Thank you for trying Sticky AMP!!

ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা দমনে নতুন আশা

বিটিআই (বেসিলাস থুরিঞ্জিয়েনসিস ইসরাইলেনসিস) হলো মাটিতে জন্মানো একধরনের এন্টোমোপ্যাথজেনিক ব্যাকটেরিয়া। এই ব্যাকটেরিয়া এডিস মশার লার্ভার খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। যেখানে জমানো পানি আছে, সেখানেই এই ব্যাকটেরিয়ার পাউডার, ট্যাবলেট বা গ্রানিউল দ্রবীভূত করে দিলেই এডিস মশার লার্ভা সহজেই মারা যাবে।

ডেঙ্গু, চিকনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার ইত্যাদি রোগের বাহক হিসেবে কাজ করে এডিস মশা। এ মশার যে দুটি প্রজাতি আমাদের দেশে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া রোগের ভাইরাস বহন করে, সেগুলো হলো এডিস এজিপটি ও এডিস এলবোপিকটাস। ২০০০ সাল থেকে ডেঙ্গু রোগ আমাদের দেশে দেখা দেওয়ার পর আমরা কমবেশি এডিস মশার এ দুটি প্রজাতির সঙ্গে পরিচিত। কিন্তু দিন যত গড়াচ্ছে, এ প্রজাতির আক্রমণের ভয়াবহতা ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে।

গবেষণায় প্রতীয়মান হয়েছে, বৈশ্বিক আবহাওয়া ও জলবায়ুর উপাদানের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এই বাহকের শারীরবৃত্তীয় কার্যক্রমের দ্রুত পরিবর্তন ঘটে। আবার তার সঙ্গে পরিপূরকভাবে যুক্ত হয়েছে অনিয়ন্ত্রিত কেমিক্যাল কীটনাশক প্রয়োগ। উপর্যুপরি রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহারের কারণে ভাইরাস বহনকারী মশার যে শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন সাধিত হয়েছে, তার সঙ্গে পরিবেশের বিরূপ প্রতিক্রিয়া যোগ হয়ে ভাইরাসটির আক্রমণের গতিপ্রকৃতি ও ধরনের বহুমাত্রিক পরিবর্তন এনেছে। যার ফলে রাসায়নিক কীটনাশকের যথেচ্ছ ব্যবহার মশা ও ভাইরাস দুটিকেই বেপরোয়া করে তুলেছে, বাড়িয়ে দিয়েছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ও আশঙ্কাজনক মৃত্যুহার। এভাবেই যদি চলতে থাকে, তাহলে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে এক ভয়াবহ ভবিষ্যৎ।

ইতিমধ্যেই ভাইরাসের ১, ২ ও ৩ ধরনের ইনফেকশন পার হয়েছে। এখন আমরা সেকেন্ডারি পর্যায়ে আছি। তাই এখনই সময় এসেছে শুধুই রাসায়নিক কীটনাশকের অভিশপ্ত ভয়াবহ ব্যবহার না করে সমন্বিত বাহক ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দেওয়া; আর সেই সমন্বিত ব্যবস্থাপনার পরিবেশবান্ধব উপাদানগুলোর ওপর অধিকতর গুরুত্ব দেওয়া। তবে রাসায়নিকের ব্যবহারও করতে হবে যুক্তিযুক্তভাবে। মশাকে প্রতিরোধ করতে হলে প্রথমে গুরুত্ব দিতে হবে পরিবেশের ওপর। কারণ, পরিবেশ যত দূষণমুক্ত থাকবে, মশাসহ অন্যান্য বাহক প্রতিরোধ ততই সহজ হবে।

Also Read: ডেঙ্গু নিয়ে এমন অবহেলা কেন সরকারের?

এই পরিবেশবান্ধব মশার লার্ভা নির্মূলকারী অণুজীবই (ব্যাকটেরিয়া) হলো বিটিআই, যার ব্যবহার একদিকে যেমন টার্গেট জীব মশার লার্ভাকে ধ্বংস করে, অন্যদিকে পরিবেশসহ অন্য কোনো জীবের বিন্দুমাত্র ক্ষতিও করে না। একইভাবে বিটিআইয়ের ক্রাই প্রোটেন অন্য কোনো লার্ভি সাইড বা কীটনাশকের প্রতি কোনোভাবেই প্রতিরোধী করে তোলে না। তাই এটা যথার্থই বলা যায়, বিটিআই যেমন টার্গেট ওরিয়েন্টেড, তেমনিভাবে মশা ও ভাইরাসের শারীরবৃত্তীয় ও জিনগত কোনো পরিবর্তন সাধন করে প্রতিরোধী করে তোলে না। এই ব্যাকটেরিয়া হলো এন্টোমোপ্যাথজেনিক  ব্যাকটেরিয়া।

এর পাউডার পানিতে গুলিয়ে দিলে মশার লার্ভার খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং মশার সবচেয়ে প্রতিরোধী অঙ্গাণু মিডগাটে আক্রমণ করে ছিদ্র তৈরি করে এবং এর স্পোরগুলোর সংখ্যা বৃদ্ধি করে পাংচার করে লার্ভার মৃত্যু নিশ্চিত করে। এভাবে মশার লার্ভা ধ্বংস করতে পারলেই অ্যাডাল্ট মশার জন্ম প্রতিরোধ করা সম্ভব। এই কাজগুলো করার আগে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শক্রমে মশার প্রজননস্থানগুলো সঠিকভাবে চিহ্নিত করে সেসব স্থানে এই বিটিআইয়ের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে পারলেই এই প্রাণঘাতী মশার ভয়াল থাবা থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।

  • অধ্যাপক ড. মো. গোলাম ছারোয়ার অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, কীটতত্ত্ব বিভাগ, জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান (নিপসম)