Thank you for trying Sticky AMP!!

আহলে বাইত কারা

কোরআনের একটি আয়াতে আল্লাহ–তায়ালা ‘আহলে বাইত’ শব্দবন্ধটির উল্লেখ করেছেন। এ আয়াতে যদিও শুরুর দিকে কেবল মহানবী (সা.)-র স্ত্রীদের নির্দেশনা দিয়েছেন, তবে এর মানে এই নয় যে নবী-পরিবারভুক্ত কেবল তার স্ত্রীরাই। আবার এটাও এ-আয়াত থেকে প্রমাণ হয় যে, নবীজির স্ত্রীরা অবশ্যই তার পরিবারভুক্ত। পূর্ণ আয়তটি দেখা যাক:

‘হে নবীপত্নীগণ, তোমরা সাধারণ কোনো নারীর মতো নও। যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, তবে পরপুরুষের সাথে কোমলভাবে কথা বোলো না। অন্যথায়, যার অন্তরে ব্যধি আছে, সে লালসায় পড়বে আর তোমরা সংগত কথা বলো। এবং তোমরা স্বগৃহে অবস্থান করো এবং পূর্বেকার জাহেলিয়াতের যুগের মতো নিজেদের সৌন্দর্য প্রদর্শন করে বেড়িয়ো না। আর নামাজ কায়েম করো, যাকাত প্রদান করো এবং আল্লাহ ও তার রাসুল (সা.)-এর অনুগত থাকো। হে নবী পরিবারবর্গ, আল্লাহ চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদের সম্পূর্ণ পবিত্র করে দিতে। (সূরা আহযাব, আয়াত: ৩২-৩৩)

Also Read: সুরা হাশরের ২২থেকে ২৪ আয়াতের ফজিলত

যদিও এ আয়াতটি শুধু তার স্ত্রীদের ওপরই সীমাবদ্ধ—এমন মত দিয়েছেন বিখ্যাত তাবেয়ি ইকরামা (র.)। কেননা, ইবনে আব্বাস (রা.) এমনই মত পোষণ করেছেন। তবে আয়াতটিতে মহানবী (সা.)-র স্ত্রীদের কথা বলা হলেও বিশুদ্ধ অভিমত হলো, অধিকাংশ আলেমের মতে, স্ত্রীরা ছাড়াও নবী-পরিবারের অন্তর্ভুক্ত আরও অনেকেই আছেন; যা বহু হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। (মিন-মায়ীনিশ শামায়েল, ১ম অধ্যায়, ৭ম পরিচ্ছেদ)

আয়েশা (রা.) এ বিষয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তার সারমর্ম হলো, এক সকালে নবীজি বাইরে বের হলেন। তার পরনে ছিল কালো নকশিকরা পশমি কাপড়। সেখানে হাসান (রা.) এলেন এবং খানিক পরে হুসাইন (রা.)-ও এলেন। তিনি একের পর এক উভয়কেই চাদরের ভেতরে নিয়ে নিলেন। এমনকি ফাতেমা (রা.) এবং সর্বশেষে আলী (রা.) এলে তাদের দু’জনকেও চাদরে জড়িয়ে নিলেন। তারপর এই আয়াতটি পাঠ করলেন, ‘হে নবী পরিবারবর্গ, আল্লাহ চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদের সম্পূর্ণ পবিত্র করে দিতে।’ (সূরা আহযাব, আয়াত: ৩৩)। (মুসলিম, হাদিস: ২,৪২৪)

Also Read: সাহাবির মেহমানদারিতে আল্লাহ্‌র হাসি

এ ছাড়া সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাসের (রা.) হাদিসটি দেখুন, তিনি বলেন, ‘আপনি তাকে বলে দিন, আসো, আমরা ডেকে আনি আমাদের পুত্রদের এবং তোমাদের পুত্রদের’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ৬১), এই আয়াত যখন নাযিল হলো, তখন নবীজি আলী, ফাতেমা, হাসান ও হুসাইন (রা.)-কে ডেকে বললেন, হে আল্লাহ, এরাই আমার পরিবার। (মুসলিম: ২,৪০৪)

এ-ছাড়া সদকা সম্পর্কিত কয়েকটি হাদিসে রয়েছে, আবু হোরায়রা (রা.) বলেন, নবীজি হাসান বা হুসাইনের মুখ থেকে সদকার খেজুর বের করে বলেছেন, তোমার কি জানা নেই যে, মুহাম্মদের পরিবারবর্গ সদকা খায় না? (বুখারি, হাদিস: ১৪৮৫)

এতে বোঝা যায়, নবীজির আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে যাদের সদকা খেতে নিষেধ করা হয়েছে, তারা সবাই পরিবারের অন্তর্ভুক্ত।

যায়েদ ইবনে আরকাম (রা.) বর্ণিত ‘গাদিরে খিম’ সম্পর্কিত হাদিস থেকে জানা যায়, নবীজি মক্কা মদিনার মধ্যবর্তী ‘খিম’ নামক কূপের কাছে ভাষণে বলেছেন, আমার পরিবারের ব্যাপারে তোমাদের আমি আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। হুসাইন ইবনে সাবুরা (র.) তাকে জিজ্ঞেস করেন, হে যায়েদ, কারা নবীজির পরিবার? উত্তরে তিনি বলেন, তার স্ত্রীরা পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু তার পরিবারের অন্যরা হলেন তারা যাদের জন্য নবীজির ইন্তেকালের পরেও সদকা হারাম। তারা হলেন আলী, আকিল, জাফর ও আব্বাস (রা.)-এর পরিবার। (মুসলিম, হাদিস: ২,৪০৮)

Also Read: বিবাহবিচ্ছেদে আল্লাহ যা মানতে বলেছেন সুরা তালাকে

সাহাবিরাও নবী-পরিবার বলতে বুঝতেন, যাদের জন্য সদকা হারাম। আর তারা হলেন, বনু হাশেম ও বনু মুত্তালিব। এর পরিবর্তে তারা গণিমতের এক-পঞ্চমাংশ পেতেন। যেমন, জুবায়ের ইবনে মুতইম (রা.) বলেন, একবার আমি ও ওসমান ইবনে আফফান নবীজির কাছে গিয়ে বললাম, আল্লাহর রাসুল, আপনি বনু মুত্তালিবকে দান করেছেন, আমাদের দিচ্ছেন না। অথচ তারা ও আমরা আপনার বংশে এক স্তরের। তিনি বললেন, না, বরং বনু মুত্তালিব ও বনু হাশিম এক। (বুখারি, হাদিস: ৩১৪০)

উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে পরিষ্কার বোঝা যায়, ‘আলে বাইত’ পরিভাষাটির মধ্যে নবীর স্ত্রীবৃন্দ, আলী, ফাতেমা, হাসান ও হুসাইন (রা.) অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। আর ‘আলে মুহম্মাদ’ বলতে উপর্যুক্ত সদস্যগণ ছাড়াও যাদের জন্য সদকার সম্পদ হালাল নয় তারা সকলেই অন্তর্ভুক্ত। উভয় পরিভাষার মিলিত সদস্যদের সবাইকেই ‘আহলে বাইত’ বলা যায়। তারা হলেন বনু হাশেম ও বনু মুত্তালিব। ইবনে কাসির রহ. সূরা আনফালের তাফসিরে এমনটাই বর্ণনা করেছেন। (সূরা আনফাল, আয়াত ৪১-এর ইবনে কাসীরের তাফসির দ্রষ্টব্য)

Also Read: লোকদের দীন শেখান জিবরাইল (আ.)