Thank you for trying Sticky AMP!!

যশোর শহরে ক্যাথলিক গির্জায় বড়দিন উদ্‌যাপনের প্রস্তুতি

বড়দিন কেন বড়

প্রশ্নটা মাথায় এসেছিল আজ থেকে বেশ কয়েক বছর আগে। সময়ের পরিমাপ অনুযায়ী ২৫ ডিসেম্বর দিনটি কিন্তু অন্য সব দিন অপেক্ষা বড় নয়। তাহলে বড়দিন বলি কেন? উত্তরটা জানার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি টেলিভিশনের বড়দিনের একটি ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান তৈরি করতে গিয়ে। নিজের যা জ্ঞান, তাতে এর সঠিক উত্তর মাথায় আসার কথা নয়। তাই চিন্তা করলাম, আমার জীবনের কজন প্রিয় মানুষের নাম স্মরণ করতে, যাঁদের কাছ থেকে জেনেছিলাম, যাঁদের দেখে শিখেছিলাম খ্রিষ্টীয় জীবন ও আত্মিক জ্ঞান বৃদ্ধির কিছু সূত্র। সেই প্রয়াত মানুষগুলোর নাম উল্লেখ না করলে অকৃতজ্ঞ থাকব।

প্রথমত, আমার বাবা প্রয়াত জগন্নাথ অধিকারী, আমার বড় ভাই প্রয়াত রেভা. স্মিথ আর অধিকারী, এরপর মিশনারি রেভা. প্রয়াত সি পি অলসন ও প্রয়াত ড. সইমন এইচ সরকার।

এই চারজনের জীবনাদর্শ এবং আমাকে দেওয়া তাঁদের মূল্যবান শিক্ষাগুলো স্মরণ করতেই  বুঝতে ও দেখতে পারলাম, ‘বড়দিন কেন বড়’।

Also Read: খ্রিষ্টধর্মের পবিত্র সংবিধান বাইবেল

তাঁদের কাছ থেকে জানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো হলো প্রভু যিশুখ্রিষ্টের জীবনের পাঁচটি ঘটনা আছে। একটি তাঁর জন্ম, একটি তাঁর মৃত্যু, একটি তাঁর পুনরুত্থান, একটি তাঁর স্বর্গে আরোহণ এবং সর্বশেষ তাঁর পুনরাগমন। এই পাঁচটি ঘটনায় তিনি অনবদ্য, অতুলনীয়। কারণ, পৃথিবীতে যত মহান ব্যক্তি ছিলেন, তাঁদের জীবনে এমন পাঁচটি ঘটনা নেই। এ কারণে তাঁর জন্ম হচ্ছে অনবদ্য ও অতুলনীয়।

বর্তমান পৃথিবীর দিকে তাকালে দেখতে পাব, বড়দিনকে কেন্দ্র করে যত আয়োজন, তাতে ঐশ্বরিক বিষয়ের চেয়ে মানুষ জাগতিক বিষয়ের ওপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে, ধর্মীয় অনুষ্ঠানের পাশাপাশি  জাগতিক অনুষ্ঠান কোথাও কোথাও বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে, কিন্তু প্রকৃত আনন্দ?

হ্যাঁ, প্রকৃত আনন্দ তারাই করে, যারা সততার সঙ্গে তাঁর বাক্যকে সম্মান করে, পালন করে।

Also Read: খ্রিষ্টধর্মের উৎসব বড়দিন উদ্‌যাপিত

বড়দিন উপলক্ষ্যে সাজসজ্জা

পৃথিবীর মানুষ বিভিন্ন সমস্যাগ্রস্ত—জাতীয়, আন্তর্জাতিক, সামাজিক, পারিবারিক ও ব্যক্তিগত। তবে বর্তমান পৃথিবীর মানুষ আধ্যাত্মিক সমস্যায় বেশি দিশাহারা, অধিকাংশই শান্তির কাঙাল। এই দিশাহারা পরিস্থিতির মাঝে বড়দিন আমাদের কী কথা বলে, কোন পথ দেখায়?

 আচ্ছা, কখনো কি চিন্তা করে দেখেছি, এই যে ২৫ ডিসেম্বর যিশুর জন্মদিন উদ্‌যাপন করছি, আনন্দ করছি; কিন্তু যাঁর জন্মদিন, সেই যিশু আজ কতটুকু আনন্দিত? যদি বলি যিশুর জন্মদিন উদ্‌যাপন করছি, কিন্তু আজকের দিনে যিশুর কোনো চাওয়া, যিশুর কোনো ইচ্ছা যদি আমাদের দ্বারা পূরণ না হয়, তাহলে কি যিশু তাঁর জন্মদিনে আনন্দিত হবেন আমাদের এসব উৎসব দেখে?

প্রশ্ন উঠতে পারে, যিশুর চাওয়াটা কী আবার আমাদের কাছে?

 আমার মনে হয়, আমি যদি বলি, তাঁর চাওয়া তাঁর বাক্যগুলো পালন করা, পাপের পথ থেকে জীবনের পথে ফিরে আসা, মানুষকে ভালোবাসা, দান করা, সেবা করা—সর্বোপরি শেষ বিচার সম্পর্কে সচেতন থাকা।

আর মনে রাখতে হবে, বেথলেহেমের গোয়ালঘরে আর নয়, যিশু চান আজ জন্ম নিতে ধরণির প্রত্যেক মানুষের অন্তরে।

Also Read: বড়দিনের প্রস্তুতি

অশান্ত পৃথিবী শান্ত হোক, শান্তির জলে ভাসুক, সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ মানুষগুলো অনন্ত জীবনে ফিরে আসুক।

যিশুর চাওয়া এ–ই, এ ছাড়া কিছুই নেই, শান্তির আলো থাক ঘরে ঘরে, পথে–ঘাটে–প্রান্তরে।

প্রত্যেক মানুষের অন্তরে।

সুতরাং বড়দিন কেন বড়, তার মানেটা বুঝতে নিজের কথা ও অন্যের কথা মিলিয়ে যদি দেখি, তাহলে এই সত্যে উপনীত হওয়া যায়, বড়দিন মানে রাজা হয়েও প্রজার মাঝে মিশে যাওয়া। বড়দিন মানে পাপী হয়েও পুণ্য পিতার স্পর্শ পাওয়া।

বড়দিন মানে নিঃস্ব হয়েও ফুলের মতো বিশ্ব গড়া। বড়দিন মানে শান্তিরাজ যিশু, অকপটে তা স্বীকার করা।

Also Read: আর্মেনীয় গির্জা

বড়দিন উপলক্ষ্যে সেজেছে দোকান পাট

বড়দিন মানে শত্রুকেও মিত্রের মতো ভাবতে হবে আপন। বড়দিন মানে পৃথিবীর মাঝে স্বর্গের এক দূতাবাস স্থাপন।

এর সঙ্গে সঙ্গে আমাদের আরও মনে রাখতে হবে, আর নেবেন না জন্ম যিশু দীনবেশে গোশালায়, এবার তিনি রাজার বেশে মহাপ্রতাপে এসে দেখা দেবেন এ ধরায়। বলবেন না আর, ‘পিতঃ, ওরা অবুঝ, তাই ক্ষমা করো’, বলবেন, ‘যারা আমারই নয়, নরকে সব পুড়ে মরো।’ সেই কথা স্মরণ করে পাপের পথে থেকো নারে জগতের এই শেষবেলায়। শেষ ভালো যার, শেষ বিচারে স্বর্গ তার ভাগ্যেতে। সব জেনেও পাপের সঙ্গে মাখামাখি দিনে–রাতে। হঠাৎ পরান উড়াল দিলেই, চিরতরের ঘুম এলেই উঠতে হবে কাঠগড়ায়।

কখনো কি ভেবে দেখেছি আমরা, তাঁর বিচারে আমাদের রায় কী হবে? স্বর্গবাস, নাকি নরকের সর্বনাশ!

সেই প্রশ্ন রেখে শেষ করছি, ধন্যবাদ। শুভ বড়দিনের প্রকৃত আনন্দ বয়ে যাক সবার জীবনে।

 লিটন অধিকারী রিন্টু: গীতিকার

Also Read: অক্সফোর্ড মিশন