অস্থির শেয়ারবাজার, আবারও বড় দরপতন

শেয়ারবাজারগ্রাফিকস: প্রথম আলো

ভালো শেয়ারের দরপতনে আবারও বিপর্যস্ত দেশের শেয়ারবাজার। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আজ সোমবার ১ দিনেই ৬৭ পয়েন্ট বা ১ শতাংশের বেশি কমে নেমে এসেছে ৫ হাজার ৮৩৪ পয়েন্টে। দেশের প্রধান এই শেয়ারবাজারের পাশাপাশি অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচকও কমেছে ১৬৮ পয়েন্ট বা ১ শতাংশ। সূচকের পতনের পাশাপাশি দুই বাজারেই লেনদেন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে।

বাজার–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত সপ্তাহের শেষ দুই দিনের বড় উত্থানের পর বিনিয়োগকারীরা বাজার নিয়ে কিছুটা আশাবাদী হয়েছিলেন। কিন্তু চলতি সপ্তাহটি শুরুই হয় দরপতনের মধ্য দিয়ে। গত রোববারের দরপতনের পর বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আবারও আতঙ্ক ভর করে। তারই ধারাবাহিকতায় আজ বড় দরপতন হয়েছে। বাজারের পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে দরপতন শুরু হলে কে কার আগে বিক্রি করে দেবে, সে ব্যাপারে একধরনের প্রতিযোগিতা তৈরি হয়। দেখা গেছে, দরপতন শুরু হলেই দিনের সর্বনিম্ন দামে শেয়ার বিক্রি শুরু করেন অনেক বিনিয়োগকারী। এতে বাজার আরও দ্রুত পড়তে থাকে। ফলে ক্রেতার অভাবে সর্বোচ্চ দরপতন হওয়া কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দামও আর ঘুরে দাঁড়াতে পারে না।

ঢাকার বাজারে সোমবার লেনদেন হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে প্রায় ৮১ শতাংশ বা ৩১৮টিরই দাম কমেছে। বেড়েছে ১০ শতাংশ বা ৪১টির দাম। আর অপরিবর্তিত ছিল ৩৪টির বা প্রায় ৯ শতাংশ শেয়ারের দাম। এদিন ভালো মৌলভিত্তির বেশির ভাগ শেয়ারেরই দরপতন ঘটে। তাতেই সূচকটি বেশি কমেছে। এর বিপরীতে দুর্বল মানের কিছু কোম্পানির শেয়ারের দরবৃদ্ধি ঘটেছে। তবে স্বল্প মূলধনী এসব কোম্পানির শেয়ারের দরবৃদ্ধি সূচকে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারেনি।

বাজার–সংশ্লিষ্ট লোকজন বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে শেয়ারবাজারে ভালো কোম্পানিগুলোর শেয়ার অবমূল্যায়িত অবস্থায় রয়েছে। তার বিপরীতে দুর্বল মানের কোম্পানির শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। কারসাজির মাধ্যমেই এসব শেয়ারের দাম বাড়ানো হচ্ছে। এর ফলে ভালো বিনিয়োগকারীরা বাজারের প্রতি কিছুটা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন।

ঢাকার বাজারে আজ মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষ পাঁচ কোম্পানির তালিকায় ছিল রূপালী লাইফ ইনস্যুরেন্স, আরামিট, এক্সপ্রেস ইনস্যুরেন্স, সিটি জেনারেল ইনস্যুরেন্স ও এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ।

এ ছাড়া ডিএসইতে সোমবার লেনদেনের শীর্ষে ছিল নতুন তালিকাভুক্ত কোম্পানি এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ। বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে আইপিওতে আসা এ কোম্পানিটির শেয়ারের দাম মাত্র ১৫ দিনের মধ্যেই আড়াই গুণের বেশি বেড়েছে। অস্বাভাবিক এ মূল্যবৃদ্ধির কারণ জানতে চেয়ে এরই মধ্যে কোম্পানিটিকে চিঠি দিয়েছে ডিএসই কর্তৃপক্ষ। জবাবে কোম্পানিটি জানিয়েছে, বাজারে এভাবে শেয়ারের দরবৃদ্ধির কারণ তাদের জানা নেই।

প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজের প্রতিটি শেয়ার পেয়েছেন ২০ টাকা দামে। সেই শেয়ারের দাম ১২ কার্যদিবসে বেড়ে হয়েছে ৫১ টাকা। দ্রুততম সময়ে এটির শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। বাজার–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একটি গোষ্ঠী এ শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধির পেছনে সংঘবদ্ধভাবে কাজ করছে। তাদের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক কিছু বিনিয়োগকারীও রয়েছেন। কারণ, তাঁরাও বিপুল শেয়ার কিনেছেন। এখন দাম বাড়িয়ে বড় অঙ্কের মুনাফা তুলে নিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও একজোট হয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শীর্ষস্থানীয় একটি ব্রোকারেজ হাউসের প্রধান নির্বাহী প্রথম আলোকে বলেন, বাজারে এখন একধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। পাশাপাশি বাজে কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজির ঘটনা তো রয়েছেই। এ কারণে নতুন করে কেউ বিনিয়োগের সাহস করছেন না।

এদিকে রেকর্ড তারিখের জন্য এক দিন লেনদেন বন্ধ থাকার পর সোমবার আবারও লেনদেনে ফিরেছে সিমেন্ট খাতের বহুজাতিক কোম্পানি লাফার্জহোলসিম। ৩ মার্চ কোম্পানিটি ২০২৩ সালের জন্য ৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশের ঘোষণা দেয়। এ লভ্যাংশের মালিকানা নির্ধারণের জন্য রোববার রেকর্ড তারিখ ছিল, ওই দিন কোম্পানিটির শেয়ারের লেনদেন হয়নি। আজ লেনদেনে ফিরে এলে এটির শেয়ারের বড় ধরনের মূল্য সংশোধন হয়। এদিন লাফার্জহোলসিমের প্রতিটি শেয়ারের দাম ৬ টাকা বা প্রায় ৮ শতাংশ কমেছে। তাতে সূচকেও বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ডিএসইতে তাই এদিন দরপতনের শীর্ষে ছিল কোম্পানিটি।

শেয়ারবাজারে শীর্ষস্থানীয় একটি ব্রোকারেজের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার বাজারে সোমবার সূচকের পতনে যেসব কোম্পানির বড় ভূমিকা ছিল, তার মধ্যে অন্যতম লাফার্জহোলসিম, রেনেটা, বীকন ফার্মা, বেক্সিমকো ফার্মা ও ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বা বিএটি। ডিএসইতে সোমবার সূচকের যে পতন হয়েছে, তার মধ্যে সাড়ে ২৯ পয়েন্ট কমেছে এই ৫ কোম্পানির দরপতনে।

সূচকের পাশাপাশি শেয়ার লেনদেনও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কমেছে দেশের দুই বাজারে। ঢাকার বাজারে আজ লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৪৪৬ কোটি টাকা, যা গতকালের চেয়ে ১৩৪ কোটি টাকা কম। চট্টগ্রামের বাজারে এদিন লেনদেন হয় ১৬ কোটি টাকার, যা গতকালের চেয়ে ৪২ কোটি টাকা কম।