Thank you for trying Sticky AMP!!

‘সর্বনিম্ন মূল্যস্তরে’ আটকে গেল দেশের শেয়ারবাজার

বাজারে গুজব রয়েছে, নতুন করে আরও কিছু কোম্পানির সর্বনিম্ন মূল্যস্তর তুলে নেওয়া হবে। এটির কারণে অনেকে হাত গুটিয়ে বসে আছেন।

শেয়ারবাজার

দেশের শেয়ারবাজার ‘ফ্লোর প্রাইস’ বা ‘সর্বনিম্ন মূল্যস্তরে’ আটকে গেছে। এ কারণে লেনদেনও তলানিতে নেমেছে। নতুন বছরের প্রথম তিন কার্যদিবসই দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ২০০ কোটি টাকার কম লেনদেন হয়। গতকাল মঙ্গলবার লেনদেন হয় ১৯৯ কোটি টাকা, যা গত রবি ও সোমবার ছিল যথাক্রমে ১৭৮ ও ১৪৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে সোমবারের লেনদেন ছিল আড়াই বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।

গত কয়েক দিনে শেয়ারবাজারসংশ্লিষ্ট আটটি ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সবাই এখন ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, বেশির ভাগ শেয়ার সর্বনিম্ন মূল্যস্তরে আটকে থাকায় বাজারে লেনদেন কমে গেছে। তাতে প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি উভয় শ্রেণির বিনিয়োগকারীই বলতে গেলে নিষ্ক্রিয় রয়েছেন। এ কারণে বাজার স্থবির হয়ে পড়েছে।

Also Read: নতুন বছরে গতিশীল হবে শেয়ারবাজার

সর্বনিম্ন মূল্যস্তরই মূলত শেয়ারবাজারকে জটিল এক পরিস্থিতিতে নিয়ে গেছে। এখন এমন এক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, যেখানে সর্বনিম্ন মূল্যস্তর বহাল রেখে বাজারে কিছুতেই গতি সঞ্চার করা যাবে না।
ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী, সাবেক চেয়ারম্যান, বিএসইসি

এদিকে কয়েক দিন ধরে বাজারে গুজব ছড়িয়ে পড়ছে, নতুন করে আরও বেশ কিছু কোম্পানির সর্বনিম্ন মূল্যস্তর তুলে নিতে যাচ্ছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বিএসইসি গতকাল পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। মূল্যস্তর প্রত্যাহার নিয়ে গুজবের কারণে আরও হাত গুটিয়ে নিয়েছেন সব শ্রেণির বিনিয়োগকারীরা। কারণ, তাঁরা মনে করছেন, সর্বনিম্ন মূল্যস্তর তুলে নেওয়ার পরই বাজারের আচরণ দেখে নতুন করে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেবেন।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও দেশের অর্থনীতির নানা খাতে সংকট দেখা দিলে শেয়ারবাজারেও তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তাতে দ্রুত কমতে থাকে শেয়ারের দাম। সূচকও পড়ে যায়। এমন এক পরিস্থিতিতে বাজারের পতন ঠেকাতে গত জুলাইয়ে শেয়ারের সর্বনিম্ন মূল্যস্তর বেঁধে দেয় বিএসইসি। এতে শেয়ারের দাম নির্দিষ্ট একটি সীমায় আটকে যায়।

তাতে সূচকেরও পতন থামে। বাজারের পতন ঠেকাতে যে মূল্যস্তর আরোপ করা হয়েছিল, সেটিই এখন বাজারের জন্য গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ কারণে শেয়ারবাজারে ভালো ভালো কোম্পানির শেয়ারের লেনদেন বন্ধ হয়ে গেছে। লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর বেশির ভাগেরই দাম প্রতিদিন একই জায়গায় আটকে থাকছে।

Also Read: শেয়ারবাজার কি তবে আড়াই বছর পেছনে ফিরে গেল?

উদাহরণ হিসেবে বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ারের কথাই ধরা যাক। এটি মূলত বাজারে লেনদেনের শীর্ষে থাকা কোম্পানিগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি। গত নভেম্বর থেকে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম সর্বনিম্ন মূল্যস্তরে তথা ১১৫ টাকায় আটকে আছে। স্বাভাবিক বাজারে এককভাবে দিনে এ কোম্পানির কয়েক কোটি শেয়ারের হাতবদল হতো।

সেখানে প্রায় দুই মাস ধরে এটির হাতে গোনা কিছু শেয়ার হাতবদল হচ্ছে। গতকাল হাতবদল হয়েছে মাত্র ৭৫৪টি শেয়ার। একই অবস্থা ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, ব্র্যাক ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, বিএসআরএম লিমিটেড, গ্রামীণফোন, স্কয়ার ফার্মা, রেনেটা, লাফার্জহোলসিম, সিঙ্গার বাংলাদেশসহ ভালো মৌলভিত্তির অধিকাংশ শেয়ারের।

এ অবস্থায় বাজারে গতি ফেরাতে গত ২১ ডিসেম্বর ১৬৯ প্রতিষ্ঠানের সর্বনিম্ন মূল্যস্তর তুলে নেওয়া হয়। কিন্তু সেসব প্রতিষ্ঠান মূলত স্বল্প মূলধনি। বাজারে এসব প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক প্রভাব খুবই কম। আবার যেসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের মূল্যস্তর তুলে নেওয়া হয়েছে, সেগুলোতে সাধারণত প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিশ্রেণির বড় বিনিয়োগকারীরা খুব বেশি বিনিয়োগ করেন না। ফলে মূল্যস্তর তুলে নেওয়া হলেও তার খুব বেশি প্রভাব বাজারে পড়েনি।

বাজারের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, সর্বনিম্ন মূল্যস্তরই মূলত শেয়ারবাজারকে জটিল এক পরিস্থিতিতে নিয়ে গেছে। এমন এক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যে সর্বনিম্ন মূল্যস্তর বহাল রেখে বাজারে কিছুতেই গতি সঞ্চার করা যাবে না। আবার একসঙ্গে সব প্রতিষ্ঠানের সর্বনিম্ন মূল্যস্তর তুলে নিলে তাতে বড় ধরনের পতনেরও ঝুঁকি রয়েছে। তাই নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে এখন সার্বিক পরিস্থিতি মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

Also Read: চাপ সামলে ঘুরে দাঁড়াল শেয়ারবাজার

ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী মনে করেন, বিদ্যমান বাস্তবতায় একসঙ্গে সব কোম্পানির মূল্যস্তর তুলে না নিয়ে ধাপে ধাপে তা তুলে নেওয়ার পরিকল্পনা করা উচিত। সুনির্দিষ্ট একটি সময়সীমা ঘোষণা করে কাজটি করতে পারে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

আর মূল্যস্তর তুলে নেওয়ার পর হঠাৎ বাজারে যাতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে, সে জন্য দাম কমার একটি সীমাও বেঁধে দেওয়া যেতে পারে।

বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বর্তমানে মূল্যস্তরের কারণে অনেক বিনিয়োগকারী জরুরি প্রয়োজনেও শেয়ার বিক্রি করতে পারছেন না। কারণ, বাজারে ক্রেতা নেই। ক্রেতা ফিরিয়ে আনতে হলে বাজারকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরাতে হবে।

Also Read: শেয়ারবাজার কি ঊর্ধ্বমুখী ধারায় ফিরবে

এদিকে মূল্যস্তর তুলে নেওয়ার ক্ষেত্রেও নিয়ন্ত্রক সংস্থায় একধরনের শঙ্কা কাজ করছে। কারণ, সব প্রতিষ্ঠানের মূল্যস্তর তুলে নেওয়া হলে তাতে হঠাৎ বিক্রির চাপ বেড়ে যেতে পারে। ঋণ নিয়ে যাঁরা বাজারে বিনিয়োগ করেছেন, তাঁদের অনেকের শেয়ার জোরপূর্বক বিক্রি বা ফোর্সড সেলের আওতায় পড়তে পারে।

যাহোক, ঢাকার বাজারে গতকাল ৩৩২ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার লেনদেন হয়। এর মধ্যে দাম বেড়েছে কেবল ৪৪টির, কমেছে ১১৯টির, আর অপরিবর্তিত ছিল ১৬৯টির দাম।

Also Read: প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসইতে লেনদেনে বিলম্ব