Thank you for trying Sticky AMP!!

সুপারিশের ১০ মাসেও নিয়োগপত্র দিচ্ছে না রূপালী ব্যাংক

সমন্বিত ৯টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে অফিসার (সাধারণ) পদে জনবল নিয়োগের জন্য ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি। আটটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ কার্যক্রম শেষে প্রার্থীদের নিয়োগ দিলেও রূপালী ব্যাংকে যাঁরা সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন, তাঁরা এখনো নিয়োগপত্র পাননি।

রূপালী ব্যাংকে নিয়োগের জন্য যাঁরা সুপারিশ পেয়েছেন, তাঁদের অনেকের চাকরির বয়স শেষ। আবার অনেকের এটাই ছিল শেষ চাকরির পরীক্ষা। তাঁরা নিয়োগপত্রের জন্য ১০ মাস ধরে রাজধানীর মতিঝিলে রূপালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে যাচ্ছেন। রূপালী ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগ থেকে প্রতিবার বলা হয়, দ্রুত নিয়োগপত্র দেওয়া হবে। কিন্তু ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও নিয়োগপত্র দেওয়া হয়নি।

সবশেষ গত অক্টোবরে সুপারিশপ্রাপ্ত ৫০ জনের বেশি চাকরিপ্রার্থী রূপালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে যান ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে দেখা করতে। কিন্তু তাঁদের দেখা করতে দেওয়া হয়নি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সুপারিশপ্রাপ্ত একজন প্রার্থী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমডি স্যারের সঙ্গে আমাদের দেখা করার অনুমতি না দিয়ে মানবসম্পদ বিভাগে পাঠানো হয়। মানবসম্পদ বিভাগে গেলে আমাদের আগের মতো বলা হয় দ্রুত নিয়োগপত্র দেবে। কিন্তু কবে দেবে, সেটা নির্দিষ্ট করে বলে না। আমরা যতবারই গেছি দেখা করতে, ততবারই একই কথা বলে দ্রুত নিয়োগপত্র দেবে। ফোন দিলেও একই কথা বলে।’

Also Read: ৪৫তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা ২৭ নভেম্বর থেকেই নেবে পিএসসি

ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি সচিবালয় সূত্রে জানা যায়, সিলেকশন কমিটির সদস্যভুক্ত ৯ ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সমন্বিতভাবে ২ হাজার ৪৬ জন অফিসার (জেনারেল) পদে নিয়োগের জন্য ২০২০ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংক লিমিটেডে ৩১৫ জন, জনতা ব্যাংক লিমিটেডে ৩৬৯, রূপালী ব্যাংক লিমিটেডে ৪৭০, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেডে ১৪, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে ৫৩০, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে ২৮৯, বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফিন্যান্স করপোরেশনে ৪৭, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশে ৫ ও কর্মসংস্থান ব্যাংকে ৭ জন।

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দুই বছর পর গত বছরের ৭ জানুয়ারি প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নেওয়া হয়। প্রিলিতে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় গত বছরের ১৮ মার্চ। লিখিত পরীক্ষার ফল দেওয়া হয় গত বছরের ৫ মে। এরপর মৌখিক পরীক্ষা শেষে চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি নিয়োগের জন্য নির্বাচিত প্রার্থীদের সুপারিশ করা হয়।

ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি চূড়ান্ত ফল প্রকাশের পর বাকি নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করে নিজ নিজ ব্যাংকগুলো। চূড়ান্ত ফলের এক মাসের মধ্যে পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়াই প্রার্থীদের নিয়োগপত্র দিয়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। এ ছাড়া ফলের তিন মাসের মধ্যে পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়াই সুপারিশ পাওয়া প্রার্থীদের নিয়োগপত্র দেয় সোনালী ও জনতা ব্যাংক।

Also Read: ইউনিয়ন সমাজকর্মীর চাকরিপ্রার্থীদের অপেক্ষার শেষ কবে

নিয়োগের পর তাঁদের পুলিশ ভেরিফিকেশন হয়। বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড ও কর্মসংস্থান ব্যাংক নিয়োগপত্র দিয়েছে মে মাসে, বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফিন্যান্স করপোরেশন জুলাইয়ে এবং ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক দিয়েছে গত সেপ্টেম্বরে। কিন্তু রূপালী ব্যাংক গত ১০ মাসেও সুপারিশ পাওয়া ৪৭০ প্রার্থীকে নিয়োগপত্র দেয়নি। চাকরির জন্য মনোনীত হয়ে ১০ মাসের বেশি সময় পরও নিয়োগপত্র না পাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন তাঁরা।

রূপালী ব্যাংকে সুপারিশ পাওয়া একজন প্রার্থী প্রথম আলোকে বলেন, ‘একটি নিয়োগপত্রের জন্য ৪৭০টি পরিবার চাতক পাখির মতো অপেক্ষা করছে। কিন্তু ব্যাংক কর্তৃপক্ষের আমাদের নিয়ে যেন কোনো ভাবনা নেই। আমরা সামাজিক ও ব্যক্তিগতভাবে হেয়প্রতিপন্ন হচ্ছি। অনেকে আমাদের ভুয়া ভাবছে। নিয়োগপত্র হাতে না পাওয়ায় চাকরি পাওয়ার প্রমাণ দিতে পারছি না। মেধা ও যোগ্যতা দিয়ে চাকরি পেয়েও অপমানজনক পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হচ্ছে।’

এ বিষয়ে জানতে রূপালী ব্যাংকে যোগাযোগ করা হলে ব্যাংকটির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির সদস্যভুক্ত অন্য ব্যাংকগুলোয় নিয়োগ দেওয়ার পর প্রার্থীদের পুলিশ ভেরিফিকেশন করা হয়। আমরা পুলিশ ভেরিফিকেশনের পর নিয়োগপত্র দিই। নিয়োগের পর পুলিশ ভেরিফিকেশন করলে কিছু ঝামেলা হয়।

Also Read: ৪১তম বিসিএসে নন–ক্যাডারের পদ সাড়ে তিন হাজারের বেশি

কোনো প্রার্থীর নেতিবাচক পুলিশ প্রতিবেদন এলে সেই প্রার্থীর নিয়োগ বাতিল করতে হয়। সম্প্রতি একটি ব্যাংকে এ রকম ঘটনা ঘটেছে। তাই আমরা নিয়োগের আগেই পুলিশি প্রতিবেদন দেখি। এ জন্য নিয়োগপত্র দেওয়ার ক্ষেত্রে অন্যান্য ব্যাংকের চেয়ে আমাদের দুই থেকে তিন মাসের পার্থক্য থাকে। কারণ, পুলিশ ভেরিফিকেশন শেষ করতে সময় লাগে।’

সুপারিশ পাওয়া প্রার্থীরা কবে নিয়োগপত্র পেতে পারেন, এমন প্রশ্নের জবাবে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘৪৭০ জনের নিয়োগ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। শুধু চার থেকে পাঁচজনের পুলিশ ভেরিফিকেশন বাকি আছে। তাঁদের প্রতিবেদন আসার পর আমরা এ মাসের শেষে বা আগামী ডিসেম্বরে নিয়োগপত্র দিতে পারব বলে আশা করছি।’