড আপনার জন্য ভালো একটি বিনিয়োগের খাত হতে পারে।

কোথায় যোগাযোগ করতে হবে

বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের তফসিলি ব্যাংকের শাখা, এক্সচেঞ্জ হাউস, এক্সচেঞ্জ কোম্পানি, বাংলাদেশের যেকোনো তফসিলি ব্যাংকের অথরাইজড ডিলার (এডি) শাখা থেকে ইউএস ডলার প্রিমিয়ার বন্ড এবং ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড ক্রয় করা যাবে। অর্থাৎ আপনি দেশে এবং বিদেশে যেখান থেকে সুবিধা হয়, সেখান থেকেই এ দুটি বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারবেন।

আরও পড়ুন

বিনিয়োগসীমা ও রিটার্ন

দুটি বন্ডের মেয়াদই তিন বছর এবং ইউএস ডলার ৫০০ থেকে শুরু করে ১ কোটি টাকার সমপরিমাণ ইউএস ডলার বিনিয়োগ করা যায়। উভয় বন্ডের মুনাফার হার ৭ দশমিক ৫ শতাংশ এবং তিন বছর মেয়াদি উভয় বন্ড থেকে ছয় মাস পরপর মুনাফা তোলা যায়। বন্ড দুটির গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো আপনার বিনিয়োগ যতই হোক না কেন, একই হারে মিলবে মুনাফা। অর্থাৎ আপনি যত অর্থই বিনিয়োগ করুন না কেন, মুনাফার হার একটাই।

ধরুন, আপনি এক হাজার মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছেন। তাহলে ছয় মাস পর ৭ দশমিক ৫ শতাংশ হিসাবে মুনাফা পাবেন ৩৭ দশমিক ৫ ডলার। আর এক বছরে মুনাফা ৭৫ ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় হবে ৭ হাজার ৫০০ টাকা (১ ডলার ১০০ টাকা হিসাবে)। যেহেতু এই মুনাফা সম্পূর্ণ করমুক্ত, তাই কোনো কর কর্তন ছাড়াই আপনি ৭ হাজার ৫০০ টাকা পেয়ে যাবেন। তবে ডলারের বিপরীতে টাকার মান যদি আরও কমে, তাহলে আপনার এই মুনাফার পরিমাণ বাড়তে থাকবে।

আরও পড়ুন

সঞ্চয়পত্র না বন্ড

এখানে আপনি বলতে পারেন, যদি সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতাম তাহলে ১০ শতাংশ কর কর্তনের পরও বছরে এক লাখ টাকায় ন্যূনতম ১০ হাজার টাকা পেতাম। তাহলে আমি কেন সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ না করে এই বন্ডে বিনিয়োগ করব? ভেবে দেখুন, যেহেতু বিনিয়োগ করা ডলার আপনি যে দেশে থাকেন সেই দেশে মেয়াদ শেষে ফেরত নেবেন। আর যে মুনাফা বাংলাদেশে পাবেন, তা দিয়ে বাংলাদেশে দরকারি কাজে ব্যবহার করবেন। এ জন্য কিছু মুনাফা কম পেলেও তেমন ক্ষতি নেই। কিন্তু আপনি সঞ্চয়পত্রে বা ওয়েজ আর্নার বন্ডে বিনিয়োগ করে দেশের বাইরে অর্থ নিতে চাইলে জটিলতায় পড়তে পারেন।

উভয় বন্ডের আরও কিছু সুবিধা আছে। যেমন তিন বছর শেষ হয়ে গেলেও স্বয়ংক্রিয়ভাবে একাধিক মেয়াদের জন্য পুনর্বিনিয়োগ সুবিধা রয়েছে। তাই নতুন করে আবার পুনর্বিনিয়োগের ঝামেলা নেই। বিনিয়োগ করার পর যদি কোনো কারণে অর্থের প্রয়োজন হয়, তাহলে বিনিয়োগকৃত অর্থের বিপরীতে ঋণ নিতে পারবেন। আপনি নমিনিও নিয়োগ করতে পারবেন।

সূত্র: স্মার্ট মানি হ্যাকস বই, লেখক জসিম উদ্দিন রাসেল