Thank you for trying Sticky AMP!!

আপনার সন্তানকে পর্নো দেখতে দেখলে কী করবেন?

পর্নোগ্রাফি শিশু-কিশোরদের নৈতিক মূল্যবোধ ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিকে নষ্ট করে। তারা হয়ে পড়ে আত্মসম্মান ও আত্মবিশ্বাসহীন (প্রতীকী ছবি)

আপনি যদি বোঝেন যে আপনার সন্তান পর্নোতে আসক্ত, কীভাবে সেটা মোকাবিলা করবেন? অনেক মা–বাবাই এখানে চিৎকার করে বকাঝকা বা মারধরের পথ বেছে নেন। কিন্তু এগুলো কি আপনার সন্তানকে পর্নো থেকে দূরে রাখতে পারবে? পারবে না। কারণ, মানুষের প্রকৃতিই হলো, আপনি যেটা নিষেধ করবেন, যেটা থেকে দূরে থাকার জন্য তাকে বকাঝকা করবেন, সেটার প্রতিই সে বেশি আগ্রহী হবে। আর নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি কৌতূহল মানুষের প্রাচীন স্বভাব।

ইউএনডিপি বাংলাদেশ এবং সেন্টার ফর ম্যান অ্যান্ড ম্যাসকুলিনিটি স্টাডিজের (সিএমএসএস) যৌথ উদ্যোগে ২০২৩ সালে ‘ব্রেভম্যান ক্যাম্পেইন’-এর অংশ হিসেবে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের স্কুলগামী কিশোরদের ৬১ দশমিক ৬৫ শতাংশই পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন পরিচালিত আরেক সমীক্ষায় দেখা গেছে, পর্নো ভিডিওতে আসক্ত রাজধানীর ৭৭ শতাংশ কিশোর।
পর্নোগ্রাফি শিশু-কিশোরদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত করে।

বয়ঃসন্ধিকালে এমনিতেই লোকজন থেকে একটু দূরে দূরে থাকার প্রবণতা কাজ করে। পর্নোতে আসক্তি সেটা বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ। কিশোরেরা হয়ে পড়ে অসামাজিক। মানুষের সামনে যেতে লজ্জা পায়, পালিয়ে পালিয়ে বেড়ায়। চরম একাকিত্ব ও হতাশায় ভোগা শুরু হয়। এই হতাশা, অস্থিরতা ও একাকিত্ব থেকে কখনো কখনো তৈরি হয় মাদকের নেশা। পর্নোগ্রাফি শিশু-কিশোরদের নৈতিক মূল্যবোধ ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিকে নষ্ট করে। তারা হয়ে পড়ে আত্মসম্মান ও আত্মবিশ্বাসহীন।

পর্নো থেকে সন্তানকে দূরে রাখার কোনো উপায় কি নেই? আছে। নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করে দেখতে পারেন।

পর্নোগ্রাফি শিশু-কিশোরদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত করে (প্রতীকী ছবি)

তার আগ্রহকে স্বীকার করুন

প্রথমেই স্বীকার করে নিন, আপনার সন্তানও একজন মানুষ। যৌনতা বা বিপরীত লিঙ্গের প্রতি তার আগ্রহ তৈরি হবেই। এই আগ্রহ বা প্রশ্নের উত্তর আপনি যদি না দেন, সে যদি আপনার উত্তরে সন্তুষ্ট না হয়, সহজেই ইন্টারনেট থেকে সেগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করবে।

তার প্রশ্নের উত্তর দিন

সাধারণত বাবা–মায়েরা এ ধরনের প্রশ্ন এড়িয়ে যান। রবীন্দ্রনাথের তো কবিতাই আছে, ‘খোকা মাকে শুধায় ডেকে—/ এলেম আমি কোথা থেকে?’ এমন প্রশ্ন এড়িয়ে যাবেন না। বরং তার ভাষায় সহজ করে বুঝিয়ে বলুন।

পাশে থাকুন বন্ধু হয়ে

বয়ঃসন্ধিকালে ছোটদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আগ্রহ তৈরি করে বিপরীত লিঙ্গের শরীর। এ বিষয়ে বাজারে কিছু বই আছে। পড়তে দিন। যাতে সে এই পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়। যেকোনো বিষয়ে খোলামেলা আলাপ করুন। সন্তানের পাশে থাকুন বন্ধু হয়ে। তাদের নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহার নিশ্চিত করুন। সন্তান কাদের সঙ্গে মেলামেশা করে, খেয়াল রাখুন।

পর্নোগ্রাফি সম্বন্ধে স্পষ্ট ধারণা দিন

পর্নোগ্রাফি সম্পর্কে অনেকেই প্রথমবার জানতে পারে বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে। স্কুল থেকে প্রতিদিন কী শিখল, কী জানল খোঁজ নিন। পর্নোগ্রাফির বেশির ভাগই ভুল, আরোপিত, অসত্য, বিভ্রান্তিকর। এই অর্ধসত্য থেকে দূরে রাখতে আপনার সন্তানকে পর্নোগ্রাফির জগৎ সম্বন্ধে আগেই সতর্ক করে দিন।

বলতে পারেন আইন এবং নৈতিকতার কথাও

আইন মেনে চলা সাধারণত আমরা পরিবার থেকেই শিখি। পর্নোগ্রাফি যে বেআইনি, অপরাধ—এটা সন্তানকে বোঝান। তাদের বোঝান, মিথ্যা বলা বা চুরি করার মতো এটাও একটা অপরাধ। মা কিংবা বাবা হিসেবে আপনি এই অপরাধকে প্রশ্রয় দেবেন না।

কোমলে–কঠোরে মেশানো শাসন

বোঝানোতে কাজ না হলে স্পষ্ট জানিয়ে দিন, পর্নোগ্রাফি দেখলে আপনি তার ইন্টারনেট অ্যাকসেস বাতিল করতে বাধ্য হবেন। অবুঝ হবেন না, অস্থির হবেন না। শান্তভাবে বুঝিয়ে বলুন।

আপনার সন্তানকে বোঝানোর সময় তার বয়স মাথায় রেখে বোঝাবেন। তার কাছ থেকে খুব পরিণত আচরণ আশা করবেন না। এবং আপনিও তার সঙ্গে কোনো হিংস্র আচরণ করবেন না। বরং তার বয়সের চ্যালেঞ্জ বুঝে তার প্রতি সমব্যথী হয়ে ধীরে ধীরে তাকে সেখান থেকে বের করে আনুন।


মনে রাখবেন, হাজার মারধর বা বকা দিয়ে যে কাজ করা সম্ভব হয় না, একটুখানি ভালোবাসা দিয়ে সেই কাজটা খুব সহজেই করে ফেলা যায়।


সূত্র: প্যারেন্টস ডট কম

Photo by Aidan Roof from pexels

Also Read: আপনার আশপাশে ‘টক্সিক’ ব্যক্তিদের চিনবেন কীভাবে