৪৬তম বিসিএস: প্রিলিমিনারিতে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রস্তুতি নেবেন যেভাবে

৪৬তম বিসিএসে চাকরি পেতে আবেদন করেছেন ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬০৮ জন। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য পরামর্শ দিয়েছেন ৪১তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত মো. রিয়াজ উদ্দিন। আজ প্রথম পর্বে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রস্তুতির পরামর্শ প্রকাশ করা হলো।

প্রিলিমিনারিতে পাস করতে নিয়মিত পড়তে হবে। মডেল: লিজা, রূপা ও শিশিরছবি: খালেদ সরকার

বিসিএস পরীক্ষার তিনটি ধাপের মধ্যে প্রথম ধাপ প্রিলিমিনারি পরীক্ষা। এ ধাপ বেশি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ প্রিলিমিনারিতে নির্বাচিত না হলে বাকি দুই ধাপে যেতে পারবেন না। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় মোট ২০০ নম্বরের মধ্যে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য থেকে ৩৫টি প্রশ্ন থাকে। বাংলা ভাষা থেকে ১৫টি ও বাংলা সাহিত্য থেকে ২০টি।

 

বাংলা সাহিত্য

বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন ও মধ্যযুগ থেকে ৫ নম্বর এবং আধুনিক যুগ ও পত্রপত্রিকা থেকে ১৫ নম্বরের প্রশ্ন থাকে।

 

প্রাচীন যুগ

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে প্রাচীন যুগের একমাত্র নিদর্শন চর্যাপদ। চর্যাপদসংক্রান্ত সব তথ্য পড়তে হবে। চর্যাপদ সম্পর্কে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ও সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতামত এবং তাঁদের রচনাবলি সম্পর্কে জানতে হবে। প্রাচীন যুগ থেকে প্রতি বিসিএসেই ১ বা ২ নম্বরের প্রশ্ন থাকে।

মধ্যযুগ

মধ্যযুগ থেকে শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য, মঙ্গলকাব্য, জীবনী সাহিত্য, পুঁথি ও লোকসাহিত্য, রোমান্টিক প্রণয়োপাখ্যান, আরাকান রাজসভায় বাংলা সাহিত্য এবং যুগ সন্ধিক্ষণ সম্পর্কে ভালোভাবে পড়তে হবে। এই যুগ থেকে প্রতি বিসিএসেই ৩ থেকে ৪ নম্বরের প্রশ্ন আসে।

আরও পড়ুন

আধুনিক যুগ

আধুনিক যুগের শুরুতে কিছু সাহিত্যবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ও বিখ্যাত ব্যক্তির অবদান রয়েছে, তাঁদের সম্পর্কে জানা আবশ্যক। যেমন ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ, হিন্দু কলেজ, মুসলিম সাহিত্য সমাজ, বাংলা একাডেমি, ইয়ংবেঙ্গল, রাজা রামমোহন রায় ও উইলিয়াম কেরি।

 

গুরুত্বপূর্ণ লেখক-সাহিত্যিক

আধুনিক যুগের প্রধান প্রধান লেখক-সাহিত্যিকদের জীবনী ও সাহিত্যকর্ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলামের সাহিত্যকর্ম থেকে প্রতি বিসিএসেই একাধিক প্রশ্ন থাকে। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন হলেন—জসীমউদ্‌দীন, রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, শওকত ওসমান, মীর মশাররফ হোসেন, মুনীর চৌধুরী, হুমায়ূন আহমেদ, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, সৈয়দ শামসুল হক, প্রমথ চৌধুরী, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মানিক বন্দোপাধ্যায়, জীবনানন্দ দাশ, জহির রায়হান, সুফিয়া কামাল, শামসুর রাহমান, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ, সেলিম আল দীন, ফররুখ আহমদ, সেলিনা হোসেন ও আহসান হাবীব। এ ছাড়া আরও অনেক কবি, সাহিত্যিক, ঔপন্যাসিক ও নাট্যকার রয়েছেন, যাঁদের সব সাহিত্যকর্ম পড়তে না পারলেও কেবল বিখ্যাত সাহিত্যকর্মটি ভালোভাবে পড়তে পারেন। যেমন নাট্যকার নুরুল মোমেনের ‘নেমেসিস’ নাটকটি বিখ্যাত। তাঁর অন্যান্য নাটক সম্পর্কে না পড়লেও এই বিখ্যাত নাটকটি ভালোমতো পড়ে নিতে হবে।

ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ও দেশভাগের পটভূমিতে রচিত বিখ্যাত উপন্যাস, কবিতা, প্রবন্ধ, স্মৃতিকথা এবং অন্যান্য সাহিত্যকর্ম সম্পর্কে অবশ্যই পড়তে হবে। বিখ্যাত কবি-সাহিত্যিকদের উপাধি, ছদ্মনাম, প্রকৃত নাম ও বিখ্যাত উক্তি পড়তে হবে। বাংলা সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য কাব্য, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহিনি ও আত্মজীবনী সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে। বাংলা সাহিত্যের যুগ বিভাজন সম্পর্কেও জেনে নিতে হবে। বিখ্যাত নাটক, উপন্যাস, গান, প্রবন্ধ প্রভৃতির লেখক, চরিত্র ও বিষয়বস্তু থেকে প্রতি বিসিএসেই বেশ কিছু প্রশ্ন আসে। তাই এগুলো ভালোমতো রপ্ত করতে হবে।

আরও পড়ুন

বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত পত্রপত্রিকা থেকে প্রতিনিয়তই প্রশ্ন আসে। দিগদর্শন, সমাচার দর্পণ, সংবাদ প্রভাকর, তত্ত্ববোধিনী, রংপুর বার্তাবহ, বঙ্গদর্শন, সবুজপত্র, সওগাত, নবযুগ, ধূমকেতু, কল্লোল, শিখা, পূর্বাশা, কবিতা, বেগম, চতুরঙ্গ সহ গুরুত্বপূর্ণ সংবাদপত্রের প্রকাশকাল, সম্পাদক এবং অন্য তথ্যগুলো পড়তে হবে।

দেশাত্মবোধক বিখ্যাত গানের গীতিকার ও অঞ্চলভিত্তিক বাংলা লোকসংগীত সম্পর্কে জানতে হবে। একই নামের একাধিক সাহিত্যকর্মগুলো গুরুত্ব সহকারে শিখে নিতে হবে। বাংলা সাহিত্যে যা কিছু প্রথম, সেগুলোও জেনে নেবেন।

বাংলা সাহিত্যের পরিধি অনেক বিস্তৃত। লেখক-সাহিত্যিকদের সব সাহিত্যকর্ম বিস্তারিত পড়া প্রায়ই অসম্ভব। তাই অপ্রয়োজনীয় তথ্য বাদ দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো পড়ার চেষ্টা করবেন।

বাংলা ভাষা

উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত বাংলা ভাষা ও ব্যাকরণ নিয়ে যা কিছু পড়া হয়েছে, সেসব থেকেই বিসিএস ও অন্যান্য চাকরির পরীক্ষায় প্রশ্ন করা হয়। তাই মোটামুটি ভালো প্রস্তুতি থাকলে এই অংশে খুব ভালো নম্বর ওঠানো সম্ভব হবে। প্রথমেই বিসিএস প্রিলিমিনারির জন্য বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের সিলেবাসে কোন কোন টপিক অন্তর্ভুক্ত আছে, সেগুলো ভালোভাবে দেখে নিন। এরপর ৩৫-৪৫তম বিসিএস প্রিলিমিনারির আগের সব প্রশ্ন ব্যাখ্যাসহ পড়ুন। এই অংশের ভালো প্রস্তুতির জন্য নবম–দশম শ্রেণির বাংলা ব্যাকরণ বোর্ড বই অনুসরণ করুন।

আরও পড়ুন

গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়

সিলেবাসের বিষয়গুলোর মধ্যে যেসব বিষয়ে প্রায় প্রতি বিসিএসেই প্রশ্ন আসে, সেগুলো হলো—ধ্বনি, শব্দ, সন্ধি, প্রত্যয়, সমাস, বাক্য, বানান ও বাক্যশুদ্ধি, পরিভাষা, সমার্থক ও বিপরীতার্থক শব্দ। এগুলোর মধ্যে ধ্বনি, শব্দ, বানান ও বাক্যশুদ্ধি থেকে সবশেষ বিসিএসগুলোয় সবচেয়ে বেশি প্রশ্ন এসেছে। এ ছাড়া বিসিএসের সিলেবাসে নেই, এমন কিছু বিষয় থেকে প্রায়ই প্রশ্ন আসতে দেখা যায়। সেগুলো হচ্ছে—বাংলা ভাষা ও ব্যাকরণের পটভূমি, বাগ্‌ধারা, এককথায় প্রকাশ, শব্দের বিশিষ্ট প্রয়োগ, উপসর্গ, কারক ও বিভক্তি।

বাংলা ব্যাকরণবিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ, যুক্তবর্ণ, প্রয়োগ-অপপ্রয়োগ, বিরাম চিহ্ন, ণত্ব ও ষত্ব বিধান, ধাতু, বচন, পুরুষ, অনুসর্গ এবং অন্যান্য কিছু বিষয়ও পড়ে নিতে পারেন। বিদেশি শব্দের মধ্যে তুর্কি, ফরাসি, পর্তুগিজ, হিন্দি, আরবি, ফারসি ও মিশ্র শব্দগুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। প্রতি বিসিএসেই এগুলো থেকে দুই–একটি প্রশ্ন আসে।

আরও পড়ুন

বাংলা ভাষা ও সাহিত্য অংশে ভালো করার জন্য নিয়মিত অনুশীলন করতে হবে। বিসিএস ও অন্যান্য নিয়োগ পরীক্ষার আগের প্রশ্নগুলো চর্চা করতে হবে। নিজেকে যাচাইয়ের জন্য বেশি বেশি পরীক্ষা দেবেন। এতে আপনার দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে এবং অনাকাঙ্ক্ষিত ভুলের সংখ্যা ধীরে ধীরে কমে আসবে। সবার জন্য শুভকামনা।