Thank you for trying Sticky AMP!!

দুই পাহাড়ের মাঝে হ্যামকে ১৫ মিনিট

এক্সট্রিম হ্যামকিং এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা

পাহাড়ে রোমাঞ্চকর বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের আয়োজন করে ওয়াইল্ডারনেস বিডি। এই সংগঠনের সঙ্গেই বছর দুই আগে সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ পাহাড়ে র‌্যাপলিং (দড়ির সাহায্যে খাড়া পাহাড় বেয়ে নিচে নামা) করি। জীবনে প্রথম দুঃসাহসিক কাজটা করতে গিয়ে ভীষণ ভয়ই পেয়েছিলাম। খাড়া পাহাড় বেয়ে নামতে গিয়ে মাঝে এসে নিচে তাকিয়ে দেখি শূন্যে ভাসছি, ভয়ে কুঁকড়ে যাই। তবে প্রশিক্ষকের শেখানো কৌশল অনুসরণ করে মাটিতে নেমে আসার পর মনের ভয়টা চিরতরে দূর হয়ে যায়। ভয় কেটে গিয়ে বরং রোমাঞ্চ পেয়ে বসল। সেই রোমাঞ্চের টানেই গত অক্টোবরে ‘এক্সট্রিম হ্যামকিং’ করতে যাওয়া।

প্রশিক্ষক ও স্বেচ্ছাসেবী ছাড়াও দলে আমরা ১৪ জন। অনেকেই প্রথমবার এমন রোমাঞ্চের টানে যোগ দিয়েছেন। আমাদের গন্তব্য মিরসরাইয়ের নাপিত্তাছড়া। নাপিত্তাছড়া এমনিতেই জনপ্রিয় ট্রেইল। ছুটির দিনগুলোতে প্রচুর পর্যটক ঘুরতে যান। এই ট্রেইলের একদম শেষ মাথায় তিন থেকে চারটি জলপ্রপাত আছে। লোকালয় ছেড়ে প্রায় ৪০ মিনিট হেঁটে আমরা তারই একটিতে পৌঁছাই। দুই পাহাড়ের মাঝে এই সুন্দর জলপ্রপাতের নাম বান্দরখুম। এখানেই এক্সট্রিম হ্যামকিং করব আমরা।

Also Read: দেশের সর্বোচ্চ বিন্দু খুঁজেছেন এক দশক ধরে, হারিয়েছেন তিন সহযাত্রীকে

হ্যামকে বসে পাখির চোখে দেখা যায় পাহাড়ি প্রকৃতি

বান্দরখুমে পৌঁছানোর পর প্রশিক্ষক দলের তোড়জোড় শুরু হয়ে যায়। তারা প্রথমে পাশাপাশি দুই পাহাড়ের গোড়ায় গিয়ে অ্যাঙ্কর স্থান নির্বাচন করে। তারপর যেকোনো একটা পাহাড়ের অপেক্ষাকৃত সহজ পথ দিয়ে আস্তে আস্তে ওপরে ওঠে যায়। দুই পাহাড়ের গা বেয়ে ১২০ ফুট উঠে গাছ ও পাথরের সঙ্গে কায়দা করে হ্যামক ঝুলিয়ে দেয়। আমাদের জানিয়ে দেওয়া হয়, একেকবার দুজন অংশগ্রহণকারী হ্যামকে উঠতে পারবে। মিনিট পনেরো থেকে তারা নেমে আসবে।

হ্যামক ঝোলানোর সময়ই আমাদের প্রশিক্ষণ চলে। কীভাবে নিরাপত্তা সরঞ্জাম বাঁধব, হাতের কোন দড়ি কীভাবে টানব, সে সময় পায়ের কাজ কী হবে, কীভাবে রিভার ক্রসিং করে হ্যামকে যাব ইত্যাদি। প্রায় দেড় ঘণ্টার ট্রেনিংয়ের পর ক্লাইম্বিং যন্ত্র হারনেস, ক্যারাবিনার, স্ট্যাটিক রোপ আর গ্লাভস পরিয়ে ব্যবহার শেখানো হয়। চুল, পোশাক খুব সাবধানে রাখতে বলে দেন প্রশিক্ষকেরা। কারণ, ক্যারাবিনার ও ফিগার অব এইটের (দড়ি বাঁধার ধরন) মধ্যে কোনোভাবে কিছু আটকে গেলে বিপত্তি হতে পারে। আর নামার সময় বারবার ঘষা খাওয়ার ফলে ক্যারাবিনার গরম হয়ে যেতে পারে, তাই সতর্ক থাকতে হবে।

Also Read: জলপ্রপাত দেখতে গিয়ে দুর্ঘটনা এড়াতে যে ১০টি কথা মনে রাখতেই হবে

হ্যামক থেকে নামতে হয় র‌্যাপলিং করে

আমি পাহাড়ে ওঠা শুরু করি। এতক্ষণ ধরে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছিল, এবার মুষলধারে পড়তে শুরু করল। আমার সঙ্গে টিমের আরেক সদস্য রেখাও উঠছে। এ সময় পাহাড় পিচ্ছিল হয়ে যায়। খুব সতর্কতার সঙ্গে উঠতে হলো। পাহাড়ের মাঝামাঝি উঠে রিভার ক্রসিং (উল্টো হয়ে দড়ি ধরে ঝুলে ঝুলে এগিয়ে যাওয়া) শুরু করলাম। মাটি থেকে পা সরে গেল, ধীরে ধীরে শূন্যে ভাসলাম। এরপর হ্যামকে যাওয়ার জন্য যেটা করতে হলো, সেটা কেবল সারভাইভাল মুভিতেই (প্রকৃতিতে প্রতিকূল অবস্থা থেকে বেঁচে ফেরার গল্প উপজীব্য করে তৈরি চলচ্চিত্র) দেখেছি। শরীরের ভার হাতে চলে এল। দড়ি ধরে ধরে সামনে হ্যামকের দিকে এগোতে থাকলাম। দুই পাহাড়ের মাঝে হ্যামক। ১২০ ফুট নিচ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে জলপ্রবাহ। কাছে গিয়ে দড়ি ঢিলা করে আলগোছে হ্যামকে বসে পড়ি। নিচের হ্যামকে রেখাও চলে এসেছে। একপাশে ছোট এক হ্যামকে অবস্থান নিয়ে আছেন একজন প্রশিক্ষক। তিনি নির্দেশনা দিতে থাকেন।

হ্যামকে বসে প্রচণ্ড রোমাঞ্চ অনুভব করলাম। পাখির চোখে ঝুলন্ত অবস্থায় আশপাশের প্রকৃতিতে চোখ বুলিয়ে নিলাম। ড্রোন দিয়ে মুহূর্তটি ধরে রাখল আয়োজকেরা। বৃষ্টি কমে এসেছে। চোখে-মুখে টুপটাপ বৃষ্টির ফোটায় ক্লান্তি দূর হয়ে গেল। চা খেতে ইচ্ছা করছিল ভীষণ। এক কাপ চা হাতে পেলে অভিযানের ষোলোকলা পূর্ণ হতো। সেই অপূর্ণতা নিয়েই মিনিট পনেরো পর হ্যামক থেকে নিচে নামাতে থাকি। র‌্যাপলিংয়ের আগের অভিজ্ঞতা এবার খুব কাজে দিল।

নিচে নেমে আসার পর আবার শূন্য ঝুলে থাকা হ্যামেকের দিকে তাকালাম, সেখানেই তো শুয়ে-বসে কাটল ১৫টা মিনিট, আজও সেই রোমাঞ্চ ভুলতে পারি না।