Thank you for trying Sticky AMP!!

এনজিও থেকে ৪ শতাংশ সুদের ঋণ মিলবে তো?

ক্ষুদ্রঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো (এমএফআই) বা এনজিওগুলোর ২৪ শতাংশ সুদে ঋণ দিলেও করোনা মহামারির এই সময়ে ছোট ব্যবসায়ীদের তারা ঋণ দেবে মাত্র ৪ শতাংশ সুদে। তবে সরকার এই ঋণের বিপরীতে এনজিওদের ৫ দশমিক ৫ শতাংশ হারে ভর্তুকি দেবে।

সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় এনজিওদের মাধ্যমে এভাবেই এই ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে সরকার। তবে ৫০ লাখ টাকার বেশি ঋণ পাবেন না কোনো গ্রাহক। যদিও এই হারে শেষ পর্যন্ত ঋণ দেওয়া হবে কি না, তা নির্ভর করছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওপর।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ অনুমোদন করলেই আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এ ব্যাপারে একটি নীতিমালা জারি করবে। কুটির, অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতের উদ্যোক্তাদের (সিএমএসএমই) জন্য ৪ শতাংশ সুদে চলতি মূলধন দেওয়ার এই প্রস্তাব আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ গত বৃহস্পতিবার অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে।

Also Read: কারা বেশি পেল প্রণোদনা ঋণ

তার আগে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ গত মাসে খসড়া আকারে ‘নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রভাব মোকাবিলায় সিএমএসএমই উদ্যোক্তাদের দ্রুত ঋণ দেওয়ার সহায়ক নীতিমালা’ তৈরি করেছে। কয়েক দফা বৈঠক করে এই খসড়া করা হয়। এর ওপর মতামত দেওয়ার জন্য গত ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত তা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ওয়েবসাইটে খোলাও রাখা হয়।

তবে সব এনজিও এই ঋণ দিতে পারবে না। পারবে শুধু ক্ষুদ্রঋণ নিয়ন্ত্রক সংস্থা (এমআরএ) থেকে নিবন্ধন পাওয়া এনজিওগুলোই। এমআরএ থেকে সনদ নেওয়া প্রতিষ্ঠান এখন ৭০০টি। কিন্তু বিপত্তি বাধে একটি বিষয়ে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পুনঃ অর্থায়ন কর্মসূচির মাধ্যমে এটি করা হবে নাকি বাজেট থেকে নতুন করে কোনো বরাদ্দ দেওয়া হবে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এ ব্যাপারে মতামত চায় অর্থ বিভাগের। অর্থ বিভাগ জানিয়ে দেয় বাজেট থেকে অর্থ দেওয়া সম্ভব হবে না। এরপরই প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য তা পাঠানো হয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে। শুরু থেকে অবশ্য সুদের হার নিয়েও জটিলতা চলতে থাকে। ১৮ শতাংশ, ১৪ শতাংশ, ১২ শতাংশ, ৯ শতাংশ ঘুরে শেষ পর্যন্ত ৪ শতাংশে এসে স্থির হয়।

খসড়া নীতিমালা অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংক শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ সুদে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে টাকা দেবে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সেই টাকা ১ শতাংশ সুদে দেবে এনজিওগুলোকে। এনজিওগুলো পরে সেই টাকা ৪ শতাংশ সুদে দেবে গ্রাহকদের। তবে এনজিওগুলো সুদ পাবে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ। গ্রাহকের ৪ শতাংশের বাইরে ৫ শতাংশ সুদ সরকার বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে ভর্তুকি হিসেবে দেবে এনজিওগুলোকে।

Also Read: ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে বিশেষ মনোযোগ দরকার

অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সরকার যেসব প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, তার মধ্যে সিএমএসএমই খাতে চলতি মূলধন দেওয়ার জন্য রয়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ এপ্রিল শুরু হওয়া এ প্যাকেজ থেকে এরই মধ্যে ১২ হাজার কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। বর্তমানে ৫৬টি ব্যাংক ও ২০টি নন–ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান সিএমএসএমই খাতের প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে জড়িত।

খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে এনজিওগুলো যে ঋণ নেবে, তার বিপরীতে ঋণ পরিশোধের ঘোষণাপত্র এবং ঋণস্থিতি জামানত হিসেবে রাখতে হবে। ঋণ দেওয়া হবে দুই বছরের জন্য। গ্রাহকদের দেওয়ার জন্য একটি এনজিও সর্বোচ্চ তিনটি ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারবে।

একক বা গ্রুপ—যেভাবেই হোক না কেন, এই প্যাকেজের আওতায় কোনো গ্রাহক ৫০ লাখ টাকার বেশি ঋণ পাবেন না। এর মধ্যে কুটিরশিল্প পাবে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ। এ ছাড়া অতি ক্ষুদ্র সর্বোচ্চ ৩০ লাখ এবং ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠান পাবে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ। ঋণের টাকায় কোনো গ্রাহক তাঁর আগে নেওয়া কোনো ঋণ সমন্বয় বা পরিশোধ করতে পারবেন না।

ক্ষুদ্রঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো (এমএফআই) বা এনজিওগুলোর ২৪ শতাংশ সুদে ঋণ দিলেও করোনা মহামারির এই সময়ে ছোট ব্যবসায়ীদের তারা ঋণ দেবে মাত্র ৪ শতাংশ সুদে। তবে সরকার এই ঋণের বিপরীতে এনজিওদের ৫ দশমিক ৫ শতাংশ হারে ভর্তুকি দেবে।

খসড়ায় আরও বলা হয়েছে, কুটিরশিল্প পাবে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ। এ ছাড়া অতি ক্ষুদ্র সর্বোচ্চ ৩০ লাখ এবং ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠান পাবে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ। গ্রাহক পর্যায়ে প্যাকেজের ৪০ শতাংশ ট্রেডিং খাতে এবং ৬০ শতাংশ উৎপাদন ও সেবা খাতে বিতরণ করতে হবে।

নির্বাচিত গ্রাহকদের ঋণ আবেদনের সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা জন্মনিবন্ধন সনদ অথবা পাসপোর্টের কপি অথবা ট্রেড লাইসেন্স অথবা সিটি করপোরেশন বা পৌরসভার কাউন্সিলরের অথবা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের অথবা স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের প্রত্যয়নপত্র লাগবে। পাশাপাশি লাগবে অন্য দুজনের নিশ্চয়তাপত্র (গ্যারান্টি)।

অন্য দুজন কারা হবেন পরিবারের সদস্য কেউ হবেন, না সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তি নাকি আত্মীয়স্বজন—এ ব্যাপারে কোনো ব্যাখ্যা বা সংজ্ঞা দেওয়া হয়নি খসড়া নীতিমালায়। একজন একটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে নিশ্চয়তা দিলে তিনি অন্য একটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষেও তা দিতে পারবেন কি না, তা–ও স্পষ্ট করে বলা হয়নি।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম গত বৃহস্পতিবার ‘করোনাকালে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) ভূমিকা’ শীর্ষক ওয়েবিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বলেন, গ্রাহক পর্যায়ে ৪ শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়ার প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। এটিও একটি প্যাকেজ, যার আকার হবে ১০ হাজার কোটি টাকা।

এই প্যাকেজের আওতায় কোনো গ্রাহক ৫০ লাখ টাকার বেশি ঋণ পাবেন না। এর মধ্যে কুটিরশিল্প পাবে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ। এ ছাড়া অতি ক্ষুদ্র সর্বোচ্চ ৩০ লাখ এবং ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠান পাবে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ।

এই প্যাকেজের পটভূমি তুলে ধরে সচিব ওই দিন আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও উৎপাদকদের কাছে ঋণ পৌঁছানোটা জরুরি। কিন্তু ২০ হাজার কোটি টাকার যে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছিল, তার বিতরণ ভালো ছিল না। অনেক চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে। কিন্তু ব্যাংকগুলোর মধ্যে অনীহা ছিল।

ব্যাংকগুলোর কাছে অবশ্য ছোট উদ্যোক্তাদের তথ্য ছিল না—এমন মন্তব্য করে সচিব ওই দিন আরও বলেন, ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে এমএফআইগুলোর যোগাযোগটা অন্তত ব্যাংকের চেয়ে ভালো। এ কারণেই ঋণ বিতরণে এমএফআইগুলোকে বেছে নেওয়া।

তবে সচিবের বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত করে মুখ ফুটে কেউ কিছু বলছেন না। একটি এমএফআইয়ের নির্বাহী পরিচালক নাম না প্রকাশের শর্তে আজ রোববার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের মাধ্যমে বিতরণ ভালো হবে। তবে আমাদের সেবা মাশুল কম প্রস্তাব করা হয়েছে। এই হার অন্তত আরও ৩ শতাংশ বাড়ানো উচিত।’