Thank you for trying Sticky AMP!!

ধীরে চলা

(অষ্টম কিস্তি)


পরের দিন ভিনসেন্ট একজন সমালোচকের মতো করে বলে, ‘পঁতেভিঁ, তুমি শুধু নাচিয়েদের বিষয়ে বিশাল তত্ত্বের জন্মদাতা নও, তুমি নিজেও একজন বড় নাচিয়ে।’
কিছুটা বিব্রত হয়ে পঁতেভিঁ বলেন, ‘তুমি তত্ত্বটাকে গুবলেট বানিয়ে ফেলছ।’
ভিনসেন্ট: ‘তুমি আর আমি এই দুজন যখন থাকি, তখন দুজনে একসঙ্গে থাকি, কিন্তু যেই তৃতীয় কেউ একজন এসে পড়ে, তখন সে আর আমি নিচে দর্শকসারিতে চলে যাই, তুমি উঠে পড়ো মঞ্চে, মঞ্চে উঠে নাচতে থাকো।’
পঁতেভিঁ: ‘আমি তোমাকে বলি, তুমি তত্ত্বটাকে গুবলেট বানিয়ে ফেলছ। ‘নাচিয়ে’ এই টার্মটা কেবল যারা পাবলিক লাইফে আছে, তাদের জন্য প্রযোজ্য। তুমি জানো, পাবলিক লাইফ আমি কতটা ঘৃণা করি।’
ভিনসেন্ট: তুমি গতকাল ওই মহিলার সামনে সেই রকম আচরণ করেছ, যা বার্ক ক্যামেরার সামনে করেছিল। তুমি ওই মহিলার সমস্তটা মনোযোগ তোমার নিজের দিকে আকর্ষণ করতে চেয়েছ। তুমি চেয়েছ নিজেকে প্রমাণ করতে শ্রেষ্ঠ বলে, সবচেয়ে বুদ্ধিমান হিসেবে। তুমি নাচিয়ের প্রদর্শনবাদিতার অশ্লীলতম জুডো আমার সঙ্গে লড়েছ।’
পঁতেভিঁ: ‘প্রদর্শনবাদিতার জুডো! হতে পারে। কিন্তু সেটা কোনো নৈতিকতার জুডো ছিল না। আর সেখানেই তুমি ভুল করছ, আমাকে একজন নাচিয়ে বলে। কারণ, একজন নাচিয়ে সব সময় অন্য যেকারও চেয়ে বেশি নীতিনিষ্ঠ হতে চায়। অন্যদিকে আমি তোমার চেয়ে হীনতর হতে চেয়েছি।’
ভিনসেন্ট: ‘একজন নাচিয়ে অধিকতর নীতিনিষ্ঠ হতে চায়, কারণ তার বিশাল দর্শকেরা আনাড়ি, তারা মনে করে নীতিনিষ্ঠ কাজই কেবল সুন্দর। আর আমাদের দর্শকসংখ্যা কম, তারা একটু উল্টাপাল্টা আছে, তারা আবার নীতিহীনতাকেই বেশি পছন্দ করে। তাই তুমি আমার ওপরে নীতিহীন জুডো চাপিয়ে দিয়েছ, সেটা তোমার ওই নাচিয়ের চরিত্রের সঙ্গে মোটেও সাংঘর্ষিক নয়।’
পঁতেভিঁ (হঠাৎ করে তাঁর কণ্ঠস্বর বদলে ফেলেন, খুব নিষ্ঠার সঙ্গে বলতে থাকেন) : ‘আমি যদি তোমাকে আঘাত দিয়ে থাকি, ভিনসন্টে আমাকে, ক্ষমা করো।’
ভিনসেন্ট (সঙ্গে সঙ্গে পঁতেভিঁর ক্ষমাপ্রার্থনায় আবেগপ্রবণ হয়ে): ‘আমার তো ক্ষমা করার কিছু নেই। আমি জানি, তুমি ঠাট্টা করছিলে।’
তাঁরা যে গ্যাসকন নামের ক্যাফেতে বসে, সেটা হঠাৎ করে হয়নি। এদের সেইন্ট হলেন দ আরতাগনঁ। বন্ধুত্বের সেইন্ট। বন্ধুত্বকে তারা খুবই পবিত্র বলে মনে করেন।
পঁতেভিঁ বলেন, ‘যদি ব্যাপারটাকে বড় করে দেখি, তোমার কথার মধ্যে তো একটা পয়েন্ট আছে, যে সেইভাবে দেখলে প্রতিটা মানুষের মধ্যেই একটা করে নাচিয়ে আছে। আর একজন নারীকে দেখলে অন্য যেকোনো কারও চেয়ে আমার ভেতরে ঢের বেশি, দশজন নাচিয়ে জেগে ওঠে। আমার কিছুই করার নেই। একটু বেশিই হয় আমার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা।’
ভিনসেন্ট অমায়িকভাবে হাসতে থাকে। পঁতেভিঁ অনুতপ্ত স্বরে বলেন, ‘যদি আমি সত্যি নাচিয়ে বিষয়ের বিশাল একজন তাত্ত্বিক হয়ে থাকি, একটু আগে যে স্বীকৃতি তুমি আমাকে দিয়েছ, তাহলে সেই নাচিয়ের কিছুটা স্বভাব আমার মধ্যে আছে, তা না হলে আমি তাদেরটা বুঝতে পারলাম কীভাবে? আমি তোমার কথা মেনে নিচ্ছি, ভিনসেন্ট।’
পঁতেভিঁ আবারও অনুতপ্ত বন্ধু থেকে তাত্ত্বিক গুরুতে পরিণত হন। তিনি বলেন, ‘শোনো, ভিনসেন্ট, আমার মধ্যে যদি নাচিয়ের কিছু থেকে থাকে তা খুবই সামান্য, শুধুই এই কনসেপ্টটাকে আমি মেনে নিচ্ছি, আসলে নাচিয়ের কিছুই আমার নেই। এটা শুধু একটা সম্ভাবনা মাত্র নয়, এটাই সত্য যে একজন বার্ক কিংবা একজন দারিবিকিউ, একজন প্রকৃত নাচিয়ে কখনোই একজন নারীকে পটানোর চেষ্টা করতে গিয়ে এই গল্প ফেঁদে বসবে না, যেমনটা আমি বললাম, যে একজন তার টাইপিস্টকে চুলে টেনে বিছানার দিকে নিয়ে গেছে, কারণ সে এই মেয়েকে অন্য মেয়ের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেছিল। কারণ তার সামনে যে দর্শক, তা নির্দিষ্ট দৃশ্যমান উপস্থিত একজন নারী মাত্র নয়, তার দর্শক হলো অদৃশ্য, অসংখ্য অগণন মানুষ। শোনো, আরেকটা নতুন চ্যাপটার তৈরি করতে হবে নাচিয়ে তত্ত্বের, আর তা হলো, দর্শকদের অদৃশ্য থাকার ব্যাপারটা। এই চরিত্রের যে সাংঘাতিক একটা আধুনিকতা আছে, সেটা এখানেই নিহিত। একজন নাচিয়ে কেবল তোমার বা আমার জন্য দেখানোপনা করছেন না, তিনি সমস্তটা পৃথিবীকে শো অফ করছেন। আর পুরোটা পৃথিবী মানে কী? মুখ নেই, এ রকম অসংখ্যজন, একটা বিমূর্ত ব্যাপার!’
তাদের আলাপের এই পর্যায়ে গুজা আসে, মাচু আসে। দরজা থেকেই গুজা বলতে থাকে, ‘ভিনসেন্ট, তুমি না পতঙ্গবিদ সম্মেলনে যেতে চাও, তোমার জন্য বিশাল খবর আছে, বার্ক সেখানে যাচ্ছে।’
পঁতেভিঁ: ‘আবার! সে সর্বত্রই বিরাজমান!’
ভিনসেন্ট: ‘খোদার ওয়াস্তে সে সেখানে কী করবে?’
মাচু: ‘তুমি নিজে একজন পতঙ্গবিদ। তুমিই ভালো জানবে।’
গুজা: ‘সে যখন ছাত্র ছিল, তখন এনটেমেলোজি ডিপার্টমেন্টে কিছু সময় কাটিয়েছে। এই সম্মেলনে তাকে পতঙ্গবিদের সাম্মানিক স্বীকৃতি দেওয়া হবে।’
পঁতেভিঁ: ‘আমাদের ওইখানে যেতে হবে। নরক বানাতে হবে।’ (ভিনসেন্টের দিকে তাকিয়ে): ‘তুমি আমাদের সবাইকে ওখানে চুরি করে ঢুকিয়ে দেবে।’

[প্রিয় পাঠক, ভুলে যান হোটেল রুমে ভেরা ঘুমাচ্ছে, সে কথা। আমরা বরং ভিনসেন্ট আর পঁতেভিঁর এসব কথোপকথন উপভোগ করি। কুন্ডেরার সেন্স অব হিউমার অসাধারণ। পাণ্ডিত্যও অতুলনীয়। সরলতারও কোনো জুড়ি নেই। কাজেই চলুন এগোনো যাক। ৯ নম্বর পর্বে ভেরার দেখা আমরা পাব]

আরও পড়ুন:
প্রথম কিস্তি: ধীরে চলা
দ্বিতীয় কিস্তি: ধীরে চলা 
তৃতীয় কিস্তি: ধীরে চলা
চতুর্থ কিস্তি:ধীরে চলা
পঞ্চম কিস্তি: ধীরে চলা
ষষ্ঠ কিস্তি:ধীরে চলা
সপ্তম কিস্তি: ধীরে চলা