Thank you for trying Sticky AMP!!

কায়াক চালিয়ে কাপ্তাই থেকে বিলাইছড়ি যেতে যেতে যা দেখলাম

শীত আসন্ন হলেও গাঢ় সবুজের খোলসে তখনো আবৃত পাহাড়

কাপ্তাই কায়াক ক্লাবের যাত্রা শুরুর পর থেকেই কর্ণফুলীর থির জলে কায়াকের বইঠা ডোবাচ্ছি। তখন থেকেই কায়াকে রাঙামাটির বিলাইছড়ি যাওয়ার ইচ্ছা। সেই ইচ্ছাটাই এবার পূরণ হলো।

কাপ্তাই নতুন বাজারের কাছ থেকে সকালে যাত্রা শুরু। প্রথমেই এক দঙ্গল কচুরিপানা পথ আগলে দাঁড়াল। বইঠা (প্যাডল) মেরে নানা কসরত করে কচুরিপানার রাজ্য ছেড়ে বেরিয়ে আসতেই গলদঘর্ম দশা। প্রথম বাঁকটা ঘুরতেই মেঘহীন স্বচ্ছ আকাশের নিচে নীল জলরাশি। নানা আকার-আকৃতির নৌযান ভেসে আছে। কাপ্তাইয়ের জেটিঘাট ডানে রেখে বাঁয়ে মোড় ঘুরলাম। দূরে কাপ্তাই বাঁধের অতিকায় জলকপাটগুলো দেখা যাচ্ছে। কর্ণফুলী নদীর প্রবাহকে বেঁধে ফেলে এখানে সৃষ্টি করা হয়েছে কাপ্তাই হ্রদ নামক বিশাল এই জলাধার। কাছিমের পিঠের মতো দেখতে পাহাড় সঙ্গী হলো এবার। শীত আসন্ন হলেও গাঢ় সবুজের খোলসে তখনো আবৃত পাহাড়। আর কদিন বাদেই পাতা ঝরিয়ে ন্যাড়া হতে শুরু করবে পাহাড়ি-প্রকৃতি।

Also Read: প্লাস্টিক বোতলের কায়াকে সাঙ্গু নদে ১১১ কিলোমিটার পাড়ি দিলেন তিন তরুণ

দুই পাশে চোখ রাখতে রাখতেই চলছে দৃঢ় হাতে বইঠা বাওয়া

দুই পাশে চোখ রাখতে রাখতেই চলছে দৃঢ় হাতে বইঠা বাওয়া। কর্ণফুলী এখানে নিস্তরঙ্গ। বইঠার চাপে আপাতস্থির জলরাশিকে ছিন্নভিন্ন করে একটু একটু করে এগিয়ে চলা। এখান থেকে কিছুটা পথ সিঁথির মতোই সোজা এগিয়েছে। দুই পাড়ের সবুজাভ পাহাড়ের গালিচায় মাঝেমধ্যেই রোদ পড়ে তীব্র আলোর ঝলকানি নিয়ে উঁকি দিচ্ছে বসতবাড়ির একটা-দুটো টিনের চাল। কায়াকে আমার সঙ্গী বন্ধু জিতু। এ নৌপথ নিয়ে পূর্বধারণা থাকায় আমরাই চলছি সবার আগে। বাকি কায়াকের সঙ্গীরা আসছেন পেছন পেছন। গতির তারতম্য থাকলেও সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলার তাগাদা থাকায় কেউই দৃষ্টিসীমার বাইরে যাচ্ছেন না।

মেঘের গর্জনের মতো শব্দ তুলে পাশ কেটে চলে যাচ্ছে ইঞ্জিনচালিত নৌকা। বিস্মিত চোখে আমাদের দেখছেন যাত্রীরা। যন্ত্রের রমরমা এই যুগে বইঠা মেরে জলপথ পাড়ি দিতে চাওয়া এই তরুণদের উদ্দেশ্য কী? তাঁদের চোখেমুখে এই জিজ্ঞাসা। তাঁদের আর দোষ দিয়ে লাভ কী! নদীমাতৃক বাংলাদেশে কায়াকিংয়ের মতো ‘ওয়াটার স্পোর্টস’ কেন এত দিনেও জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি, এটি বিরাট একটি রহস্য। এখন অবশ্য আগ্রহী তরুণদের কারণে পরিবর্তন আসছে। ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে কক্সবাজার, ঢাকা, মুন্সিগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় একাধিক কায়াকিং স্পট তৈরি হয়েছে।

Also Read: সাইকেলে ভারতের এমাথা–ওমাথা ঘুরলেন বাংলাদেশের বাবর

কর্ণফুলী নদীর গতিপথ ছাড়িয়ে প্রবেশ করলাম কাপ্তাই হ্রদের জলরাশিতে

একটা জায়গায় নদী বেশ সরু। নদীর ওপর নুয়ে থাকা গাছপালার জন্য দূর থেকে জায়গাটাকে মনে হয় টানেল। কাছে আসতেই অবশ্য ভুল ভাঙে। এখান থেকে এবার বাঁয়ে বাঁক। কর্ণফুলী নদীর গতিপথ ছাড়িয়ে প্রবেশ করলাম কাপ্তাই হ্রদের জলরাশিতে। জলপথ থেকে পাহাড়গুলো এবার আরও কাছে। এদিকে ক্ষুদ্র দ্বীপের সংখ্যাও অধিক। হ্রদসংলগ্ন ঘাট দেখে এক জায়গায় কায়াক ভেড়ানো হলো। জলযোগ শেষে আবার পানিতে।

হাতের বাঁয়ে বৌদ্ধবিহারের সুচালো চূড়া চোখে পড়ছে নিয়মিত। সূর্যের হলদে আলো লেগে ঝিলিক দেয় ক্ষণিকের জন্য। হ্রদের জলরাশির বিস্তার এখানে অনেকটাই গাছের ছড়ানো শিকড়ের মতো। সরু অংশগুলোয় কায়াক নিয়ে খুব বেশি এগোনোর উপায় নেই। মূল প্রবাহেই থাকতে হয়। অতিকায় মহিরুহের পাশ ঘেঁষে টিনের অনেক দোকান। পাশেই ধাপে ধাপে হ্রদের জলে নেমে গেছে পাকা সিঁড়ি। এটাই কেংড়াছড়ি বাজার। এখান থেকে ডানে এগিয়ে টানা চলে গাছকাটাছড়া আর্মি ক্যাম্প। এ অংশে নৌযানের সংখ্যা নগণ্য। হ্রদের জলে বইঠা ডোবানোর ভোঁতা আওয়াজ বাদে অন্য কোনো শব্দ নেই। আমাদের গন্তব্য বিলাইছড়ি এখান থেকে খুব বেশি দূরে নয়।

হ্রদের জলরাশি ছাপিয়ে মাথা উঁচু করে রাখা ছোট দ্বীপের সংখ্যা এদিকে প্রচুর। সেগুলোকে পাশ কাটিয়েই পথচলা। ততক্ষণে অবশ্য রোদ বেশ তীব্র হতে শুরু করেছে। আধা ঘণ্টার মতো এঁকেবেঁকে পথচলার পর উঁকি দিতে শুরু করল বিলাইছড়ি বাজারের পেছনের পাহাড়। কয়েকটা বাঁক ঘুরতেই দৃষ্টিসীমায় চলে এল বিলাইছড়ির নৌকাঘাট। লেকের বিস্তৃত জলরাশি পেরিয়ে ঘাটে পৌঁছে গেলাম দুপুরের আগেই। এবার সুবিধাজনক জায়গা দেখে তাঁবু ফেলার ব্যবস্থা করতে হবে। রাতটা এখানে কাটিয়ে ফিরতি পথ ধরব পরদিন সকালে।