Thank you for trying Sticky AMP!!

তরুণ উদ্যোক্তা রায়ানা হোসেন

নতুন প্রজন্মের উদ্যোক্তা রায়ানা হোসেন

প্রতি বাংলা নববর্ষের মতো ১৪৩১ সনেও দেশের ক্রীড়া, চলচ্চিত্র, ডিজিটাল মঞ্চ, ব্যবসা, গবেষণাসহ নানা ক্ষেত্রের তরুণ প্রতিভাবানদের নিয়ে হাজির হয়েছে প্রথম আলোর শনিবারের ক্রোড়পত্র ‘ছুটির দিনে’। একঝাঁক উজ্জ্বল তরুণদের নিয়ে আজ ছাপা হয়েছে দুই পাতার এই বিশেষ আয়োজন। যেখানে উদ্যোক্তা রায়ানা হোসেনকে নিয়ে লিখেছেন প্রথম আলো চিফ ডিজিটাল বিজনেস অফিসার জাবেদ সুলতান

রায়ানা হোসেন তৃতীয় প্রজন্মের উদ্যোক্তা। ‘সেই ১৯৫৩ সালে’ রক্সি পেইন্ট দিয়ে শুরু করেছিলেন তাঁর দাদা। সেই ব্যবসাকে পোশাকশিল্পে প্রসারিত করেছেন তাঁর বাবা। আর এরই ধারাবাহিকতায় নতুন কিছু করতে চেয়েছেন তিনি। নিজের ভালো লাগার বিষয় ‘ডিজাইন’কে ঘিরে শুরু করলেন নতুন ধারার আসবাব–উদ্যোগ। মাত্র পাঁচ বছরে গ্রাহক–চাহিদা, অভিনব ডিজাইন আর স্বতন্ত্র ব্যবসায়িক কৌশল কাজে লাগিয়ে বাজারে আলাদা জায়গা করে নিয়েছে ‘ইশো’। বাংলাদেশি জনপ্রিয় ফার্নিচার ব্র্যান্ডটির প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক রায়ানা হোসেন।

ল্যান্ডস্কেপ আর্কিটেকচারে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর করেছেন রায়ানা হোসেন। ইউনিভার্সিটি অব টরন্টো থেকে আর্কিটেকচার ও ভিজ্যুয়াল আর্টসে করেছেন স্নাতক। চিত্রকলা তাঁকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করে। বাংলাদেশি শিল্পী আর পেইন্টিংকে সারা পৃথিবীর সামনে তুলে ধরতে চান তিনি। তৈরি করতে চান নতুন বাজার আর পরিচিতি। সেই স্বপ্ন থেকে সম্প্রতি শুরু করেছেন ‘প্ল্যাট-ফর্মস’। অনলাইন এই আর্ট গ্যালারি ও মার্কেটপ্লেসে দেশের প্রথিতযশা শিল্পীদের ছবির পাশাপাশি প্রদর্শিত হচ্ছে নতুন শিল্পীদের কাজ।

পড়াশোনা শেষ করে দেশে ফেরার পর যখন আবাসন ব্র্যান্ড নিয়ে কাজ শুরু করলেন রায়ানা; দেখলেন, এখানে একটি ফাঁকা জায়গা আছে। বিশেষ করে গ্রাহকদের একটি বড় অংশ আধুনিক ফার্নিচারের বিদেশি ডিজাইনে প্রভাবিত হন। সেই সঙ্গে দেশে তরুণদের জীবনধারায় আসছে নতুনত্ব, রুচি আর ডিজাইন-চাহিদার পরিবর্তন হচ্ছে। কিন্তু তাঁর মনে হলো, বাংলাদেশি আসবাব প্রতিষ্ঠানগুলো এসব বিষয় নিয়ে ওভাবে ভাবছে না। দেখতে পেলেন নতুন কিছু করার ব্যবসায়িক সম্ভাবনা। শুরু করলেন মিনিমালিস্টিক ডিজাইনের দৃষ্টিনন্দন ফার্নিচার ডিজাইন। শুরু থেকেই অনলাইনে কেনাকাটায় জোর দিলেন। সে কারণেই হয়তো করোনাকালে রায়ানার ‘ইশো’ বেড়ে বড় হলো কয়েক গুণ। তখন তাঁর মনে হতো, ঢাকার মতো বড় শহরেই মূলত গ্রাহক পাবেন। কিন্তু ছোট শহরেও সমান হারে গ্রাহক বাড়াতে লাগল ইশো।

Also Read: ‘রাফসান দ্য ছোটভাই’কে নিয়ে আয়মান সাদিকের লেখা

ইশো যেহেতু বড় একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বিক্রয় কার্যক্রম চালায়; তাই গ্রাহকদের নানা তথ্য বিশ্লেষণ করার বাড়তি সুযোগ পায় তারা। বাংলাদেশের এক অঞ্চলের মানুষের পছন্দ ও চাহিদার সঙ্গে আরেক অঞ্চলের চাহিদায় ভিন্নতা আছে। ডিজাইন আর সরবরাহে সেই তথ্যগুলো কাজে লাগিয়ে তথ্যভিত্তিক ডিজাইন ও উৎপাদনের নতুন এক সমীকরণ তৈরি করে ইশো।

রায়ানা খেতে ভালোবাসেন। নতুন নতুন জায়গায় নতুন ধরনের খাবার তাঁর ভীষণ প্রিয়। সেই ভালো লাগা থেকেই ঢাকায় একটা রেস্তোরাঁ করার ইচ্ছা হলো। ইশোর কারখানা তৈরি হচ্ছিল তখন, হাতের কিছুটা সময় কাজে লাগিয়ে তিনি গড়ে তোলেন ‘ইজাকায়া’। জাপানি খাবারের এই ফিউশন রেস্তোরাঁর ধানমন্ডি আর উত্তরায় শাখা আছে। একই সময়ে তাঁদের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান একটি স্থানীয় ফ্যাশন ব্র্যান্ড কিনে নেয়, নতুন নাম ‘ক্লাবহাউজ’ নিয়ে যাত্রা শুরু হয়। শুরুতে সেটিরও দায়িত্বে ছিলেন রায়ানা, এখন যদিও তাঁর মা–ই মূলত ক্লাবহাউজ দেখভাল করেন।

প্রতিষ্ঠিত একটি ব্যবসায়িক পরিবার থেকে আসায় নিজের উদ্যোগগুলোতে বিশেষ কী সুবিধা পেয়েছেন?

রায়ানা হোসেন

Also Read: ইউরোপ-আমেরিকায় নয়, ঢাকার নিকেতনে নিভৃতে তৈরি হয়েছেন এই ক্যামেরাওয়ালা

উত্তরে রায়ানা বললেন, ডেকো গ্রুপ না থাকলে ইশোর আজকের অবস্থানে আসাটা এত দ্রুত ও সহজ হতো না। নতুন উদ্যোগে প্রারম্ভিক বাধা এ দেশে অভাবনীয় রকম বেশি। নতুন কিছু করতে গেলে হাজারটা বাধা। কাজের সংস্কৃতিও ভিন্ন। সেখানে অবশ্যই পারিবারিক ব্যবসার ভিত্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে এর বাইরেও নতুন ব্যবসায় অনেক চ্যালেঞ্জ থাকে। মোটকথা, বাজারের নতুন ও সমকালীন চাহিদা মিটিয়ে মানসম্মত পণ্য যুক্তিযুক্ত দামে দিতে পারলে এবং গ্রাহকদের জানালে, তাঁদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে পারলে উদ্যোগ বড় হবে, বাড়বে ব্যবসার পরিধি।

রায়ানা হোসেন মনে করেন, অনেক ক্ষেত্রেই বাংলাদেশে উৎপাদনশীল প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য কিছু নীতিমালা ব্যবসাবান্ধব নয়। তিনি বলেন, ‘তৈরি পোশাকসহ কয়েকটি খাতের পাশাপাশি আসবাব ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত আমাদের ডেকো–ইশো গ্রুপ। আসবাব খাতে আমাদের শুল্কনীতি বেশ কিছু ক্ষেত্রে অসুবিধাজনক। অনেক ক্ষেত্রে আমদানি করা আসবাবপণ্যের শুল্ক এর কাঁচামালের শুল্কের সমান। সে ক্ষেত্রে এ দেশে উৎপাদনশীল ফার্নিচার ব্র্যান্ডগুলোকে চীনের পণ্যের সঙ্গে অসম প্রতিযোগিতায় লড়তে হয়। এই নীতিগুলো হলে দেশি ব্র্যান্ড ও উৎপাদনমুখী আসবাবশিল্পে সম্ভাবনা আরও বাড়বে।’

রায়ানা ডিজাইনের মানুষ। তাই মানুষের নতুন জীবনধারার সঙ্গে সম্পৃক্ত নতুন নতুন অনুষঙ্গ নিয়ে তিনি বাংলাদেশেই তৈরি করতে চান বিশ্বমানের ডিজাইন ও পণ্য। বাংলাদেশের শিল্প ও বাংলাদেশের ব্র্যান্ডকে নিয়ে যেতে চান বিশ্ববাজারে।