Thank you for trying Sticky AMP!!

টানা দরপতনে বাজার ছাড়ছেন আতঙ্কিত বিনিয়োগকারীরা

শেয়ারবাজার আবারও পতনের বৃত্তে আটকে গেছে। প্রতিদিনই বড় দরপতন ঘটছে। ফলে নানা শ্রেণির বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে নিজেদের বাজার থেকে গুটিয়ে নিচ্ছেন।

দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গতকাল বুধবার শেয়ারের বড় দরপতন হয়েছে। ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৭২ পয়েন্ট বা সোয়া ১ শতাংশ কমে ৫ হাজার ৭৬৩ পয়েন্টে নেমে গেছে। এর আগের কর্মদিবসে অর্থাৎ গত সোমবার ডিএসইএক্স সূচকটি ৬৭ পয়েন্ট বা ১ শতাংশের বেশি কমে। এর আগে রোববারও সূচকে বড় পতন ঘটে। চলতি সপ্তাহের তিন কার্যদিবসে দরপতনের কারণে ডিএসইএক্স সূচক মোট ১৭৯ পয়েন্ট কমে প্রায় ৩৫ মাস আগের অবস্থানে ফিরে গেছে। সর্বশেষ ২০২১ সালের ১২ মে এই সূচক ৫ হাজার ৭৫০ পয়েন্ট ছিল।

Also Read: অস্থির শেয়ারবাজার, আবারও বড় দরপতন

দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গতকাল বুধবার শেয়ারের বড় দরপতন হয়েছে। ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৭২ পয়েন্ট বা সোয়া ১ শতাংশ কমে ৫ হাজার ৭৬৩ পয়েন্টে নেমে গেছে।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচকও গতকাল ১২৫ পয়েন্ট বা পৌনে ১ শতাংশ কমেছে। সেই সঙ্গে চট্টগ্রামের বাজারে লেনদেন নেমে এসেছে ১০ কোটি টাকার নিচে। তবে ঢাকার বাজারে গতকাল লেনদেন বেড়ে দাঁড়ায় ৫৩৯ কোটি টাকা।

একাধিক ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, টানা দরপতনে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এখন আতঙ্কে রয়েছেন। তাঁদের অধিকাংশই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ায় বাজারে ক্রেতাসংকট প্রকট হয়ে উঠেছে। সেই সঙ্গে শুরু হয়েছে ফোর্সড সেল বা জোরপূর্বক বিক্রির প্রবণতা।

সাধারণত শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা দুভাবে বিনিয়োগ করে থাকেন। একটি শ্রেণি নিজেদের জমানো টাকা বিনিয়োগ করেন। আরেকটি শ্রেণি নিজের বিনিয়োগের পাশাপাশি শেয়ার জিম্মায় রেখে ঋণ করেও বিনিয়োগ করেন, যা মার্জিন লোন নামে পরিচিতি। এ ধরনের ঋণ নিয়ে যাঁরা বিনিয়োগ করেন, তাঁদের শেয়ারের দাম একটি নির্দিষ্ট সীমার নিচে নেমে এলে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান ওই শেয়ার বিক্রি করে দেয়। শেয়ারবাজারে এ ধরনের বিক্রিকে বলা হয় ফোর্সড সেল বা জোরপূর্বক বিক্রি।

Also Read: শেয়ারের বিক্রি কমিয়ে টেনে তোলা হলো সূচক

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচকও গতকাল ১২৫ পয়েন্ট বা পৌনে ১ শতাংশ কমেছে। সেই সঙ্গে চট্টগ্রামের বাজারে লেনদেন নেমে এসেছে ১০ কোটি টাকার নিচে।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাধারণ বিনিয়োগকারীরা যাতে ভীত হয়ে শেয়ার বিক্রি না করেন, সে জন্য বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করার জন্য ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকে অনুরোধ জানিয়েছি। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিনিয়োগে সক্রিয় করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আশা করছি, খুব শিগগির বাজার ঘুরে দাঁড়াবে।’

বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ভালো শেয়ারে বিনিয়োগ করেই এখন বিনিয়োগকারীরা বেশি দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। কারণ, বাজার অনেকটাই কারসাজির শেয়ারনির্ভর হয়ে পড়েছে। ফলে দুর্বল ও নিম্নমানের কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম বাড়লেও ভালো শেয়ারের অস্বাভাবিক দরপতন ঘটছে।

ঢাকার বাজারে গতকাল দরপতনের শীর্ষে ছিল আইপিডিসি ফিন্যান্স। এদিন কোম্পানিটির শেয়ারের দাম প্রায় আড়াই টাকা বা সোয়া ৯ শতাংশ কমেছে। গত ১৫ কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ারদর প্রায় ১০ টাকা কমেছে। একই রকম অবস্থা ঘটেছে ভালো মৌলভিত্তির বহুজাতিক ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানির (বিএটিবিসি)। গত ১৫ কার্যদিবসে এই কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে ১১৬ টাকা। ৪ মার্চ থেকে কোম্পানিটির শেয়ারের সর্বনিম্ন মূল্যস্তর বা ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করা হয়। এর পর থেকে কোম্পানিটির শেয়ারের টানা দরপতন চলছে। তাতে গত দুই বছরের মধ্যে এটির শেয়ারের দাম সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। এ ছাড়া গতকাল দরপতন হয়েছে রেনেটা, বেক্সিমকো ফার্মা, গ্রামীণফোন, পূবালী ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক ও সিটি ব্যাংকের মতো ভালো প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ারের।

Also Read: কারসাজির ভয়, আস্থার সংকটে বিনিয়োগকারী

একাধিক ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, টানা দরপতনে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এখন আতঙ্কে রয়েছেন। তাঁদের অধিকাংশই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ায় বাজারে ক্রেতাসংকট প্রকট হয়ে উঠেছে। সেই সঙ্গে শুরু হয়েছে ফোর্সড সেল বা জোরপূর্বক বিক্রির প্রবণতা।

অথচ ভালো কোম্পানির শেয়ারের দরপতনের বিপরীতে বাড়ছে খারাপ কোম্পানির শেয়ারদর। ঢাকার বাজারে গতকাল মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষে ছিল লোকসানি কোম্পানি সেন্ট্রাল ফার্মা। ২০১৯ সালের পর থেকে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশই দেয়নি। কিন্তু ছয় মাসের ব্যবধানে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বেড়ে প্রায় তিন গুণ হয়েছে। গতকাল প্রায় ২ টাকা বা ৬ শতাংশের বেশি বেড়েছে। এর বাইরে দাম বেড়েছে তাকাফুল ইনস্যুরেন্স, গোল্ডেনসন, প্যারামাউন্ট টেক্সটাইলের মতো খারাপ কোম্পানির শেয়ারদর।

বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, বাজারে খারাপ কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজির ঘটনা ঘটছে। কারসাজি বন্ধে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে কঠোর হতে হবে। একই সঙ্গে সবার জন্য আইনের সমপ্রয়োগ ও যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে হবে স্বচ্ছতার সঙ্গে। তাহলে বিনিয়োগকারীরা বাজারের প্রতি আস্থাশীল হবেন।