শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি যে কারণে আলাদা
বিশাল করিডরের এক পাশে কয়েকটা ম্যানিকিন দাঁড় করানো। ঠিক সামনেই দাঁড়িয়ে রং আর কাপড়ের মাপ নিয়ে আলোচনা করছে একদল শিক্ষার্থী। শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজির ডিজাইন অ্যান্ড টেকনোলজি অনুষদের এটা চেনা দৃশ্য। ‘সৃজনশীল’ বলেই হয়তো এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তুলনায় একটু আলাদা। ক্যাম্পাস ঘুরতে গিয়ে তাই শিক্ষার্থীদের হাতে রংতুলি, কাঁচি-স্কেল থেকে শুরু করে গিটারও চোখে পড়ল।
ঢাকার উত্তরার ১৭ নম্বরের সেক্টরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থায়ী ক্যাম্পাস। ৫ এপ্রিল ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়টির চেয়ারম্যান, চিত্রশিল্পী মোস্তাফিজুল হকের সঙ্গে কথা হলো। তিনি বলছিলেন, ‘দেশে সৃজনশীল শিক্ষার বিকাশের লক্ষ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষাবিদ ইমামুল কবীর শান্ত ২০০৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক পরিস্থিতিকে গুরুত্ব দিয়েই শিক্ষার্থীদের আগামীর মানবসম্পদ হিসেবে তৈরি করছি আমরা।’
একাডেমিক পাঠ্যক্রমের পাশাপাশি ক্লাব কার্যক্রমের মাধ্যমেও এখানে সৃজনশীলতার চর্চা করেন শিক্ষার্থীরা। রুখসাত ফাতিমা ও আকিবুল ইসলাম যেমন ফটোগ্রাফি ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত আছেন। রুখসাত বলেন, ‘অনেক সময় দেখা যায়, ক্লাসে বইয়ের বাইরের সাম্প্রতিক কোনো বিষয় নিয়ে আমরা আলোচনা করছি। অথবা ক্লাসরুমের কোনো বিষয় আমরা করিডরে এনে দেয়াললিখন, পোস্টার তৈরির মাধ্যমে উপস্থাপন করছি।’ বোঝা গেল, পড়ালেখাটা তাঁরা ক্লাসরুমের গণ্ডিতে বেঁধে ফেলতে চান না।
বিতর্ক ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত পার্থ বিশ্বাস বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা যেন দক্ষ বক্তা হতে পারে, সৃজনশীল উপস্থাপক হতে পারে, সেই বিষয়গুলোতে আমরা নজর দিই।’ ক্যারিয়ার ক্লাব, ফ্যাশন ডিজাইন ক্লাবসহ নানা সংগঠনের মধ্য দিয়ে নেতৃত্বের চর্চা চলছে পুরোদমে।
Also Read: আইইউবিতে বৃত্তিসহ নানা সুযোগ
Also Read: বাবা, তোমার মেয়ে পোল্যান্ড যাচ্ছে
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. শাহ্-ই-আলম বলেন, ‘বাংলাদেশের বড় শক্তি হচ্ছে তারুণ্য। বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণদের আগামীর জন্য তৈরি করতেই কাজ করছে শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি। সৃজনশীল বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা ও মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। আমাদের ছাত্রছাত্রীরা একদিকে কর্মবাজারের জন্য তৈরি হচ্ছে, অন্যদিকে উদ্যোক্তা হিসেবেও আমরা তাদের প্রস্তুত করছি। শিক্ষার্থীরা যেন নতুন জ্ঞান তৈরি করতে পারে, সেই লক্ষ্যে আমরা গবেষণার সুযোগও তৈরি করেছি।’
জান্নাতুন নাঈম নামের এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হলো। ভবিষ্যতে ফ্যাশন উদ্যোক্তা হতে চান তিনি। বললেন, ‘বিভিন্ন সময় পোশাক থেকে শুরু করে নানা বিষয় আমাদের প্রদর্শনী আকারে উপস্থাপন করতে হয়। শিক্ষাসফরের অংশ হিসেবে আমরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যাই, চলতি ফ্যাশন কিংবা ব্যবসার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জানতে পারি। এই প্রশিক্ষণগুলো আমাকে ভবিষ্যতের জন্য তৈরি হতে সাহায্য করছে।’
ফ্যাশন ডিজাইন অ্যান্ড ক্রিয়েটিভ টেকনোলজির শিক্ষার্থী সানা স্নিগ্ধাও উদ্যোক্তা হতে চান। বলছিলেন, ‘এখন চতুর্থ বর্ষে পড়ছি। এরই মধ্যে প্রায় আড়াই শর বেশি পোশাকের নকশা করেছি। কদিন আগেও প্রজাপতি থিমের ওপর একটা ড্রেস ডিজাইন করলাম। আমাদের ক্যাম্পাসে সারা বছর কোনো না কোনো আয়োজন লেগেই থাকে। বসন্ত উৎসবে যেমন ফ্যাশন উৎসব হলো। এখন আবার পয়লা বৈশাখের প্রস্তুতি চলছে। এসব খুব উপভোগ করি। কোর্স ওয়ার্কের অংশ হিসেবে নিজেদের নকশা করা পোশাকগুলোর একটা প্রদর্শনী করারও পরিকল্পনা করছি আমরা।’
শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজিতে ডিজাইন অ্যান্ড টেকনোলজি, ফাইন অ্যান্ড পারফর্মিং আর্টস এবং ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড জেনারেল স্টাডিজ—এই তিন অনুষদে পড়ার সুযোগ পাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। প্রোডাক্ট ডিজাইন কিংবা রবীন্দ্র, নজরুল ও ধ্রুপদি সংগীত নিয়েও এখানে পড়ার সুযোগ পাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।