কারা বেশি পেল প্রণোদনা ঋণ

কোনো কোনো ব্যাংক অধিকাংশ গ্রাহককে ঋণ দিতে চেষ্টা করেছে। আবার কিছু ব্যাংক বড় কয়েক গ্রাহককে বেশি দিয়ে তহবিল শেষ করেছে।

ঋণখেলাপি হয়ে তিন দফা পুনঃ তফসিল হয়েছে, আবার পুনর্গঠন সুবিধাও নিয়েছে এমন গ্রাহকেরাও করোনাকালের প্রণোদনা তহবিল থেকে ঋণ নিয়েছে। আবার ভালো গ্রাহক হিসেবে পরিচিতরাও রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংক থেকে কম সুদের এই ঋণ পেয়েছে। কোনো কোনো ব্যাংক চেষ্টা করেছে বেশির ভাগ গ্রাহকের কাছে ঋণ পৌঁছে দিতে। আবার কিছু ব্যাংক বড় কয়েকজন গ্রাহককে বেশি দিয়ে তহবিল শেষ করেছে।

ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সেবা খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঋণ দিতে সরকার প্রথমে ৩০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে। পরে পোশাকশ্রমিকদের বেতনের ঋণ যুক্ত করায় এর আকার বেড়ে হয় ৩৩ হাজার কোটি টাকা। সম্প্রতি তা বাড়িয়ে ৪০ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। এই তহবিলের ঋণের প্রায় পুরোটাই এখন শেষের পথে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সোনালী ব্যাংক থেকে সর্বোচ্চ এক হাজার কোটি টাকা ঋণ পেয়েছে জাতীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ। এই ব্যাংক থেকে নাভানা রিয়েল এস্টেট ১০০ কোটি টাকা, থারমেক্স গ্রুপ ৮৪ কোটি টাকা, স্টার পার্টিকেল ৫৫ কোটি টাকা ও আবুল খায়ের গ্রুপ ৪৮ কোটি টাকা পেয়েছে।

যারা আবেদন করছে, আমরা যাচাই–বাছাই করে দিচ্ছি। চাহিদা অনেক, সবাইকে দেওয়া সম্ভবও হচ্ছে না।
আব্দুছ ছালাম আজাদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, জনতা ব্যাংক

অগ্রণী ব্যাংক থেকে জাবের অ্যান্ড জুবায়ের ৯০ কোটি টাকা, নাইস স্পেন মিলস ৬০ কোটি টাকা, থারমেক্স গ্রুপ ৫৭ কোটি টাকা ও একমি ল্যাবরেটরি ৫০ কোটি টাকা পেয়েছে।

জানতে চাইলে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সব ভালো প্রতিষ্ঠানকে কম সুদের এই ঋণ দেওয়ার চেষ্টা করছি। কারণ, কমবেশি সবাই ক্ষতিতে পড়েছে। এখনো অনেকে ঋণ চাইছে। আমরা তিন দফায় ঋণের সীমা বাড়িয়েও নিয়েছি।’

মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম জানান, পিএইচপি, আকিজ, সিটি, বে গ্রুপ, বিএসআরএমসহ শতাধিক প্রতিষ্ঠান কম সুদের ঋণ সুবিধা পেয়েছে।

জনতা ব্যাংক থেকে এস আলম গ্রুপ ২০০ কোটি টাকা; বেক্সিমকো গ্রুপ ১৮০ কোটি টাকা ও গ্রুপটির অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল নিটওয়্যার অ্যান্ড অ্যাপারেলস ৮০ কোটি টাকা; থারমেক্স গ্রুপ ৪৭ কোটি টাকা এবং আবুল খায়ের গ্রুপ ৪০ কোটি টাকা নিয়েছে।

দ্রুত সময়ে এই ঋণ বিতরণের তাগিদ ছিল। ব্যাংকগুলোও সেভাবে দিয়েছে। চেষ্টা ছিল যাতে শর্তের বাইরে কেউ ঋণ না পায়।
সিরাজুল ইসলাম, নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র, বাংলাদেশ ব্যাংক

জনতা ব্যাংকের এমডি আব্দুছ ছালাম আজাদ সম্প্রতি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘যারা আবেদন করছে, আমরা যাচাই–বাছাই করে দিচ্ছি। চাহিদা অনেক, সবাইকে দেওয়া সম্ভবও হচ্ছে না।’

এদিকে রূপালী ব্যাংক থেকে নাভানা লিমিটেড ৮৮ কোটি টাকা, দবিরউদ্দিন স্পিনিং মিলস ৫০ কোটি টাকা, আবুল খায়ের গ্রুপ ৩৫ কোটি টাকা, এস আলম গ্রুপের গ্যালকো স্টিল ৩৩ কোটি টাকা ঋণ পেয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছিল, করোনাভাইরাসের অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবিলায় সরকার যে প্রণোদনা ঘোষণা করেছে, ঋণখেলাপিরা সেই তহবিল থেকে ঋণ নিতে পারবে না। শুধু ঋণখেলাপি নয়, তিনবারের বেশি ঋণ পুনঃ তফসিল করেছেন, এমন ব্যবসায়ীরাও এ তহবিল থেকে ঋণ পাবেন না। এ শর্ত দিয়ে শিল্প ও সেবা খাতের চলতি মূলধন তহবিল বিষয়ে নীতিমালা জারি করা হয়। যেসব প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে ব্যাংক থেকে চলতি মূলধন সুবিধা নিয়েছে, তারা এই তহবিল থেকে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ চলতি মূলধন নিতে পারবে। শুধু ক্ষতিগ্রস্তরাই এ ঋণ পাবে।

এ ঋণের মেয়াদ তিন বছর। সরকার প্রথম বছরে সুদ হিসেবে অর্ধেক বা সাড়ে ৪ শতাংশ বহন করবে। বাকি সাড়ে ৪ শতাংশ গ্রাহককে দিতে হবে। এই ঋণের মধ্যে ১৫ হাজার কোটি টাকা পুনঃঅর্থায়ন করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে পুনঃঅর্থায়নের টাকা যথাসময়ে ফেরত না দিলে তা ওই ব্যাংকের হিসাব থেকে কেটে রাখবে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে সরকার সুদ ভর্তুকি দিলেও ব্যাংকগুলোকে ঋণ বিতরণে যথাযথ ঝুঁকি বিবেচনায় রাখতে হবে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, দ্রুত সময়ে এই ঋণ বিতরণের তাগিদ ছিল। ব্যাংকগুলোও সেভাবে দিয়েছে। চেষ্টা ছিল যাতে শর্তের বাইরে কেউ ঋণ না পায়।