Thank you for trying Sticky AMP!!

সিরিজের শেষ ম্যাচে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের পরও থাকছে যে প্রশ্ন

দুটি আলাদা সিরিজ। তবে চট্টগ্রামে আসার আগে নিশ্চিত ছিল দুই সিরিজের ফলই।
ভারতের বিপক্ষে প্রথম দুই ম্যাচ জিতেই সিরিজ নিশ্চিত করেছিল বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ হার নিশ্চিত হয়েছিল মিরপুরের প্রথম দুই ম্যাচেই।

ভারতের বিপক্ষে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে যে উইকেট ছিল, গতকাল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ ম্যাচের উইকেটের সঙ্গে সেটির পার্থক্য স্পষ্ট। ইংল্যান্ডকে হারিয়ে বাংলাদেশ ধবলধোলাই এড়িয়েছে। কিন্তু এমন উইকেটে খেলে এমন জয়ে আদতে কী পেল বাংলাদেশ?

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ শুরুর আগেই বাংলাদেশ অধিনায়ক তামিম ইকবাল বলেছিলেন, ‘ট্রু’ উইকেটে খেলতে চান তাঁরা। ও রকম উইকেটে খেলার সুফলটা হয়তো দ্রুতই টের পাওয়া যাবে না, তবে ৪-৫-৬ মাসের মধ্যে দেখা যাবে সেটি।

Also Read: সাকিব-তামিম কেন কথা বলেন না

সামনে ইংল্যান্ড, যে দল আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের নতুন এক ধারাই তৈরি করেছে। বাংলাদেশ সফরে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা শক্তিশালী বোলিং লাইনআপ নিয়ে এসেছে, বেশ কিছুদিন পর প্রথম সারির সব বোলারকে একসঙ্গে পেয়েছে তারা। এমন বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে নিজেদের বাজিয়ে দেখার বড় একটা সুযোগই ছিল বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের।

সর্বশেষ বিপিএলে মিরপুরে অন্যবারের তুলনায় বেশ ভালো ব্যাটিং–সহায়ক উইকেটের দেখা মিলেছিল, যেখানে রান হয়েছিল দিনের ম্যাচগুলোতেও। ইংল্যান্ড সিরিজের প্রথম ম্যাচে অবশ্য দেখা গেল সেই চিরায়ত মন্থর, নিচু বাউন্সের মিরপুর উইকেটই।

দ্বিতীয় ম্যাচে তুলনামূলক ভালো উইকেট হলেও বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা ব্যর্থ হয়েছেন। তবে ভালো উইকেটে খেলার ইচ্ছাটা নিশ্চয়ই একটু হলেও পূর্ণ হয়েছিল অধিনায়ক তামিমের। সে ম্যাচে হেরেই দেশের মাটিতে টানা সাত বছর পর ওয়ানডে সিরিজ হারে বাংলাদেশ। মাঝের এই সময়ে বাংলাদেশ জিতেছিল সাতটি সিরিজ।

Also Read: উৎপল শুভ্রর চোখে বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড সিরিজ

দীর্ঘ মেয়াদে চিন্তা করলে হয়তো তাতে কিছু যায় আসে না। এমনিতে এ সিরিজটি বিশ্বকাপ সুপার লিগের অংশই, তবে বিশ্বকাপে খেলা বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ডের নিশ্চিত হয়ে গেছে আগেই।

চট্টগ্রামের ম্যাচটি তাই ছিল আক্ষরিক অর্থেই ‘ডেড রাবার’। মানে যেটি শুধুই আনুষ্ঠানিকতা। এমন ম্যাচে সাধারণত স্কোয়াডে নিয়মিত একাদশের বাইরে থাকা খেলোয়াড়দেরও সুযোগ দেওয়া হয়। ইংল্যান্ড করেছে সেটিই। পুরো সিরিজেই পেসারদের ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খেলিয়েছে তারা, গতকাল তো অভিষেক করানো হলো লেগ স্পিনার রেহান আহমেদকেও।

লিটন –তামিমরা ব্যর্থ ছিলেন পুরো সিরিজেই

ইংল্যান্ডের সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে ওয়ানডে অভিষেক হয়েছে রেহানের। জস বাটলার তাঁকে দিয়ে করিয়েছেন পুরো ১০ ওভারই। পরবর্তী সময়ে সিরিজ–সেরা আদিল রশিদকেও ৫ ওভারের বেশি এ কারণে করাননি ইংল্যান্ড অধিনায়ক। অথচ রশিদ সাদা বলে বিশ্বেরই অন্যতম সেরা স্পিনার, যাঁর উইকেট নেওয়ার সামর্থ্য বরাবরই ইংল্যান্ডের শক্তিমত্তার অন্যতম বড় অংশ। তবে রেহানকে এমন কন্ডিশনে অভ্যস্ত বাংলাদেশের অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানদের সামনে বোলিং করানোর সুযোগটা দিতে চেয়েছেন বাটলার। হয়তো এ সফরে টি-টোয়েন্টি অভিষেকও করানো হবে তাঁর।

অন্যদিকে প্রথম দুই ম্যাচে অপরিবর্তিত একাদশ খেলানো বাংলাদেশ গতকাল নেমেছিল মাত্র একটি পরিবর্তন নিয়ে। তরুণ পেসার হাসান মাহমুদ, অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা ব্যাটসম্যান তৌহিদ হৃদয় সিরিজে সুযোগই পেলেন না। স্কোয়াডে থাকা মানেই সেরা একাদশে যেকোনো সময় খেলার যোগ্য—এমন কথা প্রায়ই বলা হয়।

হাসান বা হৃদয়কে সুযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্য তেমন কিছু করেনি বাংলাদেশ।
কেন করেনি, সেটি সহজেই অনুমেয়। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অন্তত সিরিজের শেষ ম্যাচটি জিততে চেয়েছে তামিমের দল। বাংলাদেশ অধিনায়ক গতকাল সংবাদ সম্মেলনে নিজেই বলেছেন, ওয়ানডেতে নিজেদের পারফরম্যান্স নিয়ে গর্ব করেন তাঁরা। শেষটা তাই ভালোভাবেই হোক—এমন চেয়েছেন তাঁরা।

ছন্দে থাকা তৌহিদ হৃদয়কে পরখ করে দেখা হয়নি

Also Read: সাকিবকে তামিমের ডাক, ‘সাকিব! এই সাকিব!’

এ কারণেই হয়তো চট্টগ্রামের উইকেটের ধরনটাও একটু বদলে ফেলা হয়েছে। ইঙ্গিতটা অবশ্য ম্যাচের আগের দিনই দিয়ে রেখেছিলেন স্পিন বোলিং কোচ রঙ্গনা হেরাথ। এবার আর ভারতের বিপক্ষে ৪০০ রান হজম করার মতো কিছু হবে না, বলেছিলেন তিনি। উইকেটটাও বেশ শুষ্ক মনে হয়েছিল তাঁর কাছে।

সাধারণত এখানকার উইকেট রান-প্রসবা থাকে। তবে গতকালের উইকেট ছিল বেশ মন্থর। বল থেমে থেমে আসছিল, বাউন্সও ছিল বেশ নিচু। যেন মিরপুরের একটা উইকেটই এনে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে এখানে।

১৭ রানের মধ্যে ২ উইকেট হারানোর পরও তাই বাংলাদেশ ঠিক পথ হারায়নি। মুশফিকুর রহিম ও সাকিব আল হাসান—এমন কন্ডিশনে অভিজ্ঞ দুই ‘মাস্টার’-এর সঙ্গে নাজমুল হোসেনের ফিফটিতে লড়াই করার মতো স্কোর পেয়ে গেছে তারা। ম্যাচের মাঝপথে স্কোরটাকে একটু কম মনে হলেও বাংলাদেশ বোলারদের সঙ্গে আর কুলিয়ে উঠতে পারেনি ইংল্যান্ড। শেষ ম্যাচটি বাংলাদেশ তাই খেলেছে নিজেদের জয়ের রেসিপি মেনেই।

ম্যাচ শেষে অধিনায়ক জস বাটলারকে মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছিল, এ দেশের সেরা ব্যাটিং উইকেট মনে করা হয় চট্টগ্রামের মাঠের উইকেটকে। যদিও গতকালের উইকেট ছিল আলাদা। এমন উইকেট দেখে তাঁরা একটু বিস্মিত হয়েছিলেন কি না, এই প্রশ্নে বাটলার বলেছেন, ‘তেমন নয় আসলে। বাংলাদেশ তাদের কন্ডিশন আমাদের চেয়ে ভালো জানে, টসে জিতে তাই ব্যাটিং নিয়েছে। আমি নিশ্চিত তারা জানত উইকেট ধীরগতির হয়ে আসবে, পরে স্পিন ধরবে বেশি।’

এ সিরিজে বরাবরই বাটলার ও ইংল্যান্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এমন কন্ডিশনে নিজেদের সামর্থ্যকে চ্যালেঞ্জ জানানোর বড় একটা সুযোগ তাদের। প্রথম ম্যাচে ডেভিড ম্যালান সেঞ্চুরির পর তো বলেছিলেন, কন্ডিশন বিবেচনায় যেকোনো সংস্করণে, যেকোনো পর্যায়েই সেটিই সেরা ইনিংস তাঁর। পরের ম্যাচে জেসন রয়ও খেলেছিলেন বড় ইনিংস।

ডেভিড ম্যালানের কাছেই প্রথম ম্যাচ হেরেছিল সাকিবরা

এমন কন্ডিশনে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের জন্যও চ্যালেঞ্জ থাকে, তবে সেটি তো নতুন কিছু নয়। তাঁদের চ্যালেঞ্জ মূলত ফ্ল্যাট উইকেটে দ্রুতগতির রান তোলা। যেটিতে ঠিক অভ্যস্ত নন তাঁরা। ২০২২ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৩০০-পেরোনো স্কোর গড়ার পরও হেরেছিল বাংলাদেশ। এরপর তামিম বলেছিলেন, তারা বুঝে গেছেন, ৩০০ রান আর যথেষ্ট নয়।

Also Read: ম্যালানের সেঞ্চুরিতে ৩ উইকেটে হার বাংলাদেশের

সর্বশেষ দুটি সিরিজেই বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ একবার করে ৩০০ পেরিয়েছে, ভারত তো তুলেছিল ৪০০ রানের বেশি। কিন্তু বাংলাদেশ অমন স্কোরের দেখা পায়নি একবারও। এবারের ওয়ানডে বিশ্বকাপ হবে ভারতে, যেখানে বেশ কিছু উইকেটই থাকতে পারে ফ্ল্যাট।

চট্টগ্রামে অমন একটা উইকেট বাংলাদেশ তৈরি করতেই পারত। প্রথম দুই ম্যাচে ব্যর্থ লিটন দাস হয়তো নিজের আত্মবিশ্বাস একটু বাড়ানোর সুযোগ পেতেন। স্পিন-সহায়ক উইকেটে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা তো অভ্যস্তই, তবে ফ্ল্যাট উইকেটে নিজেদের মনে হতে পারে ‘এলিয়েন’।

বাংলাদেশ সফরকে বিশ্বকাপ সামনে রেখেও অভিজ্ঞতা অর্জনের একটা বড় সুযোগ হিসেবে দেখেছে ইংল্যান্ড, যারা ফ্ল্যাট উইকেটে রান তোলার ক্ষেত্রে পারদর্শী আগে থেকেই। এ তিন ম্যাচের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে পারলে ইংল্যান্ড নিশ্চিতভাবেই এগিয়ে থাকবে। কিন্তু বাংলাদেশের পরীক্ষায় যদি আসে ফ্ল্যাট উইকেটের প্রশ্ন, তখন কী হবে?
ভারতের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে ফ্ল্যাট উইকেটে হার আর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে স্পিন-সহায়ক উইকেটে জয়—দুই ম্যাচের ফল বাংলাদেশের জন্য আলাদা। কিন্তু ওয়ানডের বাংলাদেশকে নিয়ে প্রশ্নটা থাকছে একই।

Also Read: সাকিব ৯, মুশফিক ৬