Thank you for trying Sticky AMP!!

মডেল: রূপা

৪৬তম বিসিএস প্রিলিমিনারির পাশাপাশি লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি

৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা আগামী ২৬ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হবে। হাতে সময় খুবই কম। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার শেষ সময়ের প্রস্তুতির পাশাপাশি লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য পরামর্শ দিয়েছেন ৪৩তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে প্রথম স্থান অধিকারী শানিরুল ইসলাম শাওন

প্রিলিমিনারি পরীক্ষার শেষ সময়ে এসে নতুন বিষয় না পড়াই ভালো। আগের পড়াগুলো এখন দেখে নিতে পারেন। এই সময়ে বিষয়ভিত্তিক রিভিশন দিতে হবে। তবে এ রিভিশনটুকু যেন এমনভাবে হয়, যাতে আপনি লিখিত পরীক্ষার সময় এগিয়ে থাকতে পারেন। কারণ, প্রিলিমিনারি পরীক্ষা দেড় মাস পিছিয়ে যাওয়ায় লিখিত পরীক্ষার আগে কম সময় পাওয়া যাবে। তাই এখন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো ঠিক করে পড়তে পারলে লিখিত পরীক্ষার সময় একধাপ এগিয়ে থাকবেন।

রিভিশন দেয়ার সময় মনে না থাকা বা আপনার কাছে কঠিন মনে হওয়া তথ্য বা বিষয়গুলো কাগজে ছোট ছোট করে নোট করে নিন, যেন পরীক্ষার দু-এক দিন পূর্বে কম সময়ে তাতে একবার চোখ বুলিয়ে নেয়া যায়। দৈনিক দুটি করে মডেল টেস্ট দেওয়ার চেষ্টা করুন, যাতে মূল পরীক্ষায় সময় ব্যবস্থাপনা ভালো হয় এবং সময় না পাওয়া নিয়ে আফসোস করতে না হয়।

মডেল টেস্টগুলোতে আপনি কেমন নম্বর পাচ্ছেন, তা বিশ্লেষণ করুন। এ থেকে আপনি আপনার শক্তিমত্তা ও দুর্বলতা যাচাই করতে পারবেন।

মডেল টেস্ট দেওয়ার মাধ্যমে নেগেটিভ মার্কিং যথাসম্ভব কমিয়ে শূন্যে আনার চেষ্টা করুন।

প্রিলিমিনারি পরীক্ষার সিলেবাসে প্রায় প্রতিটি বিষয়ে পিএসসি নির্ধারিত এমন কিছু বিষয় আছে, যা লিখিত পরীক্ষার সিলেবাসেও থাকে। আপনার কাজ হবে এগুলো খুঁজে বের করা। এ বিষয়গুলো প্রিলিমিনারি পরীক্ষার সময় তুলনামূলক একটু জোর দিয়ে পড়লে বা গুছিয়ে নোট করে রিভিশন দিলে তা লিখিত পরীক্ষার ক্ষেত্রে অগ্রিম প্রস্ততি হিসেবে কাজ করবে। 

বাংলা

এই বিষয়ে প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় সাহিত্য ও ব্যাকরণ মিলিয়ে ৩৫ নম্বর থাকে। লিখিত পরীক্ষার ২০০ নম্বরের মধ্যে সাহিত্যে ৩০ ও ব্যাকরণে ৩০। এই ৬০ নম্বরের বেশির ভাগ প্রস্তুতিই আপনার প্রিলিমিনারিতে হয়ে যাবে। লিখিত সাহিত্য অংশের প্রশ্ন যেমনটা হয় (উদাহরণস্বরূপ—রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের তিনটি উপন্যাসের প্রধান চরিত্রগুলোর নাম লিখুন অথবা কাজী নজরুল ইসলামের তিনটি বিদ্রোহীমূলক কাব্যের পরিচয় দিন অথবা জীবনানন্দ দাশের কবিতায় প্রকৃতির স্বরূপ তুলে ধরুন, ইত্যাদি) তা অনেকটুকুই আপনি প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রস্তুতির সময় পাবেন। লিখিত ব্যাকরণে প্রশ্ন আসে—নিচের বাগধারাগুলোর অর্থসহ বাক্য রচনা করুন অথবা বানানশুদ্ধি নির্ণয় করুন। এই বিষয়গুলো প্রিলিমিনারি থেকে হুবহু পড়া যায়। তাই প্রিলিমিনারির সময় পড়াগুলো একটু গুছিয়ে বই দাগিয়ে বা খাতায় নোট করে নিতে পারেন।

Also Read: প্রিলিমিনারিতে ইংরেজির প্রস্তুতি নেবেন যেভাবে

বাংলাদেশ বিষয়াবলি

লিখিত পরীক্ষায় বাংলাদেশ বিষয়াবলির ২০০ নম্বরের মধ্যে বেশ কিছু বিষয়, যেমন বাংলাদেশের ভূতাত্ত্বিক গঠন, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী, সরকারব্যবস্থা, সংবিধান, ১৯৪৭-১৯৭১ পর্যন্ত স্বাধীনতার ধাপগুলো, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ব্যবস্থাপনা, অর্থনৈতিক বিষয় ইত্যাদি বিষয় আপনাকে প্রিলিমিনারির সময়েই পড়তে হবে। তাহলে একই পড়া আপনি কেন বারবার নতুন করে পড়বেন? বরং প্রিলিমিনারির সময় পড়াগুলো একটু বড় পরিসরে গল্পের মতো করে পড়ে নেবেন, যাতে তথ্যও জোগাড় হয়, আবার তার পেছনের গল্পটুকুও জানা যায়। এতে প্রিলিমিনারির জন্য খুঁটিয়ে পড়ে এমসিকিউতে ভালো করার পাশাপাশি লিখিত পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতিও হয়ে যাবে। লিখিত পরীক্ষার সময় এই পড়াগুলো পড়ার মাধ্যমে আপনার রিভিশন হয়ে যাবে। এ জন্য বিষয়ভিত্তিক নোট করার চেষ্টা করুন। যেমন ১৯৬৯–এর গণ–অভ্যুত্থানের সময় কবে কোন তারিখে কী হয়েছিল, কোন দিনের ঘটনাবলির সঙ্গে কোন ব্যক্তিত্ব জড়িত, তা ছোট ছোট করে নোট নিয়ে নিন।

Also Read: বিসিএসের কোন ধাপে পাস করা কঠিন

আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি

একটু মনোযোগ দিন আপনার সিলেবাসে। খেয়াল করে দেখুন, প্রিলিমিনারির সিলেবাসে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সংগঠন (যেমন জাতিসংঘ, বিশ্ব ব্যাংক, এশীয় ব্যাংক, সার্ক ইত্যাদি), বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন, পরিবেশ ও জলবায়ু ইস্যু, বিভিন্ন দেশ সম্পর্কে সাধারণ তথ্য ইত্যাদি বেশ কিছু আলোচ্য বিষয় খুঁজে পাবেন। মজার ব্যাপার, এ বিষয়গুলো আপনাকে লিখিত পরীক্ষার আগে আবার পড়তে হবে। তাই এ পড়া যেন প্রথম থেকেই একটু গুছিয়ে পড়া হয়। তা ছাড়া বিশ্ব ম্যাপ নিয়ে সামগ্রিক এবং অঞ্চলভিত্তিক ধারণা নেবেন প্রিলির সময় থেকেই, যাতে করে এ জ্ঞান আপনার আন্তর্জাতিকের লিখিত খাতায় সুন্দর সুন্দর ম্যাপ আঁকতে সাহায্য করে।

গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা

যাঁরা প্রশ্ন নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করেছেন, ইতিমধ্যেই তাঁরা হয়তো মিল খুঁজে পাবেন যে মানসিক দক্ষতার ক্ষেত্রে আপনি ১৫ নম্বরের জন্য যা পড়েন, বা যে সহায়ক বইটা পড়েন, লিখিত পরীক্ষার ৫০ নম্বরের ক্ষেত্রে আপনাকে অন্য কিছু বা অন্য কোনো বই পড়তে হয় কি? উত্তর হচ্ছে না। মানসিক দক্ষতার বইটা যেন আপনি প্রিলিমিনারি পরীক্ষার আগেই একাধিকবার পড়ে শেষ করতে পারেন, সে বিষয়ে আপনার পরিকল্পনা সাজিয়ে নিন। পরে লিখিত মানসিক দক্ষতা পরীক্ষার আগে আপনি অল্প সময়ে শুধু রিভিশন দিয়েই পরীক্ষার হলে বসতে পারবেন।

Also Read: ৪১তম বিসিএস শেষ হতে যে কারণে সাড়ে চার বছর লাগছে

গাণিতিক যুক্তির ক্ষেত্রে জ্যামিতিক কিছু সমস্যা ছাড়া (যেমন সম্পাদ্য ও উপপাদ্য) অন্যান্য প্রায় সব বিষয় প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষার সিলেবাসে থাকে। পার্থক্য এটাই যে এমসিকিউ সমাধান করার সময় আপনাকে দ্রুত সমস্যার সমাধান করে উত্তর দাগাতে হবে। আর লিখিত উত্তরপত্রে সম্পূর্ণ সমস্যাটার সমাধান লিখে উপস্থাপন করতে হবে। তাই শুরু থেকে শুধু গাণিতিক শর্টকাট নিয়ে মাথা ঘামাবেন না। আগে সূত্র প্রয়োগ করে কীভাবে সমস্যার সমাধান করতে হয়, তা শিখুন। যখন নিয়ম আয়ত্তে আসবে, তারপর আপনি শর্টকাট শিখবেন এমসিকিউতে সময় বাঁচানোর জন্য। আপনার বুঝে গণিত করার এ সুফল আপনাকে লিখিত পরীক্ষার সময় এক ধাপ এগিয়ে রাখবে। আর মনে রাখবেন, গণিত নিয়মিত চর্চার বিষয়। তাই প্রতিদিন গণিত অনুশীলন করুন।

সাধারণ বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি

লিখিত পরীক্ষার এ বিষয়ের ১০০ নম্বর তিনভাগে বিভক্ত। সাধারণ বিজ্ঞান অংশে ৬০ নম্বর, কম্পিউটার অংশে ২৫ নম্বর এবং তড়িৎকৌশল অংশে ১৫ নম্বর থাকে। এর মধ্যে তড়িৎকৌশল অংশের ১৫ নম্বর পড়া তুলনামূলক কঠিন। লিখিত পরীক্ষার পূর্বে এ অংশ আপনাকে ভালোভাবে পড়তে হবে। কিন্তু আপনার কম্পিউটার অংশের ২৫ নম্বরের প্রস্তুতি প্রিলিমিনারির সময়েই হয়ে যাবে। শুধু একটু মনোযোগ দিয়ে বিষয়গুলো বিস্তারিত পড়ে নিতে হবে। 

Also Read: ৪৬তম বিসিএস: প্রিলিমিনারিতে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রস্তুতি নেবেন যেভাবে

কম্পিউটারের বিভিন্ন খুঁটিনাটি বিষয়, প্রসেসিং ইউনিট ও সিস্টেম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, অপারেটিং সিস্টেম ও সফটওয়্যার ইত্যাদি প্রায় সব বিষয়ের আলোচনাই উভয় পরীক্ষায় হুবহু একইভাবে থাকে। তাই শুরু থেকেই শুধু বৃত্ত ভরাটের জন্য না পড়ে লিখে উপস্থাপন করার মতো করে পড়াগুলো পড়বেন, যেন লিখিত ধাপে পড়াগুলো চাপ না বাড়িয়ে রিভিশন হিসেবে কাজ করে। সাধারণ বিজ্ঞানে আলোচ্য বিষয় হিসেবে পাবেন অ্যাসিড, ক্ষার, সাম্যাবস্থা, আলো, শব্দ, চুম্বক ও চৌম্বকত্ব, সম্পদ ও এর ব্যবহার, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি, রোগ ও তার প্রতিকার, বিভিন্ন রোগনির্ণয় পদ্ধতি, মানবদেহ ও অঙ্গসংগঠন ইত্যাদি। 

ইংরেজি

ইংরেজি লিখিত পরীক্ষার ২০০ নম্বরের মধ্যে আপনি বেশ ভালো নম্বর নিশ্চিত করতে পারবেন ভালো পরীক্ষা দেওয়ার মাধ্যমে। এ জন্য আপনাকে ফ্রি হ্যান্ড রাইটিং চর্চা করতে হবে। প্রিলিমিনারির সময় শুধু অবজেক্টিভ বেইজড পড়া না পড়ে ব্যাকরণ, সেনটেন্স বিল্ডিংয়ের নিয়ম, ভোকাবুলারি, সিনোনিমস ও অ্যান্টোনিমস ভালোভাবে পড়লে ইংরেজির প্রস্তুতি ভালো হয়। তখন এ মৌলিক জ্ঞানের পাশাপাশি নিয়মিত অনুবাদচর্চা লিখিত উত্তরপত্রে আপনার মনের ভাব প্রকাশে (ফ্রি হ্যান্ড রাইটিংয়ে) সহায়ক হবে। তাই প্রিলিমিনারির পড়া ভালোভাবে চর্চা করলে তা লিখিত পরীক্ষার প্রথমাংশের ১০০ নম্বরের প্রশ্ন বুঝে উত্তর করাকে সহজতর করবে। আর বিসিএস প্রস্তুতি শুরু করার কিছুদিন পর থেকেই ইংরেজি পত্রিকা পড়ার অভ্যাস করুন।