Thank you for trying Sticky AMP!!

ধীরে চলা

(সপ্তম কিস্তি)
ভিনসেন্ট পঁতেভিঁর সঙ্গে একা থাকতে পছন্দ করেন। ভিনসেন্টের মাথা নানা ধরনের উদ্ভট উসকানিমূলক আইডিয়ায় টইটম্বুর। পঁতেভিঁও তাতে মুগ্ধ, তাঁর শিষ্যের দিকে হাত বাড়িয় দেন, তাকে উৎসাহ দেন, অনুপ্রাণিত করেন। কিন্তু তৃতীয় কেউ এসে পড়লে ভিনসেন্ট অখুশি হয়। কারণ, তখন পঁতেভিঁ খুব তাড়াতাড়ি বদলে যান, বেশি জোরে কথা বলতে শুরু করেন, আর বিনোদনমূলক কথা বলতে থাকেন, এত বেশি বিনোদনমূলক হওয়াটা ভিনসেন্টের রুচিতে বাধে।

একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। তারা ক্যাফেতে। দুজনই। ভিনসেন্ট জিগ্যেস করে, ‘সোমালিয়ায় কী হচ্ছে, আপনি আসলে কী মনে করেন?’ ধৈর্য ধরে পঁতেভিঁ গোটা আফ্রিকা বিষয়ে একটা লেকচার দেন। ভিনসেন্ট শোনে, আপত্তি জানায়, তারা যুক্তিতক্কোগপ্পে মাতে, কৌতুকও করে, এ রকম একটা সিরিয়াস বিষয় নিয়ে কথা বলতে গিয়ে একটু কৌতুকও করে, তবে খুব বেশি হালকা করে না বিষয়টাকে।

তখন আসে মাচু। তার সঙ্গে একজন অপরূপা। অপরিচিতা। ভিনসেন্ট তখনো গম্ভীর কণ্ঠে বলে চলেছে, ‘পঁতেভিঁ, আপনি যা বলছেন, এই ব্যাপারটা, এটা কি ভুল হচ্ছে না...’ ভিনসেন্ট তার গুরুর মতের বিপরীতে আরেকটা মত দাঁড় করানোর চেষ্টা চালায়।

পঁতেভিঁ একটা দীর্ঘ বিরতি নেন। তিনি দীর্ঘ বিরতি নিতে ওস্তাদ। তিনি জানেন, আত্মবিশ্বাসহীনেরাই কেবল বিরতি নিতে ভয় পায়। তারা যে বিষয়ে জানে না, তা নিয়েও তাড়াতাড়ি কথা বলতে যায় এবং ভুল করে, নিজেদের হাস্যকর করে তোলে। পঁতেভিঁ জানেন, কী করে নীরব থাকতে হয়, রাজরাজসিক নীরবতা, সমস্ত ছায়াপথও তখন অধীর আগ্রহে তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকে, অপেক্ষা করে তিনি কখন মুখ খুলবেন। কোনো কথা না বলে পঁতেভিঁ তাকালেন ভিনসেন্টের দিকে। কোনো কারণ ছাড়াই ভিনসেন্ট চোখ নামিয়ে ফেলল। তখন পঁতেভিঁ মৃদু হাসলেন, সদ্য আগত সুরূপা নারীটির দিকে তাকালেন, তারপর বললেন, ‘ভিনসেন্ট, তোমার এই চালাকিতে ভরা যুক্তি, একজন নারীর উপস্থিতিতে, এটাই কেবল প্রমাণ করে যে তোমার লিবিডোতে একটা ফোঁটা পড়ল।’

মাচুর মুখটা আহাম্মকের বিখ্যাত হাসিতে ভরে ওঠে। নারীটি ভিনসেন্টের দিকে মজা আর পৃষ্ঠপোষকতার দৃষ্টিতে তাকান। ভিনসেন্ট লাল হয়ে যায়। আহত বোধ করে। একটু আগে যিনি ছিলেন তাঁর বন্ধু, তাঁর কথা গুরুত্ব দিয়ে শুনছিলেন, এখন কেবল একজন নারীকে মুগ্ধ করবেন বলে তাঁকেই অস্বস্তিতে ফেলে দেওয়ার জন্য লক্ষ্য বানালেন।

তখন আসে অন্য বন্ধুরা। তারা গল্পগুজব করে। মাচু একটা গল্প বলে। গুজা তার বইপড়া বিদ্যা ঝাড়ে। মেয়েরা হাসিতে কলকলিয়ে ওঠে। পঁতেভিঁ নীরব থাকেন, অপেক্ষা করেন কখন তাঁর অপেক্ষার মেওয়া পাকবে, তারপর বলেন, ‘আমার গার্লফ্রেন্ড সব সময় চান আমি যেন তার সঙ্গে বুনো হয়ে উঠি।’

ও খোদা, তিনি জানেন কী করে কথা পাড়তে হয়। এমনকি পাশের টেবিলের লোকজনও চুপ করে যায়, কান খাড়া করে, কী বলবেন পঁতেভিঁ। হাসি থেমে যায়। কী এমন ঘটনা, যে তাঁর গার্লফ্রেন্ড তাকে সব সময় বুনো হতে বলে! এই জাদুটা নিহিত আছে পঁতেভিঁর কণ্ঠস্বরে। ভিনসেন্ট ঈর্ষা বোধ করেন। তাঁর নিজের গলা তার তুলনায় কিছুও না। বাঁশির মতো চিকন। কেবল বেহালার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার মতো। পঁতেভিঁ কথা বলে নম্রভাবে, কখনো গলায় জোর ফোটায় না, যা সমস্ত রুমটাকে ভরে তোলে, জগতের অন্য সকল শব্দকে শ্রুতির অযোগ্য করে তোলে।

পঁতেভিঁ বলেই চলেন, ‘আমাকে বলে বুনো হও, খ্যাপা হও, কিন্তু আমি তো তা হতে পারি না, আমি খ্যাপা নই, আমি তো স্নিগ্ধ।’

রুমের মধ্যে হাসিহুল্লোড় এখনো জীবন্ত। সেই প্রাণটুকু উপভোগ করার জন্য, আয়েশটুকু নেওয়ার জন্য পঁতেভিঁ আবারও বিরতি দেন।

আবার পঁতেভিঁ মুখ খোলেন। বলেন, ‘আমার বাড়িতে মাঝেমধ্যে একজন টাইপিস্ট মহিলা আসেন। একদিন, একেবারেই শুভ ইচ্ছা থেকে, আমি তাঁর চুল ধরে তাঁকে শূন্যে তুলে ধরি, তাঁকে সোজা নিয়ে যাই বিছানায়, তারপর মাঝপথে আমি তাঁকে ছেড়ে দিই, হাসতে থাকি, মাদাম, আমাকে ক্ষমা করবেন, আমার গার্লফ্রেন্ড আমাকে চণ্ড হতে বলেছে, আপনি তো নন।’

সমস্ত ক্যাফে হেসে ওঠে। ভিনসেন্টও যোগ দেন সেই হাসিতে। ভিনসেন্ট আবারও তাঁর শিক্ষকের প্রেমে পড়েন।

[এবার সাত নম্বর চ্যাপটার শেষ হলো। এরপর আমরা আটে যাব। আমি, অনুবাদক, আপনাদের শুধু খেয়াল করতে বলব, কোথাকার জল কোথায় গড়াচ্ছে। সেই যে প্যারিস থেকে বেরোল এক দম্পতি। তারা ধীরে চলার বদলে গতি কেন, এই নিয়ে কথা বলছিল। তারপর আমরা দুটো উপন্যাস নিয়ে আলোচনা করেছি। হেডোনিজম নিয়ে দার্শনিক আলোচনা করেছি। সোমালিয়ার শিশুদের নিয়ে কথা বলেছি। এক রাজনীতিবিদ আরেক পণ্ডিতের বাহাস নিয়ে গল্প শুনেছি। এবার এলাম পঁতেভিঁর সঙ্গে প্যারিসের ক্যাফেতে।
এই উপন্যাসে তাহলে গল্প কই? কেন্দ্রীয় প্লট কই? কেন্দ্রীয় চরিত্র কে? কারা?
আমরা পড়তে পড়তে এগোই। দেখা যাক, আট নম্বর চ্যাপটারে কী হয়]

আরও পড়ুন:
প্রথম কিস্তি: ধীরে চলা
দ্বিতীয় কিস্তি: ধীরে চলা 
তৃতীয় কিস্তি: ধীরে চলা
চতুর্থ কিস্তি:ধীরে চলা
পঞ্চম কিস্তি: ধীরে চলা
ষষ্ঠ কিস্তি:ধীরে চলা