Thank you for trying Sticky AMP!!

মাঠে ভালো সময় যাওয়ায় এমন হাসিমুখেই দেখা যাচ্ছে নাসিরকে

এখনো শেষ হয়ে যাননি নাসির

বাংলাদেশের ক্রিকেটে ‘ফিনিশার’ শব্দটা সবার আগে বসেছিল নাসির হোসেনের নামের পাশে। পরে আবার এই নামের কারণেই নাসিরকে প্রচুর ট্রলও সহ্য করতে হয়েছে। ‘ফিনিশার ফিনিশ হয়ে গেছে’—এমন কটূক্তি শুনতে হয়েছে নিয়মিতই।

Also Read: মেয়েদের আইপিএল নিলামে বাংলাদেশের ৯ ক্রিকেটার

Also Read: মুকিদুল–ঝড়ের পর রাসেল-টর্নেডো

২০১৮ সালে জাতীয় দলের হয়ে সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছেন নাসির। এরপর যে লম্বা বিরতি, সেটি মূলত বাজে ফর্মের কারণেই। নাসিরের ছায়াসঙ্গী হয়েছে মাঠের বাইরের বিতর্কও। চোটের কারণে লম্বা সময় ঘরোয়া ক্রিকেটেও খেলতে পারেননি। একটা সময় মনে হয়েছে, আসলেই হয়তো নাসির ‘ফিনিশ’ হয়ে গেছেন!

বিপিএলের নবম আসর সে ভুলটাই ভেঙে দিল। নাসির ঢাকা ডমিনেটরসের হয়ে ১২ ম্যাচে সর্বোচ্চ ৩৬৬ রান করেছেন ৪৫.৭৫ গড়ে। ৪ নম্বরে ব্যাট করে স্ট্রাইক রেট ১২০.০০। বেশির ভাগ ইনিংসই খেলেছেন টপ অর্ডার ধসের পর। ব্যাটিং অর্ডার যখন হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ছিল, তখন চাপকে তুচ্ছজ্ঞান করেছেন ক্রিকেটীয় চাতুর্যে। শুধু কি তাই, বল হাতেও নাসিরই দলের সেরা বোলার। ৬.৮ ইকোনমি রেটে নিয়েছেন ১৬ উইকেট।

ব্যাট হাতে দারুণ সময় কাটছে নাসিরের

ঢাকার অধিনায়কত্বও করছেন নাসিরই। ১২ ম্যাচের মধ্যে ঢাকার ৩টি জয়ে নাসিরই ছিলেন প্রাণভোমরা। তাঁর পারফরম্যান্সটুকু বাদ দিলে যে ঢাকার আর কিছুই থাকে না! আর শুধু ঢাকা কেন, ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের মাপকাঠিতে এখন পর্যন্ত নাসিরই টুর্নামেন্টের সেরা ক্রিকেটার। বিপিএলে এর আগে ৩০০ রান ও ১৫ উইকেট নিয়েছেন দুজন। ২০১২-১৩, ২০১৯-২০ বিপিএলে সাকিব আল হাসান ও ২০১৬-১৭ বিপিএলে মাহমুদউল্লাহ। দুজনই সে বছর টুর্নামেন্টের সেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার জিতেছেন। এবার নাসিরের পারফরম্যান্স সে রকমই উজ্জ্বল।

Also Read: চোটে বিপিএল শেষ তামিমের

Also Read: জিয়াউরের অলরাউন্ড নৈপুন্যে চট্টগ্রামের নাটকীয় জয়

জাতীয় দলে সাদা বলের ক্রিকেটে নাসির যে রকম ফিনিশারের দায়িত্ব নিয়ে খেলতেন, আগে বিপিএলেও তাঁকে সাধারণত সে দায়িত্বেই দেখা যেত। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে ব্যাটিং পজিশন ৬ কিংবা ৭-ই হতো। এই জায়গায় থিতু হয়ে ব্যাট করার সুযোগ নেই বললেই চলে। ফিনিশারদের কাজই হলো ক্রিজে যাও, ব্যাট চালাও। কিন্তু নাসির কখনোই সে ধরনের ব্যাটসম্যান ছিলেন না। তিনি ‘টাচ প্লেয়ার’, ফাঁকা জায়গায় বল ঠেলে ১-২ রান বের করাটাই তাঁর সহজাত দক্ষতা। সঙ্গে বোলারের গতি ও অ্যাঙ্গেল ব্যবহার করে বাউন্ডারির সুযোগ নেন। এ ধরনের ব্যাটসম্যান ব্যাটিং অর্ডারের ৪ নম্বরের জন্যই আদর্শ।

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে নাসির চারেই ব্যাট করেন। ঢাকা ডমিনেটরসেও ৪ নম্বর ছিল নাসিরের জায়গা। ফিনিশারের দায়িত্ব থেকে বেরিয়ে এসেই যে তিনি সফল, সেটা বলেছেন নাসিরই, ‘সত্যি কথা বলতে, আমি ব্যাটিংটা উপভোগ করছি। এবারই প্রথম আমি নিয়মিত একই পজিশনে ব্যাট করছি। এর আগে হয়তো ৬-৭ এ ব্যাট করতাম, ওভার থাকত ৩-৪টা। এ কারণে হয়তোবা আমি পারফর্ম করতে পারিনি। বিপিএলে আমাদের টপ অর্ডার দ্রুত আউট হয়ে যাচ্ছে। তাতেও আমি লম্বা সময় ব্যাটিংয়ের সুযোগ পাচ্ছি।’

এবার বিপিএলে ফর্ম ফিরে পেয়েছেন নাসির

আর সুযোগ কাজে লাগানোর গুণটা তো নাসিরের সহজাতই। তিনি নিজেও সেটাই মনে করেন, ‘আমি যে ধরনের ব্যাটসম্যান, আমার জন্য ক্রিজে এসেই মেরে খেলাটা কঠিন। উইকেটে এসে আমার সময় নিতে হয়। আমার মনে হয়, আমি এখানে সেই সময়টা পেয়েছি।’

টুর্নামেন্টের শুরুতেই ব্যাটিংয়ের ছন্দটা ধরতে পেরেছেন, এটাও তাঁর ভালো করার একটা কারণ মনে করেন নাসির, ‘আমি সব সময় যেভাবে খেলি, সেভাবেই খেলি। বিপিএলের জন্য বিশেষ কোনো প্রস্তুতি ছিল না। পারফরম্যান্স হচ্ছে একটা ছন্দ। আমি সব সময়ই বলি, টুর্নামেন্টের শুরুর দুইটা ম্যাচ খুব গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি পারফর্ম করে ফেলেন, তাহলে টুর্নামেন্টটা আপনার জন্য খুব সহজ হয়ে যাবে। আমার সেই আত্মবিশ্বাস আছে যে উইকেটে গেলে আমি ভালো করব। আর এইটা এক দিনে আসেনি, প্রথম দুই-একটা ম্যাচ ভালো খেলায় এসেছে।’

বিপিএলে দল হিসেবে ঢাকা ডমিনেটরস ভালো করেনি। উল্টো খেলোয়াড়দের টাকাপয়সা দেরি করে দেওয়ায় ফ্র্যাঞ্চাইজিটা নিয়ে একটু নেতিবাচক আলোচনাই আছে। এ রকম একটা দলে অধিনায়কের দায়িত্ব নিয়ে খেলেও যে নাসির ফিরে আসার বার্তা দিতে পারলেন, সেটাই বা কম কি!